T20 World Cup 2024

আমেরিকায় কেন নিম্নমানের পিচে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে হচ্ছে রোহিতদের?

আমেরিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হঠাৎ করে আয়োজন হচ্ছে না। পর্যাপ্ত সময় আগে দায়িত্ব পাওয়ার পরেও কেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযুক্ত পিচ তৈরি করা যায়নি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ১৭:৫০
Share:

বিতর্কের কেন্দ্রে নাসাউ কাউন্টির এই ড্রপ ইন পিচ। ছবি: আইসিসি।

ক্রিকেটের বিশ্বব্যাপী প্রচারের লক্ষ্যে আমেরিকাকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজকের দায়িত্ব দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সের আগে সে দেশের মানুষের সঙ্গে ক্রিকেটের পরিচয় করানো হচ্ছে। কিন্তু আমেরিকায় বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কয়েক দিনের মধ্যেই। প্রধান খলনায়ক হয়ে উঠেছে আমেরিকার ২২ গজ।

Advertisement

ক্রিকেট পরিকাঠামো বলতে কয়েক বছর আগেও কিছু ছিল না আমেরিকায়। মেজর লিগ ক্রিকেটের সুবাদে গত দু’বছরে সামান্য কিছু পরিকাঠামো তৈরি হলেও তা আন্তর্জাতিক মানের নয়। বিশ্বকাপের জন্য নিউ ইয়র্কে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী স্টেডিয়াম। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো দলগুলির খেলা দেওয়া হয়েছে সেই নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে। পিচ নিয়ে খুশি নয় কোনও দলই। একাধিক অভিযোগ পেয়েছেন আইসিসি কর্তারা। হতাশ ক্রিকেটপ্রেমীরাও। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব মজাই যেন শুষে নিচ্ছে নিউ ইয়র্কের ২২ গজ। প্রশ্ন উঠছে এমন ম্যাড়ম্যাড়ে খেলা দেখিয়ে কতটা লাভ হবে ক্রিকেটের? বীরেন্দ্র সহবাগ বলেছেন, ‘‘এমন বিরক্তিকর ক্রিকেট দেখিয়ে লাভ কী? আমেরিকার মানুষেরা খেলা দেখে আনন্দ না পেলে কী করে ক্রিকেট ও দেশে জনপ্রিয় হবে?’’ ক্ষুব্ধ মাইকেল ভনও। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘ক্রিকেটের বিপণনের প্রচেষ্টা দুর্দান্ত। কিন্তু খেলোয়াড়দের নিউ ইয়র্কের নিম্নমানের পিচে খেলতে বাধ্য করাটা মেনে নেওয়া যায় না।’’

নিউ ইয়র্কের ড্রপ ইন পিচ ভাল ক্রিকেটের পরিপন্থী। অসমান বাউন্সে বিরক্ত ক্রিকেটারেরা। কোনও বল মাথা বা বুকের সমান উচ্চতায় উঠছে, আবার কোনও বল প্রায় গড়িয়ে যাচ্ছে। জোরে বোলারেরা কিছুটা সুবিধা পেলেও ব্যাটার এবং স্পিনারদের প্রাপ্তি শূন্য। অথচ অ্যাডিলেডের প্রধান পিচ প্রস্তুতকারী নিজের দেশ থেকে মাটি নিয়ে এসে নিউ ইয়র্কের ২২ গজ তৈরি করেছেন। তা-ও এমন অবস্থা! নিউ ইয়র্কের পিচের দুরবস্থার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন আইসিসি কর্তারাও। বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা যেমন আশা করেছিলাম, পিচগুলো ধারাবাহিক ভাবে তেমন আচরণ করছে না।’’ আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘পিচের উন্নতির জন্য বিশ্বমানের কর্মীরা নিরলস ভাবে কাজ করছেন।’’

Advertisement

কেন বিশ্বকাপের পিচের এমন দুরবস্থা? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমেরিকার ক্রিকেট সংস্থা ঠিক করেছিল নিউ ইয়র্কের ভ্যান কর্টল্যান্ড পার্কের একটি অংশে ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ে তুলবেন। বাধা হয়ে দাঁড়ান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা চাননি পার্কের একটা অংশ স্থায়ী ভাবে ক্রিকেটের জন্য ব্যবহৃত হোক। আমেরিকার সেনেটে ভ্যান কর্টল্যান্ড পার্কের একাংশে ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ে তোলার বিরোধিতা করেন স্থানীয় সেনেটরও। ফলে প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসতে হয় আমেরিকার ক্রিকেট সংস্থাকে। শেষ পর্যন্ত গত বছরের শেষ দিকে বিকল্প হিসাবে বেছে নেওয়া হয় আইজেনাওয়ার পার্ককে। সে সময় ছিল শীতকাল। বরফে ঢাকা ছিল গোটা পার্ক। স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি। তুষারপাত বন্ধ হওয়ার পর গত এপ্রিল মাসের শেষ থেকে শুরু হয় নাসাউয়ের অস্থায়ী স্টেডিয়াম তৈরির কাজ। সেখানে পিচ তৈরি করার মতো পরিস্থিতিও ছিল না। উপযুক্ত জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া হয় ফ্লোরিডাকে। ২২ হাজার কিলোমিটার দূরের অ্যাডিলেড থেকে মাটি এনে জানুয়ারি থেকে শুরু হয় পিচ তৈরির কাজ। তাতেই যত সমস্যা।

পিচ ঠিক মতো তৈরি হওয়ার আগেই বিশ্বকাপের সময় চলে আসে। কিছুটা বাধ্য হয়েই ফ্লোরিডা থেকে নিউ ইয়র্কে আনা হয় ড্রপ ইন পিচগুলি। বসানো হয় নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের মাঠে। অল্প কয়েক দিনে নিউ ইয়র্কের মাটির সঙ্গে অ্যাডিলেডের মাটির সখ্য তৈরি হয়নি। তা ছাড়া নতুন এবং ভাল পিচ তৈরির জন্য পাঁচ মাস সময় যথেষ্ট নয়। আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ায় পিচের উপরের ঘাসেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। দ্রুত পিচ তৈরির জন্য স্বাভাবিকের থেকে বেশি গভীরে ঘাস রোপণ করা হয়েছিল। সাধারণ আউট ফিল্ডে যে রকম তুলনায় মোটা ঘাস থাকে, পিচেও তেমন ঘাস ব্যবহার করা হয়েছে।

আসলে অভিজ্ঞতার অভাবে ভাল ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত পিচ তৈরি করা সম্ভব হয়নি আমেরিকার আয়োজকদের পক্ষে। তাই যা হওয়ার তাই হচ্ছে। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে খারাপ পিচে খেলতে হচ্ছে রোহিত শর্মা, বাবর আজ়মদের। যার দায় নিশ্চিত এড়াতে পারেন না আইসিসি কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement