‘ট্রোলড’ হওয়া উপভোগ করে ভবিষ্যতেও ধারাভাষ্য দিতে চাইছেন রহিম নবি গ্রাফিক্স - সন্দীপন রুইদাস
গত কয়েক দিন ধরে রহিম নবিকে ঘিরে নেট মাধ্যম উত্তাল। বল পায়ে মাঠ দাপানোর জন্য নয়, বাংলায় ধারাভাষ্য দেওয়ার জন্য। উচারণের সমস্যা ছাড়াও তাঁর ফুটবল বোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন রাত জাগা বাঙালি। তবে কটাক্ষগুলো একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেন না ভারত ও তিন প্রধানে খেলা এই প্রাক্তন ফুটবলার। বরং ‘ট্রোলড’ হওয়া উপভোগ করছেন। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও অনেক ম্যাচে ধারাভাষ্য দিতে চান তিনি।
চলতি ইউরো ও কোপা আমেরিকার জন্য একটি বেসরকারি চ্যানেলের হয়ে বাংলা ভাষায় ধারাভাষ্য দিচ্ছেন নবি। সেই জন্য গত এক মাস তাঁর ঠিকানা মুম্বই। সেখান থেকে আনন্দবাজার অনলাইন-কে নবি টেলিফোনে বলেন, “আমি তো বাংলা ভাষাতেই কথা বলছি। ছোটবেলা থেকে যে পরিবেশে বড় হয়েছি, সেখানকার ভাষার ছাপ এখনও আমার মধ্যে রয়ে গিয়েছে। সোজা কথায় আমার কথায় গ্রাম্য টান এখনও রয়েছে। সেই জন্য অবশ্য আমি একফোঁটাও লজ্জিত নই, বরং গর্বিত। অনেকে আমার উচ্চারণ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। সেটা তাঁরা করতেই পারেন। কিন্তু তাঁদের মনে রাখা উচিত, আমি তেমন উচ্চ শিক্ষা না পেয়েও দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেছি। সেই জন্যই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি কিন্তু তাঁদের কাছে হাত পাততে যাইনি। একাধিক মানুষ আমার ফুটবল বোধ নিয়েও প্রশ্ন করেছেন। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, দেশের সর্বোচ্চ স্তরে ফুটবলটা কিন্তু আমি খেলেছি। তাঁরা কিন্তু আমার মতো ফুটবল খেলেননি। তাই নিন্দুকদের কথায় পাত্তা দিতে রাজি নই।”
লাল-হলুদে ভাইচুংয়ের সঙ্গে অনুশীলনে ব্যস্ত নবি। ফাইল চিত্র।
পান্ডুয়া থেকে উঠে আসা এই ফুটবলারের সংযোজন, “সিনিয়র ধারাভাষ্যকার প্রদীপ রায় ও সৌমিত্র চক্রবর্তী আমাকে সব সময় সাহায্য করছেন। চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সবাই আমাকে সাহায্য করছেন। সবচেয়ে বড় কথা হল আমার মধ্যে কিছু গুণ না থাকলে ওরা শুধু শুধু এক মাস ধরে আমাকে মুম্বইতে রাখবে! আমার জন্য টাকা খরচ করবে!”
নেটাগরিকদের কটাক্ষের পাত্তা না দিলেও নিজের ভুলভ্রান্তি শুধরে নিতে চাইছেন নবি। বললেন, “এ বার আসি ভুল শুধরে নেওয়ার ব্যাপারে। ধারাভাষ্য দেওয়ার কিছু টেকনিক আছে। সেগুলো রপ্ত করার নিয়মিত চেষ্টা করছি। রাতের পর রাত জেগে ইউরো ও কোপার ম্যাচ করার পর দুপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। দলগুলোর ফুটবলারদের নিয়ে পড়াশুনো করছি। এগুলো কিন্তু ফেসবুকে যাঁরা মন্তব্য করছেন, তাঁরা জানেন না। আমি কাজটা ভালবাসি ও ফুটবল খেলে কিছু সুনাম আদায় করেছি বলেই আরও পরিশ্রম করছি। মনে রাখবেন, এটা কিন্তু আমার রুটিরুজি নয়। ফুটবল আমার আবেগ।”
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর। ডার্বি যুদ্ধে মাথায় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ছেন মোহনবাগানের নবি। ফাইল চিত্র।
নবি নিজেও নেট মাধ্যমে বেশ সক্রিয়। তা ছাড়া তাঁর ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর অনেক সাধারণ মানুষের কাছে রয়েছে। তাই কি তিনি অতি সহজেই আক্রমণের শিকার হলেন? নবি বেশ মজা করে বলেন, “কারও প্রতি আমার রাগ নেই। তাই সবার কাছে বিনীত আবেদন, আর তো মাত্র দুটো দিন। একটু কষ্ট করে শুনে নিন। মনে করুন নিজের ভাই ধারাভাষ্য দিচ্ছে। আর এতেও যদি রাগ না কমে, তাহলে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করে দেবেন, যেন আমাকে আর সুযোগ না দেওয়া হয়। পান্ডুয়া থেকে উঠে এসে মেসি, নেমারদের ফুটবল নিয়ে কথা বলছি। এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।”
টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে ইস্টবেঙ্গলে আসা তরুণ নবিকে এক বার প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভাইচুংয়ের পাশে খেলতে কেমন লাগছে? সে দিন নবির পাল্টা জবাব ছিল, “ভাইচুং ভাইও তো আমার পাশে খেলছে!” অনেক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। নবি বদলাননি।