একরাশ মন খারাপ, দুঃখ আর কান্নার মধ্যে অসম্ভব আবেগপূর্ণ পরিবেশে শুরু হতে চলেছে সিরিজের প্রথম টেস্ট। মঙ্গলবারের অ্যাডিলেডেও ফিল হিউজকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মাঠে নামবে দু’টো টিম। সত্যি বলতে কী, গত দশ দিনে যা দেখছি, সেটা বিশ্ববাসীর চোখে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের আসনটা অনেক উঁচুতে তুলে দিয়েছে। একজন প্লেয়ারকে অতটা আন্তরিক ভাবে সম্মান জানানোয় গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে ধন্যবাদ দিতে চাই। হিউজের শেষকৃত্যে মাইকেল ক্লার্কের কথাগুলো এমন এক নেতার, যে প্রয়াত টিমমেটের জন্য নিজের হৃদয় নিংড়ে দিতে জানে। আশা করব, এর পর ক্রিকেট বিশ্বে সহ-খেলোয়াড়ের প্রতি তার জীবত্কালেও সম্মান জানানোর প্রথা চালু হবে!
ভারতীয় টিমের জন্য অবশেষে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট। আগের সূচি পাল্টে গিয়ে অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্ট হওয়াটা আমার মতে ভারতের জন্য সুখবর। এখানকার উইকেটে গাব্বার মতো অত বেশি বাউন্স আর গতি নেই। বরং তুলনায় পাটা। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা অনেক বেশি সহজে আর স্বচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে পারবে। যে কোনও বিদেশ সফরে শুরুতেই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে পারা খুব জরুরি। আর কোনও ব্যাটসম্যান যদি প্রথম দিকেই রান পেয়ে যায়, তা হলে তার ভেতরের অস্থিরতাটা কেটে গিয়ে সিরিজে সে জাঁকিয়ে বসতে পারে। একবার ছন্দ পেয়ে গেলে আর একটা সুবিধা হল, পরের দিকে পেস-সহায়ক উইকেটেও নিজের খেলার ধরন প্রয়োজন মতো বদলে নেওয়ার সাহস পাওয়া যায়। অ্যাডিলেডে সিরিজ শুরুর সুবিধেটা কাজে লাগাতে হবে।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা দারুণ ফর্মে আছে। তবে আমার ধারণা, ব্যাটিং অর্ডারে রোহিত শর্মা আসবে ছ’য়ে। রোহিতের কাছে সিরিজটা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ান ডে ম্যাচে অপার্থিব ২৬৪ করে নিজের প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা করেছে ও। কিন্তু মানতেই হবে, এখনও পর্যন্ত বিদেশের মাঠে নিজের প্রতিভার প্রতি রোহিত সুবিচার করেনি। সেই অপবাদ মুছে ফেলার সেরা সুযোগ এই সিরিজ। রোহিতকে শুধু বিশ্বাস করতে হবে যে অস্ট্রেলিয়ায় ও সফল হবে এবং এই সিরিজ থেকেই মোড় ঘুরে যাবে কেরিয়ারের।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো অসম্ভব নয়। ২০১১-য় বলেছিলাম, এখনও বলছি, এই ভারতীয় দলের সেই ক্ষমতা আছে। তবে তার জন্য ব্যাটিংটা ভাল হওয়া চাই। ২০০৩ সিরিজে আমরা দাপট দেখিয়েছিলাম কারণ প্রত্যেক বার প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বোর্ডে চারশোর বেশি রান তোলা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলার এটাই একমাত্র রাস্তা। অন্য দিকে, মাইকেল ক্লার্ককে পিঠের ব্যথা ভোগালে ওদের বাদবাকি ব্যাটিংকে ভাঙাটা কঠিন হবে না।
গত ক’বছরে বিদেশের মাঠে ভারতের টেস্ট রেকর্ড মোটেই পাতে দেওয়ার মতো নয়। এই সিরিজে সেই রেকর্ড বদলে ফেলতে চাইলে ভারতকে অবশ্য একটু অন্য ভাবে খেলার চেষ্টা করতে হবে। ভারতীয় টিমে যা সচরাচর দেখা যায় না, সেই পেস-শক্তি আছে এই টিমটার। কিন্তু পেসাররা যাতে মাঠে নেমে অনেক বেশি ফুল লেংথ বোলিং করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অস্ট্রেলীয় আবহাওয়া আর পরিবেশে তাতেই সাফল্য আসবে। এ বার অবশ্য টিমের সঙ্গে রবি শাস্ত্রীর মতো তীক্ষ্ণ ক্রিকেট বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আছে। আশা করি রবি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে টিমকে ঠিক রাস্তাটা দেখাবে। স্পিনার নির্বাচন ঠিকঠাক হওয়াও ভারতের সাফল্যের আর একটা চাবিকাঠি হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় ফিঙ্গার স্পিনারদের তুলনায় রিস্ট স্পিনাররা বেশি সফল। সেটা মাথায় রেখে কর্ণ শর্মাকে দিয়ে একটা ফাটকা কি খেলা হবে?
শেষে একটু স্বার্থপরের মতোই বলছি, গত এক সপ্তাহে যা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম টেস্টটা ভারতের সামনে দুর্দান্ত একটা সুযোগ। অস্ট্রেলিয়া টিম এখনও হিউজের মৃত্যুর ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। যা ভারত নিজেদের কাজে লাগাতে পারে।
গুড লাক ইন্ডিয়া!
শেষ শ্রদ্ধা
ফিলিপ হিউজের টেস্ট ক্যাপ নম্বরের (৪০৮) জার্সি গায়ে অ্যাডিলেড টেস্টে নামবেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা। টেস্ট শুরু হওয়ার আগে মাঠেও একই নম্বরের সামনে দাঁড়াবেন দু’দলের ক্রিকেটাররা। অ্যাডিলেড ওভালের জায়ান্ট স্ক্রিনে তখন চলবে কিংবদন্তি ধারাভাষ্যকার রিচি বেনোর ভিডিও শ্রদ্ধার্ঘ্য। মাঠে উপস্থিত সবাই এর পর ৬৩ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে সম্মান জানাবে হিউজের শেষ অপরাজিত স্কোরকে।
প্র্যাকটিসে ধোনি
পুরোদমে প্র্যাকটিসে নেমে পড়লেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আঙুলের চোট কাটিয়ে ওঠা ভারতীয় ক্যাপ্টেন রবিবার অ্যাডিলেডে নেটে ব্যাটিং, বোলিং করেন। কোচ ডানকান ফ্লেচারের সঙ্গে সারেন দীর্ঘ আলোচনাও। নতুন চুলের ছাঁট, হাতকাটা জার্সিতে ধোনির আত্মবিশ্বাস দেখে অনেকেই নিশ্চিত মঙ্গলবার থেকে শুরু প্রথম টেস্টে তিনি খেলছেন।
ওয়াটসনের হুঙ্কার
ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে মাঠে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্টে সেই আগ্রাসী অজি দলকেই দেখা যাবে। হুঙ্কার অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসনের। “আগ্রাসী ক্রিকেটেই আমরা সবচেয়ে বেশি সফল। আগ্রাসনটা এই সিরিজেও বদলাবে না। ভারতে যে যন্ত্রণাটা (গত বছর ০-৪ হার) পেয়েছি সেটা এ বার ওদের ফিরিয়ে দিতে হবে।”
অসম্ভব স্বপ্ন
এখন টেস্ট র্যাঙ্কিং ছয়। সেখান থেকে তিন নম্বরে উঠে আসতে হলে প্রায় অসম্ভব একটা কাজ করতে হবে ভারতকে। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-০ হারাতে হবে টেস্ট সিরিজে। অজিদের র্যাঙ্কিং এখন দুই। মাইকেল ক্লার্করা আবার ৪-০ জিতলে শীর্ষস্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তাঁদের রেটিং পয়েন্টের পার্থক্য কমে দাঁড়াবে চার।