আইপিএল ফাইনালে ওঠার উৎসব সচিনের সঙ্গে। তখনও হরভজন জানতেন না ১৩ ঘণ্টা বাদে টেস্ট দলে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটবে। ছবি: টুইটার।
প্রায় আড়াই বছর পর জাতীয় দলে হরভজন সিংহের প্রত্যাবর্তনের খবর শুনে অনেকে খুব খুশি হতে পারেন। কিন্তু আমি টিমটা শুনে একদম শক্ড হয়ে গিয়েছি। টিমটা মানে, হরভজন সিংহের নাম শুনে। সত্যি, ছেলেটার কপাল খুব ভাল বলতে হবে!
গত বছর রঞ্জি ট্রফিতে হরভজনের পারফরম্যান্স কী রকম ছিল, একটু দেখে নিন। ও ম্যাচই খেলেছে মাত্র তিনটে। তাতে নিয়েছে মোটে ছ’খানা উইকেট। সেরা বোলিং? ৩-৫১। এর পর যদি কেউ তার দেশের টেস্ট দলে ডাক পায়, শুনে একটু অবাক তো লাগবেই। হ্যাঁ, এ বারের আইপিএলে দারুণ খেলছে ভাজ্জি। নেটে দেখছিলাম, ১৪ ম্যাচে ষোলোটা উইকেট নিয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্সের বিচারে কেউ টেস্ট টিমে ডাক পাচ্ছে, আমি তো এই প্রথম দেখছি।
তবু সিদ্ধান্তটার পিছনে কয়েকটা যুক্তি যে আছে, সেটাও স্বীকার করতে অসুবিধে নেই। যার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় রবীন্দ্র জাডেজার জঘন্য টেস্ট বোলিং। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ওর পারফরম্যান্স এতটাই শোচনীয় ছিল যে, ওকে টেস্ট স্পিনার হিসেবে আর ভাবাই যাচ্ছে না। প্রধান নির্বাচক সন্দীপ পাটিল অন্য যে কারণটার কথা বললেন সেটা হল, বাংলাদেশ টিমে ছ’জন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানের উপস্থিতি। শুনলাম উনি বলেছেন, সিলেকশন মিটিংয়ে বেশ কয়েক জন তরুণ অফস্পিনারের কথা আলোচনা করা হলেও কারও নাম সে ভাবে উঠে আসেনি। কর্ণ শর্মারা এখনও যথেষ্ট অভিজ্ঞ নয়। তাই ওদের কারও উপর পুরোপুরি ভরসা করা যাচ্ছে না।
তবে আমার কী মনে হয় জানেন? আসল কারণ এর কোনওটাই নয়। আসল কারণটা হল, এটাকেই হয়তো হরভজনের শেষ টেস্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট হেড অফিসে। কেন জানি না মনে হচ্ছে, হরভজনকে এই টেস্টটা খেলিয়ে বোর্ড বলে দেবে, তোমাকে শেষ সম্মান দেওয়ার ছিল, দিয়ে দেওয়া হল। এ বার তুমি এসো। ফেয়ারওয়েল ম্যাচ আর কী! না হলে চৌত্রিশ বছরের একজন প্লেয়ারকে এ ভাবে ফিরিয়ে আনার যথেষ্ট যুক্তি আমি অন্তত পাচ্ছি না।
ওই একটা টেস্টে যদি হরভজন দুর্দান্ত কিছু করে দেয়, তা হলে হয়তো ছবিটা পাল্টালেও পাল্টাতে পারে। ও নাকি বলেওছে যে, আরও চার-পাঁচ বছর খেলে দিতে পারবে। কিন্তু সেটা কাজে করে দেখানোর ফিটনেস ওর আছে কি না, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আর নির্বাচকেরা ওকে অত সুযোগ দেবেন বলেও মনে হয় না।
যাই হোক, একটা ব্যাপার নিয়ে খুব আগ্রহ হচ্ছে। এই প্রথম হরভজন আর অশ্বিনকে হয়তো জুটিতে বল করতে দেখব। ওদের অফ স্পিন পার্টনারশিপটা কেমন দাঁড়ায়, সেটা ওই টেস্ট ম্যাচটার অন্যতম আকর্ষণ। আবার একই সঙ্গে ওদের মধ্যে একটা অদৃশ্য লড়াই চলবে বলেও মনে হচ্ছে। কারণ ভাজ্জি নিশ্চয়ই জানে যে, টিম ইন্ডিয়া জার্সিটা ধরে রাখতে হলে যে কোনও মূল্যে ওকে অশ্বিনের চেয়ে ভাল বল করতে হবে।
যুবরাজ সিংহ ডাক পেল না কেন, সেটা নিয়ে যে যা-ই বলুন, আমি অবাক হওয়ার কিছু দেখছি না। এই যে সন্দীপ পাটিল বললেন মিটিংয়ে যুবরাজের নামই ওঠেনি, তাতে কি আশ্চর্যের কিছু আছে? আরে বাবা, ও কী এমন খেলল এই একটা বছর? ওর নামটা উঠবেই বা কেন? আইপিএলে তো পরের পর ম্যাচ ব্যর্থ। আর দেখুন, অতীতে কে কী করেছে, সেটা দিয়ে টিম করা যায় না। ওটা করা হয় এখনকার পারফরম্যান্সের বিচারে। অতীত পারফরম্যান্স টিমে ডাক পাওয়ার মাপকাঠি হলে তো সচিন তেন্ডুলকর, অনিল কুম্বলেরা এখনও খেলে যেত। যুবরাজের প্রচুর ফ্যান আছে, জানি। তাঁদের বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, যুবরাজের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার একদম শেষ। গৌতম গম্ভীর বা বীরেন্দ্র সহবাগের মতোই। শেষের দু’জনের টিমে না থাকাটা এখন যতটা প্রত্যাশিত, যুবরাজেরটাও তাই।
বাংলাদেশ সফরের দল
বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), মুরলী বিজয়, শিখর ধবন, কে এল রাহুল, চেতেশ্বর পূজারা,
অজিঙ্ক রাহানে, রোহিত শর্মা, ঋদ্ধিমান সাহা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, হরভজন সিংহ, কর্ণ শর্মা,
ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব, বরুণ অ্যারন, ইশান্ত শর্মা।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (অধিনায়ক), রোহিত শর্মা, অজিঙ্ক রাহানে, শিখর ধবন, বিরাট কোহলি,
সুরেশ রায়না, অম্বাতি রায়ডু, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল,
ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব, মোহিত শর্মা, স্টুয়ার্ট বিনি, ধবল কুলকার্নি।