রবিকে ঘিরে বদলের স্বপ্ন ফাইল ছবি
খেলাধুলোর সর্বোচ্চ মঞ্চে যখন কোনও ক্রীড়াবিদ পৌঁছনোর স্বপ্ন দেখেন, তখন তার পিছনে জড়িয়ে থাকে কঠোর পরিশ্রম, বিরামহীন আত্মত্যাগ এবং পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন। রবি কুমার দাহিয়ার জীবনও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়।
যবে থেকে কুস্তি শুরু করেছেন, তখন থেকেই তাঁর পাখির চোখ অলিম্পিক্স এবং সেখান থেকে পদক জিতে আনা। পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই, এটা মাথার ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়েছেন ছোট থেকেই। সেই সঙ্গে যখনই দরকার পড়েছে তখনই সমর্থন পেয়েছেন বাবার।
যোগেশ্বর দত্ত, বজরং পুনিয়া, সুশীল কুমারকে দেখে খুব অল্প বয়স থেকেই কুস্তিতে হাত পাকাতে শুরু করেন রবি। ১০ বছর বয়সে চোখে পড়ে যান সৎপাল সিংহের, যিনি ঘটনাচক্রে জেলবন্দি সুশীলের শ্বশুর। সৎপালই উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে নিয়ে আসেন দিল্লির ছত্রশল স্টেডিয়ামে।
বাবা রাকেশ দাহিয়া পেশায় কৃষক। তবে নিজের কোনও জমি নেই। অন্যের জমিতে কাজ করেই পরিবারের ভার বহন করতেন। ছেলে দিল্লি চলে যাওয়ার পরেও শত আর্থিক কষ্টের মধ্যেও তাঁর খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন নজর ছিল রাকেশের।
নাহরি গ্রাম থেকে তাই প্রতিদিন ৬০ কিমি যাতায়াত করে রবিকে দুধ, ফলমূল এবং মাখন দিয়ে আসতেন রাকেশ। ভোর তিনটের সময় উঠে পড়তেন তিনি। বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে স্থানীয় রেলস্টেশনে পৌঁছতেন। তারপর নামতেন আজাদপুরে। সেখান থেকে আরও দু’কিমি হেঁটে ছত্রশলে পৌঁছে রবির হাতে তুলে দিতেন খাবার।
এই প্রসঙ্গেই এক সাক্ষাৎকারে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন রাকেশ। বলেছেন, “ওর মা ওর জন্য মাখন বানিয়ে দিত। সেটা একটা বাটি করে আমি নিয়ে যেতাম। একদিন বেকায়দায় ও বাটি উল্টে দেয়। পুরো মাখনটাই পড়ে যায় মাটিতে। আমি ওকে বলি যে কী ভাবে অনেক কষ্ট করে ওর জন্য খাবারের সংস্থান করি আমরা। তাই ওর আরও যত্নবান হওয়া উচিত। শুনে ও মাটি থেকেই মাখন তুলে খেয়ে নিয়েছিল। ওই দিন আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল।”
শুধু রাকেশকে নয়, রবি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন গোটা গ্রামকেও। দীর্ঘদিন ধরে একটি হাসপাতাল এবং অবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি করে আসছে নাহরি গ্রাম। গ্রামবাসীদের আশা, রবি রুপো জেতায় এ বার হয়তো তাঁদের দুর্দশা ঘুচতে চলেছে। তাঁর বাবা রাকেশ জানিয়েছেন, বিদ্যুতের পাশাপাশি হয়তো পাকাপাকি জলের ব্যবস্থাও এ বার হতে চলেছে।