প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বিশ্বজয়ীরা। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলকে নিজের বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে সকালেই মোদীর বাসভবনে গিয়েছিলেন। বেশ কিছু ক্ষণ প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে। সকলের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আড্ডার ৪০ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিয়ো শুক্রবার প্রকাশ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।
মোদী: তোমাদের সকলকে স্বাগত। তোমরা তো দেশে একেবারে উৎসব এনে দিয়েছ! দেশবাসী আশায়, অপেক্ষায় ছিল। তোমরা সেটা পূরণ করেছ। তোমাদের অনেক অনেক অভিনন্দন। আমি আসলে অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে কাজ করি। কাজ করতে করতেই তোমাদের বিশ্বকাপ জয় দেখেছি। তোমাদের দলগত সংহতি দারুণ। নিজেদের প্রতিভা দেখিয়েছ। সবচেয়ে বেশি নজর করেছি তোমাদের ধৈর্য্য। তোমাদের মধ্যে কোনও তাড়াহুড়ো ছিল না। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিলে। তোমাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।
রাহুল দ্রাবিড়: আমরা বরং প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন বলে। গত নভেম্বরে আমদাবাদে যখন ফাইনালটা হেরে গিয়েছিলাম, তখনও আপনি এসেছিলেন। তখন আমরা খুব মনমরা ছিলাম। এখন আমরা আনন্দিত। ভাল লাগছে, এই সময়টাতেও আপনার কাছে এসে। আমি শুধু বলব, রোহিত আর ছেলেরা লড়াকু মানসিকতা দেখিয়েছে, হারার আগে হারতে চায়নি। ফাইনালেও ঠিক সেই মানসিকতা নিয়েই ওরা খেলেছিল। তাই কৃতিত্বটা ওদেরই। ওরা খুব পরিশ্রম করেছিল। একে অন্যকে উৎসাহিত করেছে। ওদের অনেকেই ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয় দেখে বড় হয়েছে। দেশের বাকি ছেলে-মেয়েদের মতো এরাও সেই জয় দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। আপনাকে আবার ধন্যবাদ।
মোদী: ধন্যবাদ তো তোমাদের প্রাপ্য। এখন তোমরা দেশের যুবসমাজের কাছে অনুপ্রেরণা। ছোট ছোট ব্যাপারে দেশের মানুষকে পরামর্শ দিতে পার। তোমরা সেই অধিকার অর্জন করেছ। চহাল (যুজবেন্দ্র) তুমি এত গম্ভীর কেন? কী হল ? (সকলের এক সঙ্গে হাসি)। আমি ঠিক ধরেছি না? (আবার সকলের হাসি)।
যুজবেন্দ্র চহাল: (হাসতে হাসতে) না, না।
মোদী: আমি জানি, হরিয়ানার লোকেরা যে কোনও পরিস্থিতিতে খুশি থাকে। ওরা সব কিছুর মধ্যেই একটা আনন্দ খুঁজে নেয় (সকলের হাসি)।
মোদী: (রোহিত শর্মার পিচের মাটি খাওয়ার ভিডিয়ো দেখতে দেখতে) রোহিত তখন তোমার ঠিক কী মনে হচ্ছিল? যেখানকারই পিচ হোক, ওই জমি আর মাটিই হল ক্রিকেটের জীবন। তুমি ক্রিকেটের সেই জীবনকে চুম্বন করেছ। এ জিনিস ভারতীয়রা ছাড়া আর কেউ পারবে না।
রোহিত: আসলে জেতার মুহূর্তটা সারা জীবন মনে রাখতে চেয়েছিলাম। যে মাটিতে বিশ্বকাপ জিতেছি, সেই মাটির স্বাদ নিতে ইচ্ছে করছিল। আর কিছু নয়। ওই পিচেই আমরা খেলেছি। ওই পিচেই জিতেছি। সকলে এই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করেছিল। প্রচুর পরিশ্রমও করেছিল। আমরা অনেক বার বিশ্বকাপ জেতার খুব কাছাকাছি এসেছি। কিন্তু ট্রফিটা ছুঁতে পারিনি। এ বার সকলের জন্য আমরা ট্রফিটা জিতেছি। (বুকে হাত রেখে) তাই ওই পিচটা আমার কাছে অন্য রকম। সেই মুহূর্তে হঠাৎই ওটা করে ফেলেছিলাম। সে দিন আমাদের ওই পরিশ্রম সার্থক হয়েছিল।
মোদী: রোহিত, দুটো ঘটনায় তোমার বাড়তি আবেগ দেখেছি। একটা তো ওই পিচের মাটি খাওয়া। আর একটা তোমার ট্রফি নিতে যাওয়ার সময়ের নাচটা (সকলের হাসি)।
রোহিত: আসলে আমাদের সকলের জন্য ওই মুহূর্তটা বিশাল ছিল। এত বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। সকলে আমাকে বলেছিল, শুধু হেঁটে গিয়ে কাপটা নিও না। একটু অন্য রকম কিছু চাই (সকলের হাসি)।
মোদী: (হাসতে হাসতে) এটা নিশ্চয়ই চহালের বুদ্ধি ছিল?
পাশ থেকে কেউ এক জন: চহাল আর কুলদীপ (যাদব)।
(হাসলেন মোদী)
মোদী: (ঋষভ পন্থের দিকে তাকিয়ে) তোমার সেরে ওঠার পথটা কঠিন ছিল । তার উপর তুমি খেলোয়াড়। সে হিসাবে তো আরও বেশি কঠিন। এত কম সময়ের মধ্যে কেউ সেরে উঠতে পারে! তুমি প্রচুর পোস্ট করতে তখন। দেখতাম সেগুলো। তুমি বলতে, আজ কতটা করতে পারলে, কী কী করলে।
(পন্থের রিহ্যাবের নানা মুহূর্ত ভিডিয়োতে)
ঋষভ পন্থ: আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে ডেকেছেন। দেড় বছর আগে দুর্ঘটনাটা হয়েছিল। দিনটা এখনও মনে আছে। আপনি আমার মাকে ফোন করেছিলেন। তখন আমি প্রবল চিন্তিত। আপনার সঙ্গে কথা বলার পর মা আমাকে জানিয়েছিল, আপনি বলেছিলেন চিন্তা না করতে। কোনও সমস্যা হবে না। সেটা শোনার পরে একটু স্বস্তি পেয়েছিলাম। যখন সেরে উঠছি, তখন অনেক কিছু কানে আসত। শুনতাম অনেকে বলছে, আমি আর কোনও দিন ক্রিকেট খেলতে পারব না। আমি উইকেটকিপার বলে বেশি কথা হত। অনেকে বলত, ব্যাটার হলে তবু একটা কথা। ব্যাটিং না হয় করতে পারব, কিন্তু উইকেটকিপিং কি আর করতে পারব? শেষ দেড়-দু’বছর ধরে শুধু চেষ্টা করে গিয়েছি। মাঠে ফিরতে চেয়েছি। ভেবেছি, আগে যা খেলেছি, মাঠে ফেরার পর তার চেয়েও ভাল খেলতে হবে। অন্য কারও জন্য নয়, নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আবার দেশের হয়ে খেলতে হবে। দেশকে জেতাতে হবে।
মোদী: তুমি সুস্থ হয়ে ওঠার সময় তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তার আগে চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। ওঁদের জিজ্ঞাসা করছিলাম, কেমন বুঝছেন? বলেছিলাম, তোমাকে চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হলেও যেন তাঁরা বলেন। তা হলে সে ভাবে ভাবব। তবে তোমার মায়ের আত্মবিশ্বাস দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, উল্টে উনিই আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন (হাসতে হাসতে)। অথচ ওঁর সঙ্গে আমার তো পরিচয়ই ছিল না (সকলের হাসি)। সেটা আমাকে অবাক করেছিল। তখনই বুঝেছিলাম, যে এমন মা পেয়েছে, তার কোনও চেষ্টা বিফল হতে পারে না। সেটা তুমি করে দেখিয়েছ। পরে তোমার সঙ্গে কথা বলেও অবাক হয়েছিলাম। তুমি স্বীকার করে নিয়েছিলে, দুর্ঘটনার জন্য কারও দোষ নেই। সব দোষ তোমারই। অন্য কেউ হলে নানা অজুহাত দিত। বলত রাস্তায় গর্ত ছিল। বা অন্যকিছু। তুমি কিন্তু সেগুলো বলোনি। জীবনকে সহজ ভাবে নিতে পার বলেই নিজের দোষটা বলতে পেরেছিলে। সকলের মধ্যে ছোট ছোট অনেক কিছু দেখি। সকলের থেকে শিখি। সত্যি বলছি, এক জন মানুষ হোক বা খেলোয়াড়, সে তোমার থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। জানি, উইকেটকিপারদের অনুশীলন কত কঠিন! তুমি সেই লড়াই জিতেছ। খুব বড় কাজ করেছ। অভিনন্দন।
ঋষভ: ধন্যবাদ স্যর।
মোদী: (বিরাট কোহলির ফাইনালের ইনিংসের ভিডিয়ো দেখিয়ে) জীবনে অনেক উত্থান-পতন আসে। কিন্তু দীর্ঘ সাধনার ফল ঠিক কাজে লাগে। (বিরাটের দিকে তাকিয়ে) তুমি খেলার জন্য যে সাধনা করেছ, ঠিক সময়ে তার ফল পেয়েছ। বিরাট, এ বার তো তোমায় অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।
কোহলি: আমাদের এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। ওই দিনটা আজীবন মনে থাকবে। আমি যে ভাবে চাইছিলাম, বিশ্বকাপের শুরু থেকে সে ভাবে খেলতে পারছিলাম না। রাহুলভাইকে বলেছিলাম, দল আর নিজের প্রতি সুবিচার করছি না। উনি বলেছিলেন, উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে ঠিক পারফর্ম করতে পারব। এটুকুই কথা হয়েছিল। ফাইনালে খেলতে নামার আগে রোহিতকেও একই কথা বলেছিলাম। কারণ, যে ভাবে খেলছিলাম, তাতে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম না। ফাইনাল শুরুর পর প্রথম চার বলে তিনটে চার মারলাম। উল্টোদিকে রোহিতকে গিয়ে বললাম, আরে! কী অদ্ভুত! এক এক দিন মনে হচ্ছে, একটা রানও করতে পারব না। আর আজ যেমন চাইছি, তেমনই হচ্ছে! কয়েকটা উইকেট পড়ার পর মনে হল, আমায় একটু ধরে খেলতে হবে। বুঝে-শুনে ব্যাট করতে হবে। তখন দলের ওটাই দরকার। সেইমতোই খেলার চেষ্টা করছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমায় ওই পরিস্থিতিটার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কেন মনে হচ্ছিল, তার ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারব না। তবে মনে হচ্ছিল, আমি পরিস্থিতির হাতে বন্দি! পরে বুঝলাম, যেটা হওয়ার সেটা ঠিক হবে। শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে, সেটাও হওয়ারই ছিল। আপনি খেলাটা দেখলে বুঝতে পারবেন, কী ভাবে আমরা জিতেছি! শেষ দিকে ম্যাচটা আমাদের পক্ষে ছিল না। প্রতিটা বলে মনে হচ্ছিল, আমরা জীবন ফিরে পাচ্ছি। সেখান থেকে ম্যাচটা ঘুরে গেল। মনের ভিতর তখন কী চলছিল, বলে বোঝাতে পারব না (হেসে ফেললেন মোদী)। প্রতিটা বলে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে! একটা সময় ম্যাচটা প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। তার পর হার্দিক (পাণ্ড্য) উইকেট নিল। একটা করে বল হচ্ছিল আর মনে হচ্ছিল, প্রাণ ফিরে পেলাম। এমন একটা বিশেষ দিনে পারফর্ম করতে পেরে আমি খুশি। সেটাও একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরে। ফাইনালে দলকে একটা লড়াই করার মতো রানের জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। সেটা খুব স্বস্তির।
মোদী: ফাইনালের আগে এই বিশ্বকাপে তোমার মোট রান ছিল ৭৫। আর শুধু ফাইনালেই করলে ৭৬! খারাপ সময়ে অনেকে অনেক কিছু বলে। সেগুলো চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। বাড়ির লোকেরা কী বলেছিলেন তখন?
বিরাট: ভারত আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মধ্যে সময়ের ফারাক অনেকটা। তাই পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুব একটা হত না। আসলে মা খুব টেনশন করেন। আমি খেলাটা ঠিকঠাক হচ্ছিল না। অনেক সময় আমাদের মনে হয়, আরে! এ আর এমন কী! একটা অহঙ্কার কাজ করে। তখন খেলাটা দূরে চলে যায়। সেই মানসিক অবস্থাটা বদলানোর প্রয়োজন ছিল। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী খেলব বলে ঠিক করেছিলাম। দলের স্বার্থে নিজের অহঙ্কার বিসর্জন দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ক্রিকেটকে যথাযথ সম্মান দিয়ে খেলতে নেমেছিলাম। ক্রিকেটও আমাকে তার প্রতিদান দিয়েছে। এ রকমই হয়। এ বার এই অভিজ্ঞতাটা হল।
মোদী: (বুমরার বোলিংয়ের ভিডিয়ো দেখিয়ে বুমরার দিকে তাকিয়ে) অভিনন্দন পা’জি!
বুমরা: ভারতের হয়ে সব সময় কঠিন পরিস্থিতিতেই বল করতে হয়। নতুন হোক বা পুরনো বল, চাপের মধ্যেই বল করতে হয়। তখন দলকে সাহায্য করতে পারলে খুব ভাল লাগে। কঠিন জায়গা থেকে ম্যাচ বার করলে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়। সেটা নিয়ে পরের ম্যাচগুলো খেলার চেষ্টা করি। এই বিশ্বকাপে কয়েক বার এমন পরিস্থিতি এসেছে, যখন আমাকে ভাল বল করতেই হত। সে সব সময়ে দলকে জেতাতে পেরেছি।
মোদী: ক্রিকেট ম্যাচে ৯০-এর ঘরে পৌঁছে গেলে ব্যাটারেরা সতর্ক হয়ে যায়। আচ্ছা, হার-জিতটা যখন শেষ ওভারেও ঝুলে থাকে, তখন কী মনে হয়? হাতে শুধু একটা বল! সেটাই সম্বল। এমন পরিস্থিতি সামলাও কী করে?
বুমরা: তখন যদি মনে করি যে, হেরে যাব আর তার জন্য বাড়তি চাপ নিয়ে ফেলি, তা হলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তখন গ্যালারির দিকে তাকালেও চাপ তৈরি হয়। শুধু ভাবি, কী করে সঠিক বলটা করতে পারি। আগের ভাল পারফরম্যান্সগুলোর কথা ভাবি। কী ভাবে সফল হয়েছিলাম, সেটা ভাবার চেষ্টা করি। আর নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।
মোদী: (হাসতে হাসতে) কিন্তু একটা চিন্তা তো থাকবেই। পরোটা না খেয়ে দিন কাটাবে কী করে!
বুমরা: (সকলের হাসি) ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে ইডলি, পরোটা কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না। ওখানে যা পাওয়া যাচ্ছিল, তাই দিয়েই কাজ সারতে হচ্ছিল। (প্রধানমন্ত্রীর অট্টহাসি) তবে খাবার-দাবার ভাল ছিল। আমাদের প্রচুর ঘুরে ঘুরে খেলতে হয়েছে। তবে দল হিসাবে টুর্নামেন্টটা দারুণ কেটেছে। প্রথম বার জিতলাম। এতটা আবেগ আগে অনুভব করিনি। গর্ব হচ্ছে! আমার জীবনে এখনও পর্যন্ত এটাই সেরা অনুভূতি।
মোদী: (হার্দিক পাণ্ড্যের বক্তব্যের ভিডিয়ো দেখার পরে হার্দিকের দিকে তাকিয়ে) অভিনন্দন! তুমি খুব ভাল পারফর্ম করেছ। তোমাকে নিয়ে দেশ গর্বিত। এ বার কিছু বলো।
হার্দিক: আপনাকে ধন্যবাদ। ম্যাচের পর ওই কথাগুলো বলেছিলাম কারণ, শেষ ছ’মাসে যা হয়েছে, সেটা তখন ভেবে বেশ মজা লাগছিল। কিছু উত্থান-পতন ঘটেছে। যখন যে মাঠেই খেলতে গিয়েছি, দর্শকেরা গাল দিয়েছে। আওয়াজ দিয়েছে। আরও অনেক কিছু হয়েছে। ঠিক করেছিলাম, জবাব দিতে হলে খেলেই দেব। মুখে কিছু বলব না। তখনও কিছু বলিনি, এখনও বলতে চাই না। বলে না, কেউ কেউ সব সময় ঝগড়া করে! আমি সেই রকম। সব সময় লড়তে চাই। মাঠ ছেড়ে পালানোর কথা ভাবি না। সাফল্য এ ভাবেই পাওয়া যায়। বিশ্বাস করি, পরিশ্রম করব, লড়াই করব। সব সতীর্থ, কোচকে পাশে পেয়েছি। ঈশ্বরও হয়তো এমনই চেয়েছিলেন। তিনিই সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই ফাইনালে শেষ ওভারটা করার সুযোগ পেয়েছি।
মোদী: (হার্দিককে) তুমি তো ইতিহাসে জায়গা করে নিলে। কিন্তু সূর্যকুমার যাদবকে কী বলেছিলে (হাসি)?
হার্দিক: সূর্যকুমার ক্যাচটা ধরতেই সকলে হইহই করে উঠেছিলাম। পরক্ষণেই মনে হল, আরে, আগে সূর্যকে জিজ্ঞাসা করি, ঠিক মতো ক্যাচটা ধরেছে তো? ও বলল, ঠিক করেই ধরেছে। সত্যিই ম্যাচ জেতানো ক্যাচ। তার পরেই সব বদলে গেল।
(সূর্যকুমারের ক্যাচের ভিডিয়ো)
মোদী: সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মতো।
সূর্য: প্রথমে ভাবিনি ক্যাচটা ধরব। ভেবেছিলাম, বলটা কোনও ভাবে আটকাতে হবে। যাতে এক বা দু’রানের বেশি না হয়। বলটা হাতে আসার পর ভাবলাম, এ বার অন্য কারও দিকে ছুড়ে দিই। কিন্তু রোহিতভাই একটু দূরে ছিল। তাই ক্যাচটাই নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আসলে এ রকম ক্যাচ ধরার অনুশীলন অনেক করেছি। তাই খুব সমস্যা হয়নি। তবে ঠিক ওই সময়েই ঈশ্বর সুযোগটা দেবেন, ভাবিনি। ক্যাচটা নিয়ে দারুণ লেগেছিল।
মোদী: (আরশদীপ সিংহের বোলিংয়ের ভিডিয়ো দেখে আরশদীপের দিকে তাকিয়ে) তোমার বাবার একটা কথা গোটা দেশকে ছুঁয়ে গিয়েছিল। উনি বলেছিলেন, আগে দেশ, তার পর আমার ছেলে।
আরশদীপ সিংহ: বিশ্বকাপ জিতে দারুণ লাগছে। বুমরাভাই অন্য প্রান্ত থেকে বল করলে খুব সুবিধা হয়। ও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে। তখন ব্যাটারেরা আমায় মারতে গিয়ে আউট হয়। বাকি বোলারেরাও ভাল বল করেছে। তার ফল পেয়েছি আমি।
মোদী: অক্ষর যখন স্কুলে পড়ত, তখন ওকে এক বার পুরস্কার দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এমনিতে খেলাধুলার সঙ্গে আমার তেমন যোগাযোগ ছিল না কখনও।
অক্ষর পটেল: তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি।
মোদী: (অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অক্ষরের ক্যাচের ভিডিয়ো দেখিয়ে) তবে মাঠে ভাল কিছু ঘটলে আমি উৎসাহিত হয়ে পড়ি।
অক্ষর: প্রথমে মনে হয়েছিল ক্যাচটা সহজ। কিন্তু হাওয়া দিচ্ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম, বাঁ’হাতে ধরব। কিন্তু দেখলাম ডান হাতেই ধরতে হবে। লাফিয়ে ক্যাচটা নিতে চেষ্টা করেছিলাম। বল ঠিকঠাক হাতে এসে জমা হলে একটা আওয়াজ হয়। ওই আওয়াজ শুনে বুঝলাম, ক্যাচটা নিয়ে নিয়েছি। তবে কী জানেন, এমন ১০টা ক্যাচ এলে ৮টাই মিস্ করব! বিশ্বকাপে ঠিক সময়ে ক্যাচটা ধরেছিলাম বলে ভাল লাগছে।
মোদী: (কুলদীপ যাদবের বল করার ভিডিয়ো দেখিয়ে) কুলদীপ তো দেশের দীপ।
কুলদীপ যাদব: দেশের হয়ে খেলতে সব সময় ভাল লাগে। গর্ব হয়। আমার ভূমিকাটাই হল আক্রমণাত্মক স্পিনারের। সাধারণত মাঝের ওভারগুলোয় বল করি। কোচ, অধিনায়ক চান আমি মাঝের ওই সময়ে উইকেট নিই। সব সময় সেই চেষ্টা করি।
মোদী: সে তো বুঝলাম। কিন্তু তোমার এত সাহস, যে অধিনায়ককে নাচিয়ে দিচ্ছ (সকলের হাসি)?
কুলদীপ: না-না, আমি ক্যাপ্টেনকে নাচাইনি। বলেছিলাম, একটু অন্য রকম ভাবে কাপটা নিতে গেলে ভাল। কিন্তু যেটা শিখিয়েছিলাম, রোহিতভাই মোটেই সেটা করেনি।
মোদী: তা হলে তো তোমার মনে একটা আক্ষেপ আছে (সকলের হাসি)!
মোদী: (রোহিতের ব্যাটিং এবং অধিনায়কত্বের ভিডিয়ো দেখানোর পর রোহিতের দিকে তাকিয়ে) ২০০৭ সালের বিশ্বজয়ী দলের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় ছিলে তুমি। এ বার চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক। কেমন লাগছে?
রোহিত: সে বার দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। তখন সবে দলে সুযোগ পেয়েছি। দেশে ফেরার দিন মুম্বইয়ের রাস্তায় প্রচুর মানুষ স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। বিমানবন্দর থেকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যেতে পাঁচ ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল! দু’-তিন দিন পর মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপ জেতা কত সহজ! কিন্তু তার পরে একের পর এক বিশ্বকাপ চলে গিয়েছে। অনেক বার কাছাকাছি গিয়েও ট্রফি জিততে পারিনি। কিন্তু জোর দিয়ে বলছি, এ বার সকলের মধ্যে প্রচন্ড জেদ আর খিদে ছিল। নিউ ইয়র্কে তেমন অনুশীলনের সুযোগ ছিল না। কিন্তু কেউ সেটা নিয়ে ভাবেনি। সকলের লক্ষ্য ছিল বার্বাডোজ়ে ফাইনাল খেলা। এমন একটা দলকে নেতৃত্ব দিতেও ভাল লাগে। যেখানে দলের সকলের লক্ষ্য একই, সকলেই সকলের সঙ্গ উপভোগ করছে। মানুষের মুখে হাসি দেখলে ভাল লাগে। কত রাত পর্যন্ত লোকে জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় ঘুরেছে! এই ছেলেদের আগামী দিনের ক্রিকেটাররা অনুসরণ করবে। আমরা যেমন সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণদের করতাম।