শেষরক্ষা দিন্দার পেসে। মঙ্গলবার। -শঙ্কর নাগ দাস
ইডেনের বুকে মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাকে হারাতে তিন ওভারে ২৮ রান দরকার ছিল ত্রিপুরার। আস্কিং রেট ১০-ও না। সারা দুনিয়া জুড়ে টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে এ তো আকছার হচ্ছে। বল করতে এলেন প্রজ্ঞান ওঝা। পরপর দু’বার বাউন্ডারি দিলেন। একটা তো উড়ে গেল সোজা বাউন্ডারির ও পারে। এক ওভারে ১৭ রান!
যদিও ওভারের শেষ বলে সেই মুরাসিংহকে তিনি ফিরিয়ে দেন, এই ওভারেই বাংলাকে প্রায় খাদের কিনারায় নিয়ে চলে গেলেন বাঁ হাতি ভারতীয় স্পিনার। তাঁকে বাংলার প্রথম দলে রাখা নিয়ে যে বারবার প্রশ্ন উঠছে, সেই প্রশ্ন ফের তুলে।
দু’ওভারে ১১ প্রয়োজন— এই অবস্থা থেকেও ত্রিপুরাকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছতে দিলেন না যিনি, তাঁর নাম অশোক দিন্দা। প্রতি বলেই প্রায় মাথার সমান বল তুলে ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে একটা মাত্র রান দেন দিন্দা। ওঝার উদার রান বিতরণে বাংলার যে ম্যাচ বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছিল, সেই ম্যাচ সহজ করে নিলেন এই বঙ্গসন্তান। যার ফলে শেষ ওভারে আনকোরা পেসার সায়ন ঘোষের চ্যালেঞ্জটা নিতে কোনও অসুবিধাই হয়নি।
জাতীয় টি-টোয়েন্টির আঞ্চলিক পর্বটা মঙ্গলবার এ ভাবেই শুরু হল বাংলার। যার পর ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারি বলেন, ‘‘ওঝার অভিজ্ঞতা ভেবেছিলাম কাজে লাগবে। কিন্তু এ ভাবে যে এক ওভারে এত মার খেয়ে যাবে, ভাবিনি।’’
মনোজের বাজি প্রজ্ঞান হলেও অশোক দিন্দাই যে তাঁর দলের সেরা বোলার, তা এ দিন কার্যত স্বীকারই করে নিলেন বাংলার ক্যাপ্টেন। যখন বললেন, ‘‘দলের সেরা বোলারকে শেষ ওভারের আগের ওভারেই বল করানো ভাল। এত দিনের ক্রিকেটের অভিজ্ঞতায় এটাই বুঝেছি আমি। তাই সেটাই করলাম, দিন্দাকে শেষের আগের ওভারে বল দিয়ে।’’
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে বাংলা যে শুরুতেই ধাক্কা খেয়ে ৪৯-৪ হয়ে গিয়েছিল এ দিন, সে জন্য মনোজ কিছুটা দায়ী করছেন ইডেনের পিচকে। বললেন, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে সাধারণত পাটা উইকেট পাই। কিন্তু এখানে সে রকম পিচ পেলাম কোথায়? এই পিচ ব্যাটিংয়ের পক্ষে মোটেই সোজা নয়।’’
তবু শুরুর ধাক্কা সামলে ৩০ বলে ৩৯-এর ইনিংস খেলেন মনোজ। পঙ্কজ শ-র (৩২ বলে ৩৯ ন.আ.) সঙ্গে ৬১-র পার্টনারশিপ খেলেন। এই জুটিই বাংলাকে একশো পার করিয়ে দেয়। আর শেষবেলায় দেবব্রত দাসের ১১ বলে ২৩ দেড়শোর দিকে টেনে নিয়ে যায় দলকে। মনোজ বলছেন, ‘‘এই উইকেটে দেড়শো যথেষ্ট। তাড়া করে এই রানটা তোলা বেশ কঠিন। আমরা শেষ দিকে রানটা না দিলে ওরা এত কাছাকাছি যেতও না।’’
এ দিন অভিমন্যু ঈশ্বরনকে ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল ঋদ্ধিমান সাহাকে তিন নম্বরে পাঠিয়ে। মাঠে থাকা এক প্রাক্তন বললেন, ‘‘অভিমন্যুকে এই ফর্ম্যাটে জোর করে নামানোর সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়নি বোধহয়। এটা নিয়ে বাংলাকে ভাবতে হবে।’’ অভিমন্যুকে দলে নেওয়ার ভাবনাটা তর্কযোগ্য হতে পারে। কিন্তু কণিষ্ক শেঠ কিন্তু তা ভুল প্রমাণ হতে দিলেন না, তিন উইকেট নিয়ে।
ম্যাচের পর প্রজ্ঞান ওঝাকে সঙ্গে নিয়ে ইডেন থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের ভিড় দেখে বাংলা কোচ সাইরাজ বাহুতুলে এমন ভাবে গতি বাড়িয়ে নিলেন, যাতে মিডিয়াকে এড়ানো যায়। আজ, বুধবার অসমের বিরুদ্ধে ম্যাচের পরেও এ ভাবে তাঁকে মিডিয়া এড়াতে হবে না তো?
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা-১৫২-৭ (মনোজ ৩৯, পঙ্কজ ৩৯, সঞ্জয় মজুমদার ২-২৩) ত্রিপুরা ১৪৭-৮ (স্মিত ৪১, কণিষ্ক ৩-২৩, দিন্দা ২-২৮, সায়ন ২-২০) ।