ছবি রয়টার্স।
কথাটা বলেছেন প্রাক্তন জাতীয় হকি কোচ হরেন্দ্র সিংহ। প্রশ্ন আপাতত একটাই। হকিতে অলিম্পিক্স পদকের জন্য ৪১ বছরের অপেক্ষা কি অবশেষে শেষ হবে?
এক সাক্ষাৎকারে হরেন্দ্রর আবেগঘন মন্তব্য, ‘‘সত্যিই তেমন কিছু হলে আমরা কিন্তু একটা পদক জিতব না। জিতব ১৮টা পদক। যার সব ক’টা পৌঁছে যাবে এ দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে। যা দেখে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।’’ একধাপ এগিয়ে হরেন্দ্র আবার বলে রেখেছেন, ‘‘আমি বাজি ধরতে পারি। সেমিফাইনালে মনপ্রীত সিংহেরা হারাবেই বেলজিয়ামকে। আর ফাইনালটা হবে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া।’’
অনেকের মনে থাকতে পারে, দু’বছর আগেই বেলজিয়াম খেলতে এসেছিল ভারতে। তিন টেস্টের সেই সিরিজে সব ক’টি ম্যাচেই কিন্তু তারা হেরেছিল। যার একটাতে আবার ভারত জেতে ৫-১ গোলে। সঙ্গে আরও মনে রাখার ব্যাপার, শেষ পাঁচ বারের সাক্ষাতে চার বারই তাদের বিরুদ্ধে জিতেছে এ দেশের তরুণ-তুর্কিরা। অবশ্য অলিম্পিক্সের শেষ সাক্ষাতে ইউরোপের এই দেশটার কাছে ৩-১ হেরে যায় ভারত। তা ছাড়া হকির বিশ্ব ক্রমতালিকায় বেলজিয়ামই এখন দুই নম্বর দল। আর টোকিয়োয় এ বার ভাল পারফরম্যান্সের সৌজন্য ভারত রয়েছে তিনে।
গ্রুপের খেলায় এ বার ভারত ১-৭ হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এবং সেখান থেকে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটান হরমনপ্রীত সিংহেরা, বাকি তিনটি ম্যাচই জিতে। গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল ভারত চমকে দেয় গ্রেট ব্রিটেনকে হারিয়ে। হকি বিশেষজ্ঞেরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন ভারতীয় রক্ষণের। এত প্রশংসা মূলত একটা কারণে। অলিম্পিক্সে এ বার এখন পর্যন্ত ভারতীয় ডিফেন্ডারেরা মোট আটটি পেনাল্টি কর্নার আটকে দেওয়ায়।
পাশাপাশি এটাও ঘটনা, প্রতিপক্ষ হিসাবে বেলজিয়াম রীতিমতো ওজনদার দল। বিশ্বকাপ জিতেছে তারাই। ইউরোপের এই দলটা এতটাই ভাল যে টোকিয়োয় এ বার মোট ২৯টি গোল করে চমকে দিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, মঙ্গলবার গ্রাহাম রিডের দলের রক্ষণের কাজ কতটা কঠিন। ভারতীয় হকির কিংবদন্তি জ়াফর ইকবাল যে কারণে বলেছেন, ‘‘আমাদের সেমিফাইনালে ওঠাটাই বিরাট সাফল্য। এই জায়গায় পৌঁছতে লেগে গেল চল্লিশটা বছর। সব চেয়ে ভাল লাগছে মনপ্রীতদের আত্মবিশ্বাসটা।’’ যোগ করেছেন, ‘‘বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে আমরা সেমিফাইনালে জিতব কি না, তা অনেক কিছুর উপরে নির্ভর করবে। ওরা কিন্তু বিশ্বসেরা। ওদের হারাতে দারুণ পরিকল্পনা করে খেলতে হবে। আশা করব, আমাদের দল পরিচালন সমিতি সেই কাজটা একেবারে ঠিকঠাক হিসেব করেই করবে।’’ কী বলছেন ভারত-অধিনায়ক মনপ্রীত? ‘‘ব্রিটেনকে হারাতে গিয়ে আমাদের ছেলেরা তো প্রায় মরতে বসেছিল। প্রত্যেকে নিজেদের একশো ভাগ দিয়েছে। তবে আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি,’’ মন্তব্য ভারত-অধিনায়কের।
পাশাপাশি এই ম্যাচে নামার আগে সতর্ক গোলরক্ষক সৃজেশও। তিনি বলে দিয়েছেন, ‘‘ব্রিটেন ম্যাচের শিক্ষা সেমিফাইনালেও কাজে লাগাতে হবে আমাদের। এখানে তৃতীয় বার অলিম্পিক্সে খেলছি। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে সেমিফাইনালে খেলব এ বারই প্রথম। তাই খুব ভাল করে জানি, এই রকম মঞ্চে ভুল করা যায় না। এই দিক থেকে সাবধান থাকতে হবে।’’