রোহিত শর্মা (বাঁ দিকে) ও হার্দিক পাণ্ড্য। —ফাইল চিত্র।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফিরে সমর্থকদের ভালবাসায় আপ্লুত রোহিত শর্মা। প্রথমে দিল্লি ও তার পরে মুম্বইয়ে ফিরে তিনি যে আবেগ দেখেছেন তাতে অবাক হয়ে গিয়েছেন ভারতের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। নিজের ঘরের মাঠে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই হার্দিক পাণ্ড্যের নাম নিলেন রোহিত। এই হার্দিককে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক করা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সেই বিতর্ক আরব সাগরের জলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিশ্বকাপ জেতার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হার্দিককে দিলেন রোহিত। অধিনায়কের কথা শুনে কেঁদে ফেললেন সামনে বসে থাকা হার্দিক।
বিশ্বকাপ জিতে ফেরা ভারতীয় দলের জন্য ওয়াংখেড়েতে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সেখানে রোহিত বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, “শেষ ওভারে যে কোনও রান বাঁচানোই খুব কঠিন। প্রচুর চাপ থাকে। সেই চাপ সামলে হার্দিক বল করেছে। প্রথমে ক্লাসেনকে আউট করে ও আমাদের খেলায় ফিরিয়েছে। তার পরে শেষ ওভারে মিলারের উইকেট নিয়েছে। আমাদের বিশ্বকাপ জিতিয়েছে। হার্দিক দুর্দান্ত।”
রোহিত যখন এই কথাগুলি বলছেন তখন সামনে চেয়ারে বসে থাকা হার্দিকের চোখে জল। অথচ মুখে হাসি। রোহিতের মুখে হার্দিকের প্রশংসা শুনে ওয়াংখেড়ের গ্যালারিও হার্দিকের নামে চিৎকার করল। যে গ্যালারি থেকে ছ’মাস আগে টিটকিরি ভেসে এসেছিল, সেই গ্যালারি থেকেই নিজের নামে জয়ধ্বনি শুনলেন হার্দিক।
রোহিত প্রশংসা করেন সূর্যকুমার যাদবেরও। শেষ ওভারে তিনি যে ভাবে ডেভিড মিলারের ক্যাচ ধরেছেন সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন রোহিত। তিনি বলেন, “আমি তখন লং অনে ছিলাম। সূর্য লং অফে ছিল। মিলার যখন বলটা মারল কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছিল, হয়তো ছক্কা হবে। কিন্তু সূর্য দুর্দান্ত ক্যাচ ধরল। এটা অনুশীলনের ফসল। যে ভাবে ও অনুশীলনে পরিশ্রম করেছে তার ফল পেয়েছে।”
বিশ্বকাপ ট্রফি দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছেন রোহিত। তিনি বলেন, “আমরা যেমন ১১ বছর অপেক্ষা করেছি তেমন দেশবাসীও করেছে। ওরা আমাদের হাতে ট্রফি দেখতে চেয়েছিল। সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে। এই জয় শুধু আমাদের নয়, দেশবাসীর জয়।” মুম্বই যে কখনও তাঁকে খালি হাতে পাঠায়নি সে কথাও জানিয়েছেন রোহিত। ট্রফি জিতে তাই মুম্বইয়ে ফিরে উচ্ছ্বসিত তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাসভবনে গিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। সেই অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন রোহিত। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁর খেলায় খুব আগ্রহ। ওঁর সঙ্গে কথা বলে খুব ভাল লাগল।”
২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন রোহিত। এ বার অধিনায়ক হিসাবে জিতলেন। আগের বারও দেশে ফিরে ট্রফি নিয়ে উৎসব হয়েছিল। তবে দুই বিশ্বকাজ জয়ের অনুভূতির তুলনা চাইছেন না রোহিত। তিনি বলেন, “আগেরটা আমার প্রথম বিশ্বকাপ ছিল। তখন দলে নতুন ছিলাম। সেটা ছিল প্রথম বিশ্বকাপ। আমরা সবাইকে শিখিয়েছিলাম, কী ভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে হয়। আর এটা অনেক বছরের অপেক্ষার পরে পেলাম। এখন আমি অধিনায়ক। দুটো বিশ্বকাপের তুলনা হয় না।”
গত বছর দেশের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে হারার পরে রোহিত মরিয়া হয়েছিলেন এ বারের বিশ্বকাপ জিততে। অবশ্য তার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ৩-৪ বছর আগে থেকে। সেই পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের ফল এত দিনে পেয়েছেন তাঁরা। তাই এই জয়কে শুধু এক দিনের নয়, গত ৩-৪ বছরের জয় বলে মনে করেন রোহিত।