দিনরাতের টেস্ট চলবে, লোক টানতে বিনোদন জরুরি: সৌরভ

প্রশ্ন এখন, ইডেন কি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডের মতো আলাদা করে দিনরাতের টেস্টের জন্য চিহ্নিত হয়ে থাকতে পারে? ইডেনের ক্লাব হাউসের তিন তলার বক্সে বসে বাংলাদেশের বিপর্যয় দেখতে দেখতে সৌরভ জবাবে বললেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় যেটা হয়, সেটা এখানে করা সম্ভব নয়। আমাদের পাকাপাকি টেস্ট কেন্দ্র নেই।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০২
Share:

তৃপ্ত: ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনায় অভিভূত সৌরভ। ফাইল চিত্র

ইতিহাস সৃষ্টিকারী গোলাপি বলে প্রথম দিনরাতের টেস্ট আয়োজন করে ফেললেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখনও জানেন না, প্রত্যেক বছর ইডেনে এমন ম্যাচ করা যাবে কি না। ১ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা রয়েছে। সেখানে দিনরাতের টেস্টের সাফল্য নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কোনও সন্দেহই থাকছে না যে, ভারতীয় ক্রিকেটে গোলাপি বলের টেস্ট নিয়মিত ভাবে ঢুকে পড়তে চলেছে।

Advertisement

প্রশ্ন এখন, ইডেন কি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডের মতো আলাদা করে দিনরাতের টেস্টের জন্য চিহ্নিত হয়ে থাকতে পারে? ইডেনের ক্লাব হাউসের তিন তলার বক্সে বসে বাংলাদেশের বিপর্যয় দেখতে দেখতে সৌরভ জবাবে বললেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় যেটা হয়, সেটা এখানে করা সম্ভব নয়। আমাদের পাকাপাকি টেস্ট কেন্দ্র নেই। রোটেশনে টেস্ট ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব জায়গায় দেওয়া হয়। তাই আলাদা করে কোনও একটি কেন্দ্রকে দিনরাতের টেস্টের জন্য বেছে রাখা যাবে কি না, জানি না।’’ সৌরভ নিজেই নতুন করে গঠিত বোর্ডের কর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে অমিত শাহ পুত্র জয় শাহ থেকে শুরু করে অনুরাগ ঠাকুরের ভাই অরুণ ঠাকুর, ব্রিজেশ পটেল-রা ছিলেন। তাঁরা সকলেই দেশের প্রথম দিনরাতের টেস্টের প্রথম দিনের ইডেন দেখে উচ্ছ্বসিত। সহজে কি তাঁরা কেউ নিজেদের মাঠে দিনরাতের টেস্ট করার সুযোগ ছেড়ে দেবেন? বরং ধরেই নেওয়া যায়, এই সাফল্য দেখার পরে সকলেই ঝাঁপাবেন তাঁদের রাজ্যে এমনই ক্রিকেট উৎসব করার লক্ষ্যে।

সৌরভ বোর্ড প্রেসিডেন্টের ঢংয়ে এক বার বলেও ফেললেন, ‘‘অন্যরা উৎসাহিত হয়ে যদি করতে চায় তো ভালই। সেটাকে স্বাগতই জানানো উচিত।’’ দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘সব সিরিজে হয়তো ইডেনে দিনরাতের টেস্ট করা যাবে না। এখানে রোটেশনে টেস্ট আয়োজনের দায়িত্ব হয়। আমরা এটা করলাম। পরের বারেরটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’’ বোর্ডের আদিকালের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক অঞ্চলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফেলা হয়। অস্ট্রেলিয়াতে যেমন পাকাপাকি টেস্ট কেন্দ্র রয়েছে, সেই প্রথা এখানে নেই। সৌরভ যদিও বলে দিচ্ছেন, ‘‘তবে দিনরাতের টেস্ট এখন থেকে ভারতে হবে। এ নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। ইডেনে দু’দিনের খেলায় দর্শক উপস্থিতি দেখার পরে সকলেই বুঝতে পেরেছে, মাঠে লোক টানতে গেলে এ রকম কিছু ভাবতে হবে। বোর্ডের মধ্যে অনেকেই দিনরাতের টেস্টের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী।’’

Advertisement

ভারতীয় ক্রিকেট দল এত দিন রাজি ছিল না গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট খেলতে। গত অস্ট্রেলিয়া সফরেই কোহালিরা অ্যাডিলেডে খেলতে রাজি হননি। পরের বছর শেষের দিকে ফের অস্ট্রেলিয়া সফর রয়েছে। তখন যে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড কোহালিদের ফের দিনরাতের টেস্ট খেলার জন্য চাপ দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তখন বোর্ড প্রেসিডেন্টের অবস্থান কী হবে? সৌরভ বললেন, ‘‘দেখা যাক। টিমের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব। বিরাটের সঙ্গে কথা বলব। এখনও তো সেই সফরের অনেক দেরি আছে।’’ গোলাপি বল নিয়ে নানা সংশয় আর প্রশ্ন উঠেছিল। সৌরভ বলে দিচ্ছেন, ‘‘লাল বলের সঙ্গে কী পার্থক্য রয়েছে? সবই তো ঠিকঠাক চলছে। বিরাট এত সুন্দর, সাবলীল ব্যাট করে গেল।’’ গোলাপি বল দেখতে অসুবিধা হয় বলে কারও কারও মত। শুনে বোর্ড প্রেসিডেন্টের সংযোজন, ‘‘কই আমি তো সে রকম কিছু টের পেলাম না। কোনও তফাতই বুঝতে পারলাম না।’’ শনিবার গোধূলিতে কি বল বেশি সুইং করছিল? ফের গোলাপি বলের পক্ষে সওয়াল সৌরভের, ‘‘এটুকু সুইং তো যে কোনও নতুন বলে হতেই পারে। এটুকু তো খেলতেই হবে। আমি মনে করি না গোলাপি বলে কোনও কিছু অতিরিক্ত উদ্বেগজনক হচ্ছে। যাতে একদম খেলাই যাবে না।’’

বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েই রাতারাতি তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইডেনেই মহাযজ্ঞের আয়োজন করবেন। কী ভাবে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন? প্রেসিডেন্ট বক্সের সামনের লোয়ার টিয়ার গ্যালারি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে লোকজন তত ক্ষণে প্রাক্তন অধিনায়কের ছবি তুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের দিকে হাত নেড়ে সাড়া দিয়ে সৌরভের জবাব, ‘‘আর উপায়ও তো ছিল না। এর পর দেশের মাটিতে অনেক দিন তো টেস্ট ম্যাচই নেই। কত দিন অপেক্ষা করতে হত কে জানে। তার চেয়ে এই ভাল হল যে, আমরা দেখে নিতে পারলাম।’’

যা দেখলেন, তাতে যে তিনি ভীষণই উৎসাহী তা নিয়ে সন্দেহ নেই। দেশের প্রথম দিনরাতের টেস্ট আয়োজন তো করলেনই, সঙ্গে দুর্দান্ত বিনোদনের প্যাকেজও রেখেছিলেন প্রথম দিনে। সচিন তেন্ডুলকর, অনিল কুম্বলে, ভি ভি এস লক্ষ্মণ, হরভজন সিংহদের নিয়ে মাঠের মধ্যে টক শো। রাহুল দ্রাবিড় পরে আসায় তাতে যোগ দিতে পারেননি। না হলে তিনিও থাকতেন। প্রাক্তন অধিনায়কদের গল‌্ফ কার্টে করে ইডেন ঘোরানো হল। শেষ হল রুনা লায়লার গান দিয়ে। এটাই কি তা হলে ইডেনে ক্রিকেটের নতুন মোড়ক হয়ে থাকছে? যেখানে ক্রিকেটের সঙ্গে থাকবে বিনোদন? সৌরভের উত্তর, ‘‘বাজার ধরার ব্যাপারটা বুঝতে হবে। মানুষ কষ্ট করে মাঠে আসছে খেলা দেখতে। ক্রিকেটের পাশাপাশি যদি অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা যায়, মাঠে আসার আকর্ষণটা বাড়বে।’’

কথা বলার সময় ভারতীয় পেসারদের বোমাবর্ষণ চলছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উপরে। উইকেট তো পড়ছেই, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মাথায় বারবার আঘাত লাগছে। রীতিমতো ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে যে, কিছু একটা দুর্ঘটনা না ঘটে যায়। সৌরভের কিন্তু মনে হচ্ছে, পেস বোলিং খেলতে সবার আগে লাগে সাহস। ময়দানী ভাষায় বললে, বুকের খাঁচা লাগবে। নিজে ক্রিকেট খেলার সময় বহু বার আঘাত পেয়েছেন। ব্রেট লি-র বল ভয়ঙ্কর ভাবে মাথার পিছন দিকে লেগেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রত্যাবর্তন সফরের কথা উঠতেই পরিষ্কার মনে করতে পারলেন, ‘‘ডেল স্টেনের বলে প্রথমেই হেলমেটে খেলাম।’’ নিজেকে সামলাতে এ সব ক্ষেত্রে কী লাগে? সৌরভ বললেন, ‘‘সাহস। সচিনেরও তো কত বার লেগেছে। কিন্তু ফের ক্রিজে দাঁড়িয়ে পরের বলটা বুক চিতিয়েই খেলেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement