ফাইনালে হারের পর সঞ্চালকের মুখোমুখি মেদভেদেভ। ছবি ইউটিউব থেকে নেওয়া।
নরেন্দ্র মোদীকে মোহিত করেছেন তিনি। এতটাই যে, তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন রাশিয়ার টেনিস খেলোয়াড় দানিয়েল মেদভেদেভকে নিয়ে। এ বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালে পাঁচ সেটের টানটান লড়াইয়ের পর মেদভেদেভ হেরে গিয়েছিলেন রাফায়েল নাদালের কাছে। হারের পর তাঁর বক্তব্য অনেকের মতোই ছুঁয়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
মোদী বলেছেন, মেদভেদেভের সারল্য ও পরিণত বোধ শুধু তাঁকে নয়, স্পর্শ করেছে সবাইকে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “ও আমাকে নাড়া দিয়ে গিয়েছে। ভদ্রতা, নম্র স্বভাব এবং স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের সর্বোত্তম প্রদর্শনে ও সবাইকে ছুঁয়ে গিয়েছে।” যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনাল তিনি দেখেছিলেন জানিয়ে মোদী বলেছেন, “ওই সব মুহূর্ত জেতা-হারার ঊর্ধ্বে। যেখানে হার এবং জিত কোনওটাই থাকে না, ওই মুহূর্তগুলোই বড় হয়ে যায়। যে কারণেই ওই দু’জন গোটা বিশ্ববাসীর হৃদয় জিতেছে। ম্যাচের পর চ্যাম্পিয়ন নাদালও প্রশংসা করেছে মেদভেদেভের। একটা ম্যাচে পরাজিত একজন প্লেয়ার তাঁর ব্যবহারে হৃদয় জিতে নিয়েছে এবং বিজয়ী যে, সেও সৌজন্যবোধে হৃদয় জিতেছে। এমনটা বড় একটা কোনও ম্যাচে দেখা যায় না। আপনারা যদি মেদভেদেভের ওই বক্তৃতা না শুনে থাকেন, তা হলে অবিলম্বে ওই ভিডিয়োটা দেখুন। যে কোনও বয়সের মানুষ এর থেকে কিছু না কিছু শিখতে পারবেন।”
কিন্তু সে দিন কী বলেছিলেন মেদভেদেভ? বলেছিলেন, “প্রথমেই রাফাকে অভিনন্দন জানাতে চাই। ১৯টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতল, অবিশ্বাস্য!” পাশেই তখন হাততালি দিচ্ছেন নাদাল। গ্যালারিতেও হাততালির ঝড়।
আরও পড়ুন: জাতীয় দলে কার আসা উচিত বলে সওয়াল করলেন হরভজন?
আরও পড়ুন: দুর্দান্ত অভিষেক, তার পর হঠাত্ হারিয়ে যাওয়া, সেই নরেন্দ্র হিরওয়ানি এখন কী করছেন জানেন?
যা থামার পর মেদভেদেভ বলেন, “নাদাল ও নাদালের টিমকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। ওর বিরুদ্ধে খেলা একটা রসিকতার মতো। বড্ড কঠিন তোমার বিরুদ্ধে খেলা। আমি যখন তাকাচ্ছিলাম স্ক্রিনে, সেখানে নাদালের প্রথম, দ্বিতীয় করে ১৯ পর্যন্ত সমস্ত গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের মুহূর্তগুলো দেখানো হচ্ছিল। ভাবছিলাম, আমি জিতলে কী দেখানো হবে?” গ্যালারিতে তখন ফের হাততালির বন্যা। হাসছেন নাদালও।
এর পর ফের স্প্যানিশ তারকার টেনিসে অবদানের কথা উঠে এল মেদভেদেভের মুখে। তিনি বললেন, “টেনিসে তোমার অবদান বিশাল। কোটি কোটি শিশু তোমার খেলা দেখে। তাদের টেনিসে আগ্রহ তোমাকে দেখেই। এটা টেনিসের পক্ষে দুর্দান্ত ব্যাপার। আরও একবার তোমাকে অভিনন্দন।”
ফাইনালে প্রথম দুই সেটে হেরে গিয়েছিলেন মেদভেদেভ। কিন্তু নাটকীয় ভাবে ঘুরে দাঁড়ান তিনি। জেতেন পরের দুই সেট। পঞ্চম সেটে অবশ্য শেষরক্ষা করতে পারেননি। নাদাল জেতেন ৭-৫, ৬-৩, ৫-৭, ৪-৬, ৬-৪ ফলে। কোন মন্ত্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি? মেদভেদেভ সেটাও শুনিয়েছেন— “সত্যি বলতে প্রথম দুই সেটের পর আমি হারছি বলে মেনেও নিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, আর মিনিট কুড়ির মধ্যেই এটা ঘটতে চলেছে। কী বলব ভাষণে, সেটাও ভেবে ফেলেছিলাম। জীবনের প্রথম ফাইনালে তিন সেটেই হারলাম, যদিও লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলাম, এই সব বলব আর কী। আমাকে তখন প্রত্যেক বলের জন্যই লড়াই চালাতে হতো। কত দূর টানতে পারি, দেখাই যাক না। শেষ পর্যন্ত অনেকটাই টেনেছি। দুর্ভাগ্যের হল, ফল আমার দিকেই আসেনি।”
যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের গোড়ার দিক থেকে মেদভেদেভ ছিলেন জনতার কাছে খলনায়ক। প্রথমে বলবয়ের কাছ থেকে দৃষ্টিকটূ ভাবে তোয়ালে নেওয়া, তার পর দর্শকদের উদ্দেশে কটাক্ষ তাঁকে টেনিসের নতুন বখাটে ছেলে আখ্যা পাইয়ে দিয়েছিল। ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর নিজের ভাষণে তিনি অবশ্য জনতার মন জিতে নিলেন। মেদভেদেভ গ্যালারির দিকে তাকিয়ে বলেন, “আপনাদের এনার্জির জন্যই আমি ফাইনালে উঠেছি। এই রাত আমার মনে থাকবে চিরকাল। তৃতীয় সেটে মনে হয়েছিল হারার পর কী বলব সেটা ভেবে রাখতে হবে। কিন্তু আপনারা আমাকে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন, আমার সেরাটা বের করে এনেছেন। কারণ, আপনারা আরও টেনিস দেখতে চেয়েছিলেন। এই জন্যই শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছি।”
টেনিসপ্রেমী জনতার উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “আপনারা আমাকে বিদ্রুপ করেছিলেন একটা কারণে। কিন্তু আপনারা দেখলেন যে আমি বদলেও যেতে পারি। আমি আসলে তো একজন মানুষ। তাই ভুল হয়ে যেতেই পারে। আরও একবার আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাদের।” তার পর নিজের টিমের সবাইকে ধন্যবাদ জানান মেদভেদেভ। সমর্থক, পরিবার, বাবা-মা— প্রত্যেকের নামই উঠে আসে তাঁর গলায়।