সানিয়া মির্জা। ফাইল ছবি
ভারতের প্রথম মহিলা অ্যাথলিট হিসেবে চারটি অলিম্পিক্সে নেমে রেকর্ড করলেন। কিন্তু এই রেকর্ড তিনি করতে পারবেন, ভাবেননি। কয়েক মাস আগেও টোকিয়ো অলিম্পিক্সে নামার কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাননি সানিয়া মির্জা। হয়ত নির্ধারিত সময়ে গত বছর অলিম্পিক্স হলে সানিয়ার খেলাও হতো না।
২০১৮ সালের অক্টোবরে মা হয়েছেন সানিয়া। তারপর থেকে স্বাভাবিক ভাবেই জীবন বদলে গিয়েছে তাঁর। আনন্দবাজার অনলাইনকে সানিয়া জানালেন, ‘‘চারটে অলিম্পিক্সে নামার কথা কেউই ভাবতে পারে না। আমিও যখন খেলা শুরু করেছিলাম, স্বাভাবিক ভাবেই ভাবিনি। চারটে অলিম্পিক্স খেলা মুখের কথা নয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা বাড়তি কঠিন ছিল। ইজহান (সানিয়ার ছেলে) হওয়ার পর আমার জীবনযাত্রাই পাল্টে গিয়েছে। ঠিক সেই সময়টায় জানতামই না আবার কবে কোর্টে নামতে পারব।’’
কিন্তু ইজহানকে সামলেও কোর্টে নামতে পারবেন, এই স্বপ্নটা মনের মধ্যে ছিল। সানিয়ার বক্তব্য, ‘‘আবার টেনিস শুরু করব, এই আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু কবে থেকে, সেটা জানতাম না। ফলে অলিম্পিক্সে খেলার কথা তখন মাথাতেও ছিল না। তখনকার কথা ছেড়ে দিলাম, কয়েক মাস আগে, এমনকী অনুশীলন শুরু করার পরেও অলিম্পিক্স নিয়ে ভাবিইনি। কিন্তু তারপর যত দিন এগিয়েছে, তত মনে হয়েছে পারব। সেটাই পারলাম। আগের তিনটে অলিম্পিক্সে নামা, আর এ বার নামার মধ্যে একটু তফাৎ আছে। এ বার মা হয়ে নেমেছি। এটা একটা বিশেষ অনুভূতি।’’
ইজহানকে সামলেও কোর্টে নামতে পারবেন, এই স্বপ্নটা মনের মধ্যে ছিল।
প্রবল অনিশ্চয়তা ছিল অতিমারির জন্যও। সানিয়া জানালেন, ‘‘কোভিডের জন্য আমাদের প্রত্যেককে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। একটা সময়ে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, কোনও পরিকল্পনা করা যাচ্ছিল না। কিন্তু হয়ত টেনিসের প্রতি ভালবাসা এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব করার উত্তেজনাই আমাকে তৈরি করে দিয়েছে।’’
মহিলাদের ডাবলসে সানিয়ার জুটি অঙ্কিতা রায়না। আগামী রবিবার তাঁরা অভিযান শুরু করবেন। অঙ্কিতা এই মুহূর্তে সিঙ্গলসে ভারতের এক নম্বর। কিন্তু ২৮ বছরের অঙ্কিতার এটাই প্রথম অলিম্পিক্স। অনভিজ্ঞ জুটি নিয়ে খেলতে হলেও অসুবিধে হবে না, বলছেন সানিয়া। জানালেন, ‘‘দেশের হয়ে এই প্রথম বয়সে ছোট, অনভিজ্ঞ কারও সঙ্গে খেলছি, তা নয়। আগেও খেলেছি। তাছাড়া ১৩৮ কোটি ভারতীয়ের প্রতিনিধি হিসেবে অলিম্পিক্সে নামার যে অনুভূতি, তাতে এগুলো কোনও বিষয় নয়।’’
মহিলাদের ডাবলসে সানিয়ার জুটি অঙ্কিতা রায়না।
জাপানে করোনা সংক্রমণ প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছে। টোকিয়োতে গেমস ভিলেজে হাজারটা কড়া বিধি নিষেধ। তবু অলিম্পিক্সের সেই গন্ধটা যে প্রবল ভাবে আছে, সেটা সানিয়ার কথাতেই পরিষ্কার। বললেন, ‘‘বিভিন্ন দেশের পুরুষ, মহিলা অ্যাথলিটরা এক সঙ্গে জড়ো হয়েছে। ফলে অলিম্পিক্সের যে অনুভূতি সেটা পুরো মাত্রায় রয়েছে। এখানে জাতি, বর্ণ, ধর্মের কোনও বিভেদ নেই। আগের তিনটে অলিম্পিক্সে ভিলেজে পা রাখা মাত্র যে অনুভূতি হয়েছিল, এ বার কোনও অংশে তার ব্যতিক্রম হয়নি। সবাই খেলার একটা বিশ্ব উৎসবে মেতেছে।’’