লক্ষ্য: টেস্টের পরে এ বার আইপিএলের চ্যালেঞ্জ উমেশের। ফাইল চিত্র
প্রশ্ন: এই মরসুমে বারোটা টেস্ট খেলার ধকল কি মাত্র দু’সপ্তাহের বিশ্রামেই মিটে যাবে? না কি আরও বেশি বিশ্রাম দরকার ছিল?
উমেশ: দু’সপ্তাহের বিশ্রাম যথেষ্ট। বারোটা টেস্ট খেলার চেয়েও বড় ব্যাপার হল এই বারোটা টেস্টে আমি সাড়ে তিনশো ওভারেরও বেশি বোলিং করেছি। পেস বোলারদের কতটা ধকল নিতে হয়, তা তো জানেনই। ছোটবেলায় যেহেতু নিয়মিত অ্যাথলেটিক্স করতাম, তাই সহজেই ক্লান্তি আসে না আমার। কিন্তু মানুষের শরীরই তো, যন্ত্র নয়। এই ধকলে ভিতরে ভিতরে ক্ষয় হয়ই। সেই ক্ষয় পূরণ করে নিজেকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনাটাই এই দু’সপ্তাহে আমার প্রধান লক্ষ্য।
প্র: বোর্ড তো জানিয়েছে, আপনার নাকি ছোটখাটো দু’টো চোট আছে। একটা কোমরের ডান দিকে আর একটা পিঠের নীচের দিকে।
উমেশ: সে তো আছেই। তবে সেগুলোর জন্য সারা দিন শুয়ে থেকে বিশ্রাম নেওয়ার দরকার নেই। সপ্তাহ দু’য়েক বেশি চাপ না নিলেই হল। তা ছাড়া কিছু শারীরিক কসরৎ দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের ট্রেনার। সেগুলো করছি, তাতেই কাজ হয়ে যাবে। টানা ১৩ টেস্টের মরসুমের পর আবার তিন মাসের টানা ক্রিকেট। আইপিএল আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও রয়েছে পর পর। সে জন্যই এখন শরীরে যেটুকু চোট-আঘাত রয়েছে, সেগুলো সারিয়ে আইপিএলে নামতে বলা হয়েছে আমাদের। তাই এই বিশ্রাম।
প্র: এই বিশ্রামের মধ্যে ক্রিকেট আছে? না ছিটেফোঁটাও নেই?
উমেশ: অবশ্যই আছে। আমি অফ সিজনে যে হালকা বোলিং করে থাকি নিজের ছন্দ ধরে রাখার জন্য, সেটা তো করছিই। তবে বাড়তি পরিশ্রম করছি না। যতটুকু করলে স্বস্তি পাব, ততটাই করছি। তা ছাড়া জিমেও যাচ্ছি। সব কিছুই করছি আমার হালকা চোটগুলোকে বাঁচিয়ে। যাতে সেগুলো বেড়ে না যায়। কোমরে, পিঠে যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে, সেই দিকে লক্ষ্য রেখে করছি। ১৩ এপ্রিল যখন মাঠে নামব, তখন যাতে একেবারে তরতাজা হয়ে নামতে পারি, সে ভাবেই নিজেকে তৈরি করছে। এই বিশ্রামের পরিকল্পনাটা তাই সত্যিই খুব ভাল হয়েছে।
প্র: এ বার তো আপনি নাইটদের প্রধান স্ট্রাইক বোলার। ট্রেন্ট বোল্টও আছেন। কিন্তু আপনি ধারাবাহিক ভাবে ভাল বোলিং করে আসছেন। বোল্ট চোট সারিয়ে ফিরছেন। তাই দায়িত্ব মূলত আপনারই কাঁধে। এই মূল দায়িত্ব নিয়ে কী ভাবছেন?
উমেশ: টেস্ট সিরিজেও তো প্রায় একই পরিস্থিতি ছিল। আমাকে নিয়ে দলের ও ক্যাপ্টেনের প্রত্যাশা ছিল অনেক। যখনই জোরে বোলারের প্রয়োজন হয়েছে, তখনই আমাকে ডাকা হয়েছে। এই যে আমার ওপর এত ভরসা করা হচ্ছে, বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে আমাকে, এই ব্যাপারটা আমি খুব উপভোগ করি। এতে আরও ফোকাস করতে সুবিধা হয়, এর ফলে আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়ে। পারফরম্যান্সেও তার ছাপ পড়ে। কেকেআরেও যদি একই জিনিস হয়, তা হলে আইপিএলে পারফরম্যান্সও আমার ভাল হবে।
প্র: এ বার ঘরের মাঠে তো পেস সহায়ক উইকেট পেতে পারেন আপনারা। এটা আপনার কাছে ভাল খবর নিশ্চয়ই?
উমেশ: আমিও শুনেছি, ইডেনে নাকি এ বার বাউন্স আর গতিময় উইকেট হয়েছে। অক্টোবরে যে টেস্ট হয়েছিল, তাতেও তো সে রকমই উইকে়ট ছিল। এখনও যদি উইকেটের অবস্থা সে রকমই থাকে, তা হলে আমাদের সুবিধাই হবে। আমি ওই টেস্টে খেলিনি, বোল্ট খেলেছিল। অনেকগুলো উইকেটও নিয়েছিল বোধহয় (২-৪৬, ৩-৩৮)। ও নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবে। আমাদের দলের পেস আক্রমণ যথেষ্ট ভাল। ১০ এপ্রিল কলকাতায় পৌঁছে দেখতে পাব কেমন উইকেট হয়েছে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিভেজা নিজামের শহরে আজ শুরু ক্রিকেটের মহোৎসব
প্র: প্রায় ছ’মাসের ঘরোয়া টেস্ট মরসুমে ভারতীয় ক্রিকেট এক নতুন উমেশ যাদবকে পেয়েছে। যিনি এক সময় ভারতীয় দলের নিয়মিত বোলার ছিলেন না, অথচ তাঁকে ছাড়া এখন প্রথম এগারো ভাবা যাচ্ছে না। এই পরিবর্তনটা হল কী ভাবে?
উমেশ: গত এক বছর ধরে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি, এটা তারই ফল বলতে পারেন। অনেকগুলো ব্যাপার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হতে গেলে লাগে। সেগুলো আগে আমার জানা ছিল না, এই এক বছরে সেগুলোই আমি শিখেছি।
প্র: এই ব্যাপারগুলো কী কী?
উমেশ: যেমন ধরুন ম্যাচে বল করতে করতে ব্যাটসম্যানের শক্তি বা দুর্বলতাগুলো বিশ্লেষণ করা। এমনিতে তো আমরা ব্যাটসম্যানদের নিয়ে হোমওয়ার্ক করেই থাকি। কিন্তু ক্রিজে এসেও যে ব্যাটসম্যান সে রকমই খেলবে তার কোনও মানে নেই। ঠিক সেই সময় ব্যাটসম্যানের কোথায় অসুবিধে হচ্ছে। কোন ধরনের বলে সে অস্বস্তিতে পড়তে পারে, কোন ধরনের বল সে খেলতে পছন্দ করে, এগুলো বোলিং করতে করতে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। বুঝে নিতে হয়।
প্র: নিজেকে উন্নত করে তোলার এই কাজে সবচেয়ে বেশি সাহায্য কার কাছে পেয়েছেন?
উমেশ: এই ব্যাপারটা আমাকে শিখিয়েছেন অনিলভাই (কুম্বলে) আর সঞ্জয়ভাই (বাঙ্গার)। দু’জনেই বারবার বলেন, ‘স্কিলের সঙ্গে বুদ্ধিটাকেও কাজে লাগা। ব্যাটসম্যান দেখে বল কর, কোন বলে ব্যাটসম্যানের কী সুবিধে-অসুবিধে হচ্ছে বোঝার চেষ্টা কর। সেই অনুযায়ী তোকে বল করতে হবে।’
প্র: আর কোন কোন জায়গায় উন্নতি করেছেন বলে মনে হচ্ছে?
উমেশ: উইকেট অনুযায়ী লাইন-লেংথ হেরফের করার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছি। আগে যেটা করতে আমার অনেক সময় লাগত, এখন এই কাজটা আমি অনেক কম সময়েই করে ফেলতে পারি। তা ছাড়া বলের অ্যাঙ্গলটা এখন অনেক ভাল বুঝি।
প্র: ভারত অধিনায়ক কোহালির সাহায্য পেয়েছেন কী ভাবে?
উমেশ: বিরাট ভাই যে ভাবে আমাকে সাপোর্ট করেছে, তার জবাব নেই। আমি উইকেট পেলে সবচেয়ে বেশি উল্লাসে ফেটে পড়তে দেখেছি ক্যাপ্টেনকে। দলের অধিনায়ক যদি এত সাপোর্ট দেয়, তা হলে ভাল পারফর্ম করার ইচ্ছে আর আত্মবিশ্বাস বাড়বে না? এই উৎসাহেই তো টানা এতগুলো ম্যাচ খেলে ফেললাম। এখন বুঝি আত্মবিশ্বাস, মানসিকতা— এই ব্যাপারগুলো ফিটনেসের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: এ বারের আইপিএলে নিশ্চয়ই গত বারের চেয়ে অনেক উন্নত উমেশ যাদবকে দেখা যাবে?
উমেশ: চেষ্টা তো করবই। গত বার এত ভাল ফর্মে ছিলাম না। কনফিডেন্স লেভেলও এত উঁচুতে ছিল না। টেকনিকের দিক থেকে এতটা উন্নত ছিলাম না। এগুলোর জন্য আশা করছি বোলিংটাও আরও ধারালো হবে। এর মধ্যে যদি ইডেনের উইকেট থেকে কিছুটা সাহায্য পাই, তা হলে তো কথাই নেই। হয়তো এ বারই আমার সেরা আইপিএল পারফরম্যান্স দেখবেন। আপনাদের সকলের শুভেচ্ছা থাকলে সেটাও হয়ে যাবে হয়তো।