লড়াই: সাদা বলে উইকেটরক্ষকের দৌড়ে সঞ্জু (বাঁ দিকে) ও পন্থ। পিটিআই।
দুরন্ত বেন স্টোকসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুধু রাজস্থান রয়্যালসকে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দেওয়াই নয়। দলের আইপিএল শ্বাস-প্রশ্বাস বাঁচিয়ে রাখাই নয়। এত দিনের নির্বাচনী উপেক্ষার বিচারও সম্ভবত পেতে চলেছেন সঞ্জু স্যামসন।
কাল বিলম্ব না করে আজ, সোমবার অস্ট্রেলিয়াগামী ভারতীয় দল বাছতে চলেছেন জাতীয় নির্বাচকেরা। বৈঠকের আগের রাতে যা ইঙ্গিত, সাদা বলের ক্রিকেটে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেককেই পিছনে ফেলে ফেভারিট হিসেবে উঠে এসেছেন সঞ্জু স্যামসন। এমনকি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পরে ভারতীয় দলে দস্তানা হাতে যাঁকে পাকাপাকি ভাবে দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল, সেই ঋষভ পন্থ পর্যন্ত দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন।
গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ওয়ান ডে সিরিজ মাঝপথে বাতিল হওয়ার পরে আবার ভারতীয় দলের হয়ে ক্রিকেটে ফিরছেন বিরাট কোহালি, যশপ্রীত বুমরা, চেতেশ্বর পুজারারা। ৩ ডিসেম্বর প্রথম টেস্ট দিয়ে শুরু হবে কোহালিদের সফর। মোট চারটি টেস্ট এবং তিনটি ওয়ান ডে রয়েছে সূচিতে। হতে পারে তিনটি টি-টোয়েন্টিও। করোনা পরিস্থিতিতে পাল্টে গিয়েছে খেলার দুনিয়া। একই সঙ্গে লাল এবং সাদা বল মিলিয়ে ২৫-২৬ জনকে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। টেস্টের দলে উইকেটকিপার হিসেবে ঋদ্ধিমান সাহার জায়গা নিশ্চিত বলেই খবর।
কিন্তু এত বড় দলেও রোহিত শর্মার নাম না থাকার কথাও শোনা যাচ্ছে। আইপিএলে ফের চোট পেয়েছেন রোহিত। বাকি টুর্নামেন্টে তাঁকে দেখা যাবে কি না, প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। পুরো অস্ট্রেলিয়া সফরেই তিনি খেলতে পারবেন কি না, সেটাও অনিশ্চিত। টেস্টের দলে ওপেনার হিসেবে মায়াঙ্ক আগরওয়াল, পৃথ্বী শ আছেন। কে এল রাহুলকে ফেরানো যেতে পারে। কিন্তু সাদা বলে রোহিতের অনুপস্থিতি বড় ধাক্কা।
রোহিতের সঙ্গেই নজরে দেশের দুই তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ঋষভ পন্থ এবং সঞ্জু স্যামসন। ঋষভকে নিয়ে এমনিতেই ভারতীয় দল পরিচালন সমিতির সাম্প্রতিক অসন্তোষের খবর আর অজানা নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে দায়িত্বজ্ঞানহীন স্ট্রোক খেলে শাস্ত্রী-কোহালিদের উষ্মা বাড়িয়েছিলেন। তার পর থেকে ক্রমশ ঋষভের প্রতি আস্থা হারাতে থাকে টিম ম্যানেজমেন্ট। টেস্ট দলে জায়গা হারিয়েছেন, ওয়ান ডে-তেও তাঁর পরিবর্তে কে এল রাহুলকে দিয়ে কিপার-ব্যাটসম্যানের ভূমিকা পালন করানো হচ্ছে। যা নিয়ে ক্রিকেট মহলে দ্বিমতও রয়েছে। যুবরাজ সিংহের মতো কেউ কেউ পাল্টা বলেছেন, ঋষভ খুবই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। তাঁকে খোলা মনে নিজের খেলা খেলতে দেওয়া উচিত। টিম ম্যানেজমেন্ট সমালোচনা করে চাপ বাড়িয়ে দেবে কেন? তবে চলতি আইপিএলে ঋষভের খারাপ ফর্ম, আরও কিছু বাড়তি মেদ শরীরে যোগ হওয়া দল পরিচালন সমিতির মনোভাব আরও কট্টর করে দিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান।
ঋষভ বনাম সঞ্জু— সাদা বলের ক্রিকেটে কাকে ধোনির উত্তরসূরি ভাবা হবে, তা নিয়ে তাই সোমবারের বৈঠক উত্তপ্ত হতে চলেছে। ক্রিকেট প্রেমিকদের মনে করিয়ে দেওয়া যাক, সরকারি ভাবে এই প্রথম ধোনির অবসরের পরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয় দল নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেই কারণে বলা যেতেই পারে, ধোনি-যুগের অবসান, নতুন যুগের শুরু। সেই নবীন বরণের আবহে ঋষভকে হঠাৎই পিছিয়ে পড়া লাগছে, সঞ্জু গরিষ্ঠ অংশের পছন্দ হিসেবে এগিয়ে গেলে অবাক হওয়ার নেই। আনন্দবাজারের কাছে জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে যে, ভারতীয় দল পরিচালন সমিতির ভোটও যেতে পারে সঞ্জুর দিকে। আইপিএলে কয়েকটি ম্যাচ ঘোরানো ইনিংস খেলেছেন তিনি। প্রথম দিকে কিপিং করছিলেন না সঞ্জু, কিন্তু শেষ কয়েকটি ম্যাচে করেছেন। যা দেখে কারও কারও মনে হয়েছে, নিশ্চয়ই তাঁর কাছেও বার্তা গিয়েছে, কিপিং না করলে অস্ট্রেলিয়াগামী দলে নির্বাচিত হবে কী করে? নির্বাচকদের একাংশ লড়াই করে ঋষভকে যদি দলে রাখতে সক্ষমও হন, দল পরিচালন সমিতি প্রথম একাদশে রাখবে নিশ্চয়তা কোথায়? অতি সম্প্রতিই তো সাদা বলে তাঁকে বসিয়ে রাহুলকে কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো হয়েছে!
ঋষভ বনাম সঞ্জু— ফের না সেই কচ্ছপ আর খরগোসের কাহিনিটা সোমবার লোকের মুখে মুখে ঘোরে!