টেস্ট জিততে না পারলে কী হবে, সিরিজ তো জিতেছেন। তাই হতাশ সতীর্থদের সঙ্গে খুনসুটি ও ঠাট্টা-ইয়ার্কি করে তাঁদের মন ভোলানোর চেষ্টা করছিলেন ভারত অধিনায়ক।
হাতে ধরা স্মারক স্টাম্পটা দিয়ে জাডেজাকে খোঁচা মারতেই তিনি অধিনায়কের দিকে ঘুরে তাকিয়েই হেসে ফেললেন। মহম্মদ শামির কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে দিতেই বাংলার পেসারের মুখেও হাসি। গম্ভীর রাহানেকে ইঙ্গিতে বোঝালেন, ‘ও রকম গুম হয়ে থাকার দরকার কী, চিয়ার্স’।
অপ্রত্যাশিত ড্রয়ের পরে ভারতীয় দল যদি একটা গোটা মরুভূমি হয়, তা হলে বিরাট কোহালি যেন সেই মরুভূমির মাঝে এক মরূদ্যান। ২০১৫-র জুলাই থেকে ২০১৭-র ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ন’টা টেস্ট সিরিজ জিতে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড ছোঁওয়া দলের অধিনায়কের এমন চনমনে থাকাটা অস্বাভাবিক নয় ঠিকই। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে একটা চিন্তা রয়েই গেল ভারতীয় শিবিরে। ফিল্ডিং। এ দিন ছিল রবীন্দ্র জাডেজা-র জন্মদিন। তাই ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে কেক কাটা হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই ফিল্ডিং নিয়ে চিন্তা রয়েই গিয়েছে।
পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই চিন্তার কথা যেমন বলেন কোহালি, তেমনই সাংবাদিক বৈঠকেও চেতেশ্বর পূজারার মুখেও সেই একই কথা। বললেন, ‘‘সত্যিই আমাদের ফিল্ডিং ভাল হচ্ছে না। এটা মানতেই হবে। স্লিপেও আমাদের প্রচুর ক্যাচ পড়ছে, এটাও ঠিক। কেন ক্যাচ পড়ছে, সেটা আমার পক্ষে বলা বেশ কঠিন। চেষ্টা তো আমরা করেই চলেছি। স্লিপ ফিল্ডাররা প্রতিদিন অনুশীলনে ৫০ থেকে ১০০টা করে ক্যাচ ধরা প্র্যাকটিস করি। তবে একদিন না একদিন ঠিকই হয়ে যাবে।’’ অভিযোগ, স্লিপে নির্দিষ্ট ফিল্ডার থাকছে না। এই কারণেই কোটলা টেস্টে স্লিপে পাঁচটা ক্যাচও পড়েছে। এই নিয়ে টেস্ট দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানের বক্তব্য, ‘‘চোটের জন্য মুরলী বিজয় প্রায় ছ’মাস খেলতে পারেনি। ও-ই প্রথম স্লিপে নিয়মিত দাঁড়াত। তাই ওর বদলে অন্য কাউকে ফিল্ডিং করতে হয় ওখানে। এ রকম আরও অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। এটা একটা সমস্যা।’’
তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে ভাল প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস সৌরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানের। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে যাওয়ার আগে মনে হয় আমাদের প্রস্তুতি পুরোপুরি নেওয়া হয়ে যাবে। দলের ছেলেরা সবাই এই ব্যাপারে বলাবলি শুরুও করে দিয়েছে। কার কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কাকে কোন জায়গা শোধরাতে হবে, এ সবই। আমরা অনেক সময়ও পাচ্ছি ওখানে যাওয়ার আগে। আশা করি ভাল রকম প্রস্তুতি নিয়েই যেতে পারব।’’
ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ আপাতত শেষ। এ বার আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে পূজারা বলেন, ‘‘আমরা যারা ওখানে যাচ্ছি। তাদের অনেকেরই ওখানে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি নিজেই যেমন ২০১০, ২০১৩—দু’বার ওখানে খেলেছি। অনেকেই আছে যারা ২০১৩-র সফরে গিয়েছিল। তাই একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা হবে না আমাদের। আমাদের পেসাররা যথেষ্ট ভাল। দেখবেন, ওখানে ভালই বোলিং করবে। তা ছাড়া ওদের ব্যাটিং আর আগের মতো নেই।’’
ফিল্ডিং ছাড়াও ভারতীয় দলের আর এক চিন্তার বিষয় অজিঙ্ক রাহানের ফর্ম। এই সিরিজে পাঁচ ইনিংসে রাহানের স্কোর যথাক্রমে ০, ৪, ২, ১০, ১। এই ব্যাপারে পূজারা বলেন, ‘‘এ রকম দুঃসময় সবার ক্রিকেট জীবনেই আসে। ওকে টেকনিকের দিক থেকে কিছু বলার নেই। ও নিজেই জানে নিজেকে কী করে ফিরিয়ে আনতে হবে। একটা ৫০-এর ইনিংস খেলতে পারলেই আশা করি ও আবার নিজের আসল ফর্মে ফিরে আসবে। হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকাতেই তা হবে।’’