করোনার আক্রমণে পিছিয়ে যেতে পারে অলিম্পিক্সও
পূর্ব এশিয়া-সহ গোটা বিশ্বে মারণ করোনা ভাইরাসের দাপটে পিছোতে পারে আসন্ন টোকিয়ো অলিম্পিক্স। মঙ্গলবার এমনই আভাস দিয়েছেন জাপানের অলিম্পিক্স মন্ত্রী সেইকো হাশিমোতো। তবে তিনি আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত সব সমস্যা সরে গিয়ে ঠিক সময়েই অনুষ্ঠিত হবে এ বারের টোকিয়ো অলিম্পিক্স।
জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সঙ্গে টোকিয়োর যে চুক্তি হয়েছে, সেই অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত অলিম্পিক্স স্থগিত রাখা যায়। সেই সূত্র ধরেই জাপানের অলিম্পিক্স মন্ত্রীর আশঙ্কা, যে ভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত আইওসি জুলাই মাসে আসন্ন টোকিয়ো অলিম্পিক্স স্থগিত করতে বাধ্য হতে পারে।
ইতিমধ্যেই বিশ্ব জুড়ে একাধিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা স্থগিত রয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে চিনে মারা গিয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষ। ইতিমধ্যেই এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে জাপান-সহ বিশ্বের ৬০টি দেশে। জাপানে এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার। এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। এই পরিস্থিতিতে জাপানের অলিম্পিক্স মন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
হাশিমোতোর কথায়, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে অলিম্পিক্স করতেই হবে। তার ফলে জুলাই মাসে অলিম্পিক্স স্থগিত হতে পারে।’’ এ দিন হাশিমোতো বলেন, জাপান সরকার এবং টোকিয়োও প্রশাসন নির্দিষ্ট সময়ে অলিম্পিক্স আয়োজন করতে মুখিয়ে রয়েছে। ২৪ জুলাই শুরু হওয়ার কথা টোকিয়ো অলিম্পিক্সের। মঙ্গলবার জাপানের সংসদে হাশিমোতো বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট দিনেই যাতে টোকিয়ো অলিম্পিক্স শুরু হয়, তার জন্য সব রকম চেষ্টা করছে জাপানের প্রশাসন।’’ কারণ, আইওসি ও জাপান সরকার দু’পক্ষই খতিয়ে দেখেছে, যদি অলিম্পিক্স স্থগিত হয়, তা হলে বিশাল অঙ্কের আর্থিক বোঝা বইতে হবে। ইতিমধ্যেই অলিম্পিক্সের বাজেট দাঁড়িয়েছে ১.৩৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন (ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমান ৯,১৬৫ কোটি টাকার বেশি)। এ ক্ষেত্রে অলিম্পিক্স যদি স্থগিত হয়ে যায়, তা হলে এই খরচ আরও বাড়বে।
আরও জানা গিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, অলিম্পিক্স স্থগিত রাখা হবে কি না বা তার সময় পরিবর্তন করা হবে, সব কিছুই নির্ভর করে রয়েছে, আইওসি-র সিদ্ধান্তের উপরে। গত সপ্তাহে তাদের প্রেসিডেন্ট থোমাস বাখ জানিয়েছিলেন, করোনা ভাইরাসের বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ সত্ত্বেও আইওসি নির্ধারিত সময়েই টোকিয়ো অলিম্পিক্স আয়োজন করতে দায়বদ্ধ। এ দিনও লোজ়ানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট ও তার কর্মসমিতির সদস্যেরা জোর দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে টোকিয়ো অলিম্পিক্স। এ ক্ষেত্রে তা স্থগিত করা বা সময় পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনাই নেই। কর্মসমিতির বৈঠকের শুরুতেই বাখ বলে দেন, ‘‘টোকিয়ো অলিম্পিক্স ২০২০ সফল ভাবে আয়োজন করতে সব সকমের সদর্থক প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।’’ বৈঠকের পরে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি বোর্ড এই বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘‘আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কর্মসমিতি নির্ধারিত সময়েই সফল ভাবে ২০২০ টোকিয়ো অলিম্পিক্স আয়োজন করতে চায়।’’
৬৬ বছরের জার্মান আইনজীবী প্রাক্তন অলিম্পিক্স ফেন্সিং চ্যাম্পিয়ন বাখ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিতে পরিচিত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাঁর দৃঢ় সিদ্ধান্তের জন্য। ইতিমধ্যেই টোকিয়ো অলিম্পিক্সের আয়োজক ও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের বিশ্ব জুড়ে দাপাদাপি সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ২৪ জুলাই থেকে ৯ অগস্ট—অলিম্পিক্স আয়োজিত হবে। কারণ, সংগঠকদের কাছে এই মুহূর্তে কোনও ‘প্ল্যান বি’ নেই। তবে পরিস্থিতি ক্রমে এতটাই জটিল হচ্ছে ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহে কী হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। অলিম্পিক কমিটিও এ প্রসঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা চাইছে না। অলিম্পিক্সের সময়ে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করার জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাপান ও টোকিয়ো শহরের প্রশাসন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে নিয়ে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। যা এই মুহূর্তে টোকিয়োতে কর্মরত। আজ বুধবার টোকিয়ো অলিম্পিক্সের আয়োজকেরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে পেশ করবেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কর্মসমিতির কাছে। সেখানেই আলোচনা হবে অলিম্পিক্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে।