ড্রিবলিং
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো অনেক বেশি বৈচিত্র্য আছে ওর ড্রিবলে। স্টেপওভার হোক বা গতিতে ড্রিবল করা, সব কিছুই খুব সহজে করে। রোনাল্ডোর সবচেয়ে বড় গুণ ওর বল কন্ট্রোল। ও যেমন ভাবে গতিতে ড্রিবল করে বেরোয় তাতে বলটা বেরিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কেরিয়ারের প্রথম দিকে অত বেশি গোল করত না রোনাল্ডো। কিন্তু সুযোগ পেলেই ড্রিবল করত। আর নিজের খেলার এই অস্ত্রকে এখন আরও বেশি শান দিয়েছে। স্টেপওভারের সঙ্গে ইনসাইড, আউটসাইট কাট করেও এখন ড্রিবল করে।
রবার্ট লেভানডস্কি রোনাল্ডোর মতো অত বেশি ফ্রি-রোলে খেলে না। মুভমেন্টের সুযোগ অত নেই। রোনাল্ডোর মতো অত বেশি নিঁখুত ড্রিবলার না হলেও লেভানডস্কি ছোট জায়গায় কাটাতে পারে। চেষ্টা করে ডিফেন্ডারদের বোকা বানানোর। থ্র্যাশিং স্ট্রাইকার হওয়ায় চার পাঁচজনকে পিছনে ফেলে দিয়ে এগিয়ে যায়। মাঝে মাঝে চেঞ্জ অব পেসেও বলটা টেনে নিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ড্রিবলিং লেভানডস্কির খেলার শক্তি নয়।
রোনাল্ডো ৮/১০ লেভানডস্কি ৬/১০
হেডিং
রোনাল্ডো স্পটজাম্প দিয়ে শূন্যে উঠে হেড দেওয়ার ক্ষমতা অবিশ্বাস্য। ফুটবলে এমনিতেই হেড দিয়ে গোল করা খুব কঠিন। তোমাকে সঠিক টাইমিং রাখতে হবে। কোমরের জোরটাকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে। তার পরে মাথা দিয়ে বলটা সঠিক ডিরেকশনে রাখা। রোনাল্ডোর হেডের মধ্যে এই তিনটে জিনিসই আছে। তার উপরে কোমরে ঝাঁকুনি থাকায় আরও বেশি নিখুঁত হয় হেডটা। সবাই ভাবে কী করে ও এত লম্বা লাফায়। ও ডান পায়ের প্লেয়ার। আর স্পটজাম্পের সময় বাঁ পায়ের গোড়ালির উপর জোর দিয়ে লাফটা দিচ্ছে। এতে হাইটটা পাচ্ছে।
লেভানডস্কি অর্ধেক গোল হেডেই করেছে। লেভানডস্কির স্পটজাম্প নেই, কিন্তু টাইমিংটা দারুণ। তাই এই ক্ষেত্রে ওকে বেশি পিছিয়ে রাখা যাবে না। আগেভাগেই আন্দাজ করতে পারে কোনটা হেডে গোল করবে। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে যে কোনও অ্যাঙ্গল থেকে হেড দিতে পারে। লেভানডস্কির হেডগুলো বুলেট স্পিডে জালে ঢোকে। এতেই বোঝা যাচ্ছে ওর অনুমানক্ষমতা কতটা ভাল। কারণ সঠিক টাইমিংয়ে হেডটা না দিলে অবশ্যই এত জোর থাকতে পারে না। শুধু দাঁড়িয়ে নয়, শরীর ছুড়ে দিয়ে বা গ্রাউন্ডেও বলটা বাউন্স করিয়ে গোলে ঢোকাতে পারে।
রোনাল্ডো ৯/১০ লেভানডস্কি ৮/১০
পাসিং
রোনাল্ডো মেসির মতো বিশ্বমানের স্কিমার নয়। রোনাল্ডো একটু স্বার্থপর ফুটবল খেলে। কিন্তু বল হোল্ড করে সাপোর্টে লোক বাড়াতে পারে। তাই পাসিং আউটলেটও তৈরি করে অনেক। ওয়াল পাস বা ডায়গোনাল বল বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই ও দুর্দান্ত। রিয়ালে বেঞ্জিমা বা বেলের সঙ্গে সুন্দর কম্বিনেশন তৈরি করে। কিন্তু ও বল দেওয়ার থেকেও বেশি রিসিভিং এন্ডে থাকে। তাই ট্রেডমার্ক পাসার নয়।
লেভানডস্কি বেসিক পাসগুলো ঠিকঠাক বাড়াতে পারে। বলের উপর কন্ট্রোল ভাল তাই মুভও তৈরি করতে সাহায্য করে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও বায়ার্ন মিউনিখে মারিও গটজে, থিয়াগো আলকান্তারা, ইকেই গুন্দোগান, জাবি আলোন্সোর মতো বল প্লেয়ারদের সঙ্গে খেলেছে। তার উপরে পেপ গুয়ার্দিওলার কোচিংয়েও ছিল। যে কোচ বল পজেশনকেই খেলার আসল অস্ত্র মানে। স্বভাবতই লেভানডস্কির পাসিংও আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। অনেক বেশি ছোট ছোট পাস খেলে কম্বিনেশন তৈরি করে।
রোনাল্ডো ৭/১০ লেভানডস্কি ৬/১০
শ্যুটিং
রোনাল্ডো দু’পায়ে দুর্দান্ত শট। লং রেঞ্জ হোক বা ফ্রি-কিক, সব কিছুই দক্ষ ভাবে করতে পারে। রোনাল্ডোর শটগুলো অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত। আগের থেকেই যেন মাথায় ছকে রাখে কোথায় শটটা মারবে। তাই অর্ধেক শট টার্গেটে থাকে। একজন ফরোয়ার্ডের কাছে গোলকিপারের পজিশন নিয়ে অনুমানক্ষমতা থাকাটাও জরুরি। রোনাল্ডোর শটগুলোয় সে রকমই ছাপ থাকে। শ্যুটারদের সব সময় একটু সুবিধাবাদী হতে হয়। রোনাল্ডো সেটাই।
লেভানডস্কি পারফেক্ট শ্যুটার। শূন্যে উঠে ভলি হোক বা ডিফেন্ডারদের ভিড়ের মধ্যেও ব্যাকভলি মারা, লেভানডস্কির রিফ্লেক্সই যেন ওকে অবিশ্বাস্য সমস্ত জায়গা থেকে শট মারতে সাহায্য করে। স্ট্রাইকারের কাছে সবচেয়ে বড় অস্ত্র, শুরু থেকেই গোলকিপারের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া। লেভানডস্কি সেই ধরনেরই শ্যুটার। গোলকিপারকে চাপে রাখতে শুরুর থেকেই শট মারতে থাকে। হয়তো কয়েকটা গোল হয় না। কিন্তু লেভানডস্কির ভয়ঙ্কর সমস্ত শট শুরু থেকেই বিপক্ষ গোলকিপারকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়।
রোনাল্ডো ৭/১০ লেভানডস্কি- ৮/১০
ফিনিশ
রোনাল্ডো কেউ দুর্দান্ত ফিনিশার না হলে ৩০০-র উপর গোল করতে পারে না। ওর মতো প্লেয়ার যেন গোল করার জন্যই জন্মেছে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে থাকাকালীন দূরপাল্লার গোল করত। রিয়ালে গিয়ে পোচার হয়ে গিয়েছে। ঠিক সময় ঠিক জায়গায় থেকে গোল করে। ইউরোতে এখনও খুব বেশি গোল না করলেও যে দুটো করেছে সেটাই প্রমাণ দিচ্ছে কেন রোনাল্ডো বিশ্বসেরাদের মধ্যে একজন।
লেভানডস্কি ক্লিনিকাল ফিনিশার। বক্সের আশেপাশে বল পেলেই গোল করে দেয়। ওর কাছে বল পাস দিলে নিশ্চিন্ত থাকা যায় গোলটা করে আসবে। দুরন্ত ভলি হোক বা একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে গোল করা, লেভানডস্কির সামনে সব কিছুই অনেক সোজা দেখায়। বল পেলে চার-পাঁচজন ঘিরে নিলেও এগিয়ে যেতে পারে। ফিটনেস এতটাই আছে যে বলের প্লেসমেন্টও নিখুঁত। গোলকিপারের কোনও সুযোগ থাকে না। ইউরোয় ভাল সাপ্লাই পাচ্ছে না বলে গোলটা আসছে না। আশা করছি পর্তুগালের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ফিনিশার লেভানডস্কিকে দেখতে পাব।
রোনাল্ডো ৮/১০ লেভানডস্কি-৯/১০