প্রতীকী ছবি।
আইএসএল না আই লিগ, আগামী মরসুমে কোথায় খেলবে ইস্টবেঙ্গল তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে লগ্নিকারী সংস্থার চেয়ারম্যান অজিত আইজ্যাকের একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে ই-মেল করে তিনি জানান, ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সরকারি ভাবে তাঁদের এখনও বিচ্ছেদ হয়নি। তাই কোনও ভাবেই যেন ইস্টবেঙ্গলকে ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের জন্য অন্য কোনও নামে নথিভুক্ত করতে না দেওয়া হয়। অর্থাৎ, লগ্নিকারী সংস্থার ছাড়পত্র ছাড়া কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না লাল-হলুদ ক্লাব।
লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়? ক্লাব কর্তারা জানিয়েছিলেন, বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত সব মিটে যাবে। লগ্নিকারী সংস্থা কোয়েসের চেয়ারম্যান অজিত আইজ্যাক সোমবার বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে বললেন, ‘‘আমাদের তো পরিকল্পনাই ছিল, মে মাসের শেষেই স্পোর্টিং রাইটস ইস্টবেঙ্গলকে ফিরিয়ে দেওয়ার। ইতিমধ্যেই বিচ্ছেদের চুক্তি (টার্মিনেশন অব এগ্রিমেন্ট) আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। ইস্টবেঙ্গল এখনও তাতে সই করেনি। এই কারণেই এআইএফএফ-কে চিঠি দিয়ে সব জানিয়েছিলাম।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল যে দিন বিচ্ছেদের চুক্তিতে সই করে পাঠিয়ে দেবে, সে দিনই স্পোর্টিং রাইটস ওদের দিয়ে দেব। কোনও সমস্যাই হবে না।’’
বিচ্ছেদের চুক্তিতে সই কেন করছেন না? ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারের যুক্তি, ‘‘ওরা বিচ্ছেদের চুক্তিপত্র পাঠিয়ে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাতে সই করার আগে ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা করছি। কারণ, ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের অনেক নিয়মকানুন রয়েছে। আশা করছি, দু’-তিন দিনের মধ্যেই বিচ্ছেদের চুক্তিতে সই করে পাঠিয়ে দিতে পারব।’’
বছর দু’য়েক আগে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে বেঙ্গালুরুর এই সংস্থা। চুক্তি অনুযায়ী ৭০ শতাংশ মালিকানা তাদের। বাকি তিরিশ শতাংশের অংশীদারিত্ব ইস্টবেঙ্গলের। স্পেনীয় কোচ, ফুটবলারদের এনে ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হয়েছিল জুটির পথ চলা। কিন্তু মধুচন্দ্রিমা বেশি দিন স্থায়ী হল না। ময়দানে গুঞ্জন, নিজেদের অংশীদারিত্ব ছাড়ার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিরাট পরিমাণ অর্থ দাবি করছে লগ্নিকারী সংস্থা। যদিও সেই দাবি মানতে রাজি নন সংস্থার শীর্ষ কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের কাছে আমরা কোনও অর্থ দাবি করিনি। বরং আমরা চেষ্টা করছি, ঐতিহ্যশালী এই ক্লাবের জন্য ভাল বিনিয়োগকারী খোঁজার।’’
যদিও ওয়াকিবহাল মহলের খবর, কোচ নিয়োগ থেকে ফুটবলার চয়ন, একাধিক বিষয় নিয়ে দু’পক্ষে মতবিরোধ দেখা দিচ্ছিল। অভিযোগ, বিনিয়োগকারীরা মোটা টাকা লগ্নি করলেও ক্লাবের অন্দরমহলে কয়েক জন কর্তা রাশ নিজেদের হাতে রাখতে চাইছিলেন। কোচ এবং দলের ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছে। সব মিলিয়ে সংঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল। ক্রীড়া বাণিজ্য মহলে কারও কারও মত, ইস্টবেঙ্গলের মতো ঐতিহ্যশালী ক্লাবে লগ্নিকারী সংস্থা এসেও চলে যাওয়াটা বঙ্গ ফুটবলের ভাল বিজ্ঞাপন নয়।
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা এত দ্রুত শেষ হওয়ার কারণ কী? সতর্ক লগ্নিকারী সংস্থার কর্তার অবশ্য সরকারি ভাবে ব্যাখ্যা, ‘‘ইস্টবেঙ্গল অসাধারণ ক্লাব। ব্যক্তিভাবে আমি মনে করি, ভারতীয় ফুটবলের লিভারপুল হল ইস্টবেঙ্গল। তবে এক কথায় এই বিচ্ছেদের কারণ ব্যাখ্যা করা কঠিন। এটুকু বলতে পারি, এই মুহূর্তে ফুটবলে বিনিয়োগ করাটাকে আমরা সে ভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছি না। তাই সরে যাচ্ছি।’’