উল্লাস: শিলিগুড়ির ডার্বিতে তিনি এগিয়ে দিলেন দলকে। ফ্রি-কিক থেকে গোলের পরে সনি নর্দেকে নিয়ে উচ্ছ্বাস সতীর্থদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
বিরতিতে ইস্টবেঙ্গল যখন ০-২ পিছিয়ে তখন দশ বছর আগের একটা ডার্বি ম্যাচের কথা মনে পড়ছিল।
সে বার আমি ইস্টবেঙ্গলে। কলকাতা লিগের ম্যাচে মোহনবাগানের কাছে আমরা ০-৩ হারছিলাম। বিরতিতে আমাদের তখনকার কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য আর কিছু কর্তা এমন তাতিয়েছিলেন যে আমরা পরের অর্ধে ম্যাচটা ৩-৩ করে ফেলি। যদিও শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছিলাম ৩-৪ ফলে।
ডার্বির প্রিভিউ-তেও লিখেছিলাম পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল ভয়ঙ্কর। কিন্তু রবিবার টিভিতে ম্যাচটা দেখার পর মনে প্রশ্ন জাগছে, ফুটবলার জীবনে যে কথাটা বিশ্বাস করতাম, সেটা কি এখন বদলে গিয়েছে? পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল কি এখন আর ভয়ঙ্কর নয়? ড্রেসিংরুমে কি মেহতাবদের তাতানোর মতো কর্তা বা কোচ কেউ-ই কি আর নেই?
না হলে যে সময়টায় তেড়েফুড়ে ম্যাচে ফেরার কথা মর্গ্যানের টিমের। তখন ওরা অহেতুক ধাক্কাধাক্কি করে যেমন সময় নষ্ট করল, তেমনই মাথা গরম করে হারিয়ে গেল ম্যাচ থেকেও।
খেলাটা শেষ হওয়ার পর মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা তৃপ্তি হচ্ছিল। সেটা যতটা না সনি নর্দের ওই ফ্রি-কিক থেকে বিশ্বমানের গোলটার জন্য, তার চেয়েও বেশি বড় ম্যাচে এক বঙ্গসন্তানকে গোল করে নায়ক হতে দেখায়। মনে করার চেষ্টা করছিলাম, শেষ কবে একজন বঙ্গসন্তানকে ডার্বি ম্যাচে গোল করে নায়ক হতে দেখেছি।
আজহারউদ্দিন মল্লিক দু’বছর মোহনবাগানে খেলে ফেললেও রবিবার রাতের আগে কিন্তু তারকা ছিল না। বড় ম্যাচে গোল করে এ বার কিন্তু তারকা হয়ে গেল। ডার্বিতে রবিবার যে গোলটা ও করল, তা বহুদিন মনে থাকবে। আমাদের খেলোয়াড় জীবন থেকে একটা কথা জানি, বড় ম্যাচে তারকার জন্ম হয়। রবিবার ছিল আজহারের তারকা হিসেবে আবির্ভাবের দিন।
গোলটার সময় মেহতাব ওকে ট্যাকল করতে দেরি করেছিল। বুদ্ধিমান আজহার এই সুযোগেই দেখে নেয় রেহনেশ গোল ছেড়ে এগিয়ে এসেছে। তার পরেই গোলের যে দুরুহ কোণে ও বলটা রাখল সেটা দেখে পনেরো বছর আগের এক বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোনাল্ডিনহোর সেই গোলটা মনে পড়ল। একটাই তফাত রোনাল্ডিনহো সে দিন গোলটা করেছিল ফ্রি-কিক থেকে। আজহারের ক্ষেত্রে চলতি বলেই গোলটা এল!
শিলিগুড়িতে আরও একটা ব্যাপার ঘটল এ দিন। ডার্বি ম্যাচে এত দিন কোনও গোল ছিল না সনি নর্দের। ফ্রি-কিক থেকে ইনসুইঙ্গার মেরে ওর বিশ্বমানের গোলটাই এ দিন ম্যাচের শুরুতে তাতিয়ে দিয়েছিল মোহনবাগানকে। ম্যাচের প্রিভিউতে লিখেছিলাম, মোহনবাগান সেট পিসে ভয়ঙ্কর। সনির গোলের সময় সেটাই হতে দেখলাম। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ এবং মাঝমাঠ কেন গোলের সামনে ওই বিপজ্জনক জায়গায় সনিকে ফাউল করল সেটা বুঝলাম না।
ইস্টবেঙ্গল কোচের দল গঠনটাই আমার কাছে ঠিকঠাক লাগেনি। অবিনাশ ও রোমিওকে দুই উইংয়ে রেখে আক্রমণে যদি উনি ঝড়ই তুলতে চাইবেন, তা হলে সনির গোলের পরই অবিনাশকে তুলে নিলেন কেন? আর তার বদলে যাকে নামালেন সেই পেইন ইস্টবেঙ্গল জার্সি গায়ে দেওয়ার যোগ্য বলেই মনে হয় না। আনফিট চেহারা নিয়ে ও মারপিট করে গেল বাকি ম্যাচটা। গোটা ম্যাচে মোহনবাগান রক্ষণে ওপেন-ই করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। এ রকম ছন্নছাড়া ফুটবল খেলে কখনও ডার্বি জেতা যায় না। শেষ বেলায় রওলিন গোলটা করল বটে, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন...
বাগানে ফুল ফুটিয়ে ডার্বিতে উদয় ফুটবলের আজ্জুর
মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন সেখানে প্রণয় না থাকায় বুদ্ধি করে দলটা নামিয়েছিলেন। ডাফির সঙ্গে বলবন্তকে আক্রমণে জুড়ে দেওয়া ম্যাচে সঞ্জয় সেনের একটা মাস্টারস্ট্রোক। সবুজ-মেরুনের দুই স্ট্রাইকার শুরু থেকেই বুকেনিয়াদের তাড়া করায় চাপ বেড়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলে।
আসলে মোহনবাগান যখন আই লিগের বিরতিতে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ইস্টবেঙ্গলে ছুটির মেজাজ। মোহনবাগান তার পর বেঙ্গালুরু এবং আবাহনীকে হারিয়ে ছন্দটাও পেয়ে গিয়েছিল। মর্গ্যানের সেখানে উচিত ছিল সাদার্ন বা মহমেডান বা বাংলা দলের সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ কেলে টিমটাকে ছন্দে আনা। তাই এ দিন ইস্টবেঙ্গলকে এ দিন পুরনো ছন্দে দেখা যায়নি।
এই ম্যাচ জিতে আই লিগ জয়ের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেল মোহনবাগান। সেখানে মর্গ্যানের কাছে আই লিগ সেই আগের মতো হয়তো অধরা থেকে গেল এ বারও।