ভারতীয় হকি দলের অধিনায়কদের সঙ্গে নবীন পট্টনায়েক। —ফাইল চিত্র
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টা। ভুবনেশ্বরে বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে ছিলেন এক প্রবীণ। পরনে সাদা ঢোলা পাজামা আর সাদা গেঞ্জি। মাথায় সাদা চুল। আচমকা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। হাততালি দিতে দিতে শিশুর উচ্ছ্বাসে এগিয়ে গেলেন টিভির দিকে। টোকিয়োর স্টেডিয়ামে তৈরি হল ইতিহাস। সেই ইতিহাসে লেখা থাকবে এই প্রবীণের কথা। যিনি বয়সে প্রবীণ। নামে নবীন।
নবীন পট্টনায়েক। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৮ সাল থেকে যিনি বাজি ধরেছেন রানি রামপাল, মনপ্রীত সিংহদের দলের উপর। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যাঁর শাসনাধীন ওড়িশা সরকার ভারতীয় মহিলা ও পুরুষ দলকে স্পনসর করছে।
নবীন নিজেও হকি খেলতেন। স্কুলে থাকার সময় গোলরক্ষক ছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে নবীন বলেন, “ওড়িশাতে হকি শুধু একটা খেলা নয়, এটা জীবন। এখানে ছেলেরা হাঁটা শেখে হকিস্টিক হাতে। ওড়িশা থেকেই উঠে এসেছে একাধিক প্রতিভাবান খেলোয়াড়।” এই বারের ভারতীয় দলেও ওড়িশা থেকে রয়েছেন একাধিক খেলোয়াড়।
ভারতীয় হকি দলকে স্পনসর করত সহারা। তারা সরে যাওয়ার পর ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে হকি দলের পাশে দাঁড়ান নবীন। বছরে ২০ কোটি টাকা করে দেন দুই দলকে। প্রথম বার কোনও রাজ্য জাতীয় দলের স্পনসর হিসেবে দায়িত্ব নেয়।
ধীরে ধীরে উন্নতি করতে থাকে দুই দল। সেই সাফল্যই যেন চোখে পড়ছে অলিম্পিক্সে। ছেলেদের দল ইতিমধ্যেই ব্রোঞ্জ জিতে নিয়েছে। শুক্রবার ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে নামবেন রানিরাও। তাঁদের উৎসাহ দিতে টোকিয়োর গ্যালারিতে না থেকেও যেন থেকে যাবেন ভারতীয় হকির নেপথ্যনায়ক, নবীন পট্টনায়েক।
বৃহস্পতিবার মনপ্রীতরা ব্রোঞ্জ জয়ের পর নবীন টুইট করে লেখেন, “৪১ বছর পর পদক। শুভেচ্ছা হকি দলকে। টোকিয়োর এই জয় গোটা প্রজন্মকে উৎসাহ দেবে। ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছা।”
তবে ভারতীয় হকি দলকে সব থেকে বেশি উৎসাহ বোধ হয় তিনিই দিয়েছেন। ভারতীয়দের মনে ফের ফিরিয়ে এনেছেন হকিকে।
শুধু স্পনসর করেই দায় সেরে দেননি নবীন। একাধিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ওড়িশা। ২০১৮ সালে হকির বিশ্বকাপ যার মধ্যে অন্যতম। দেশের সব থেকে বড় হকি স্টেডিয়ামও তৈরি করেছেন নবীন। বিরসা মুন্ডা আন্তর্জাতিক হকি স্টেডিয়ামে ২০ হাজার দর্শক একসঙ্গে খেলা দেখতে পারেন। এই মাঠেই ২০২৩ সালে ছেলেদের হকি বিশ্বকাপ এই মাঠেই হওয়ার কথা।
কলিঙ্গ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং ফিজিয়োথেরাপিস্টদের উপস্থিতি আরও উন্নতির সুযোগ এনে দিয়েছে খেলোয়াড়দের জন্য। এর ফলে শুধু যে ওড়িশার হকি খেলোয়াড়রা সুবিধা পাচ্ছে তা নয়, ভারতীয় হকি দলেরও উন্নতি হচ্ছে।