পি ভি সিন্ধু।
আকানে ইয়ামাগুচির মতো প্রতিপক্ষকে ওরই ঘরের মাঠে যে ভাবে সিন্ধু শুক্রবার হারিয়ে দিল তার পরে অনেকেই হয়তো আরও জোরালো ভাবে ওর অলিম্পিক্স সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। তার জন্য এখনও ওকে দুটো ধাপ পেরোতে হবে। শনিবারের সেমিফাইনাল ম্যাচটা আমার মতে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। তবে যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সিন্ধু খেলছে, সেটা ধরে রাখতে পারলে তাই জ়ু ইং-এর বিরুদ্ধে ওকে কিছুটা এগিয়ে রাখব।
কেন সিন্ধুকে এগিয়ে রাখছি, সেটা বোঝানোর জন্য শুক্রবারের ম্যাচটার দিকে তাকাতে হবে। যেখানে ও ২১-১৩, ২২-২০ পয়েন্টে হারিয়ে দিল ওর চেয়ে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা জাপানের খেলোয়াড়কে। ইয়ামাগুচির বিরুদ্ধে প্রথম গেমে সিন্ধু দাপট নিয়ে খেলার পরে দ্বিতীয় গেমে ও দুটো ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে জিতেছে। এর থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার, চাপের মুখে ও সহজে ভেঙে পড়ছে না। বিপক্ষকে পাল্টা চাপে রাখতে পারছে। দ্বিতীয় গেমে একটা সময় সিন্ধু ৬ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল। সেখান থেকে ইয়ামাগুচি ঘুরে দাঁড়ায়। এক সময় ইয়ামাগুচি ২০-১৮ পয়েন্টে এগিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে ওই চাপের মধ্যেও ক্লান্তি সামলে পরপর চারটে পয়েন্ট তুলে নেয় সিন্ধু।
শুধু চাপ সামলানোই নয়, যে ভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ও কৌশল বদলে ফেলছে সেটাও বিপক্ষের কাছে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ইয়ামাগুচির বিরুদ্ধেই যেমন, যখন আক্রমণাত্মক খেলার প্রয়োজন ছিল তখন সেটাই করেছে। আবার দ্বিতীয় গেমে র্যালির পাশাপাশি ড্রপ শটেও দ্রুত পয়েন্ট তুলে নিয়েছে। সে রকমই ধারালো দেখিয়েছে ওর নেট প্লে। তাই ইয়ামাগুচি কখনই সুবিধে করতে পারেনি নেটের সামনে। সব চেয়ে বড় কথা, সিন্ধু গোটা ম্যাচটাই খুব ঠান্ডা মাথায় খেলেছে। যা চাপ সামলানোর সব চেয়ে বড় অস্ত্র।
এ বার শনিবারের ম্যাচের প্রসঙ্গে আসি। তাই জ়ু ইং এখন বিশ্বের এক নম্বর। সিন্ধুর সেখানে বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৭। তা ছাড়া ওর বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে সিন্ধু পিছিয়ে রয়েছে ৫-১৩ ম্যাচে। তবুও সিন্ধুকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখছি কারণ, বড় মঞ্চে তাই জ়ু-র বিরুদ্ধে সিন্ধুর সাফল্য দেখে। ২০১৯ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সিন্ধু ওকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়েছিল। ২০১৬ রিয়ো অলিম্পিক্সে তো সিন্ধুর কাছে স্ট্রেট গেমে হেরেছিল তাই জ়ু। চিনা তাইপের এই তারকার খেলোয়াড় জীবনে অনেক সাফল্য থাকলেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বা অলিম্পিক্সে কোনও পদক নেই।
অবশ্য সেই রেকর্ড কাটাতে তাই জ়ু নিশ্চয়ই এ বার মরিয়া হয়ে রয়েছে। ওর সব চেয়ে বড় অস্ত্র হল শটে অনেক বৈচিত্র থাকা। কোর্টের একই জায়গা থেকে ও দু’তিন রকম শট মারতে পারে। ফলে বিপক্ষ ধাঁধায় পড়ে যায় যে, ঠিক কোন শটটা আসতে চলেছে। সিন্ধুকে এটাই আটকাতে হবে। ওকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেওয়া যাবে না। যে ভাবে ইয়ামাগুচির বিরুদ্ধে শুক্রবার প্রথম থেকেই সিন্ধু চাপে রেখে দিয়েছিল, সেই কৌশলই ধরে রাখতে হবে এই ম্যাচেও। যদি সিন্ধু সেটা পারে, তা হলে ওর না জেতার কোনও কারণ দেখছি না।