চর্চায়: লাল-হলুদ ক্লাবের ক্ষমতায় থাকা ত্রয়ী। (বাঁ দিক থেকে) দেবব্রত সরকার, কল্যাণ মজুমদার ও প্রণব দাশগুপ্ত।
চুক্তি নিয়ে লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের ক্রমাগত বাড়তে থাকা বিবাদের জেরে অন্ধকারে লাল-হলুদের ভবিষ্যৎ।
নতুন লগ্নিকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শেষ মুহূর্তে লাল-হলুদের আইএসএলে প্রবেশ লক্ষ লক্ষ সমর্থকদের উৎকণ্ঠা দূর করেছিল। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে প্রাথমিক চুক্তিও হয়েছিল লগ্নিকারী সংস্থা ও ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু চূড়ান্ত চুক্তিতে সই করার প্রশ্ন উঠতেই লাল-হলুদ কর্তারা অভিযোগ করতে শুরু করেছেন, প্রাথমিক ও চূড়ান্ত চুক্তির মধ্যে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, অসঙ্গতি থাকলে শুরুতেই কেন কর্তারা সে কথা তোলেননি।
লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা গত ২৪ মার্চ প্রথম চিঠি দেন ইস্টবেঙ্গলকে। সেই সঙ্গে পাঠান প্রাথমিক ও চূড়ান্ত চুক্তিপত্রের খসড়া। কোথায় অসঙ্গতি রয়েছে, তা দ্রুত জানাতে বলেন। এক মাস চার দিন পরে সেই চিঠির জবাব দিলেও লাল-হলুদের কর্তারা উল্লেখ করেননি, প্রাথমিক ও চূড়ান্ত চুক্তিপত্রের মধ্যে কী কী অসঙ্গতি রয়েছে। তবে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানসূত্র খোঁজার। এর পরে ১২ মে লগ্নিকারী সংস্থার তরফে দ্বিতীয় বার চিঠি দেওয়া হয়। তার প্রেক্ষিতে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয়, ১৭ অক্টোবরেই জানানো হয়েছিল প্রাথমিক ও চূড়ান্ত চুক্তিপত্রের মধ্যে কী কী অসঙ্গতি রয়েছে। বলা হয়, ফুটবল স্বত্ব যে-হেতু লগ্নিকারী সংস্থার কাছে রয়েছে, তাই দল গঠন করতে কোনও সমস্যা নেই।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কেন এত দিন এই বিষয়গুলি উল্লেখ করেননি ক্লাব কর্তারা? এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ বাড়ছে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যেও। এই অচলাবস্থার জন্য আঙুল উঠছে তিন প্রধান কর্তার দিকে। এঁরা হলেন, সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত। পেশায় তিনি চিকিৎসক। সচিব কল্যাণ মজুমদার। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। আর এক জন দেবব্রত সরকার। কোনও পদে নেই তিনি। কর্মসমিতির সাধারণ সদস্য। সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়ে হাজতবাস করে আসা এই শীর্ষ কর্তার কথাতেই ক্লাবের সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ সমর্থকদের একাংশ অভিযোগও তুলছে। দেবব্রতবাবু প্রধান কর্তা থাকার সময়েই একের পর এক লগ্নিকারী সংস্থা লাল-হলুদ ক্লাবের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে বলেও কথা উঠেছে। কোয়েস ছেড়ে চলে গিয়েছে। মোহনবাগানের সঙ্গে জোট তৈরি করা এটিকে ইচ্ছাপ্রকাশ করেও পিছিয়ে এসেছে। এখন শ্রী সিমেন্টও ধৈর্য হারানোর মুখে। এমনও শোনা যাচ্ছে যে, আইএসএলে খেলাই অনিশ্চিত ইস্টবেঙ্গলের। আইএসএল কর্তৃপক্ষ না কি বিকল্প হিসেবে কোন ক্লাবকে নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে।
কী অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করেছেন ইস্টবেঙ্গলের কর্তারা? তাঁদেরদাবি, প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী প্রথম দু’বছরের মধ্যে একতরফা ভাবে লগ্নিকারী সংস্থা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কিন্তু চূড়ান্ত চুক্তিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের পরেও লগ্নিকারীর হাতেই বিচ্ছেদের রাশ থাকবে। দুই) ইস্টবেঙ্গল প্রতীকের মালিকানা নাকি থাকবে লগ্নিকারী সংস্থার অধীনেই। ক্লাবকে কোনও সমাজসেবা মূলক কাজের জন্যও তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে। তিন) ক্লাব তাঁবু ব্যবহারের জন্য লাল-হলুদ কর্তাদের আগাম অনুমতি নিতে হবে লগ্নিকারী সংস্থার কাছ থাকে।
যদিও ইস্টবেঙ্গলের দাবিকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা। তাঁরা পরিষ্কার বলে দিলেন, “প্রাথমিক ও চূড়ান্ত চুক্তির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হলে প্রথম দু’বছর কোনও পক্ষই সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে না। ৭৬ শতাংশের মালিক শ্রী সিমেন্ট। ২৪ শতাংশ ইস্টবেঙ্গলের। চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত কিছুই শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কাছে থাকবে।এর মধ্যে ক্লাবের প্রতীকও রয়েছে। যাকে বলা হয় ইন্টেলেকচ্যুয়াল অ্যাসেট্স। এই বোর্ডে ক্লাবের তরফেও দু’জন প্রতিনিধি থাকার কথা।” আরও বললেন, “আমরা যদি কখনও ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করি, সেক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্ব অন্য যে সংস্থার কাছে যাবে, তারাইপাবে সমস্ত স্বত্ব। এটাই নিয়ম। সর্বত্র এ ভাবেই হয়।” যোগ করেন, “ওঁরা তো সব দেখেই প্রাথমিক চুক্তিতে সই করেছিলেন। শুধু তাই নয়, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ইস্টবেঙ্গলের কর্মসমিতির বৈঠকে তা পাশও করিয়েছিলেন। তা হলে এখন কেন আপত্তি তুলছেন?”