নাগপুরে ঋদ্ধির ৪৭ বলে ৮১। লক্ষ্মী তখন মোহনবাগান মাঠে।
এক দিকে, ঋদ্ধিমান সাহার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচে বাংলার জয়। অন্য দিকে, একই দিনে টিমের অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির চোট। যা রবিবারের তামিলানড়ু ম্যাচে তো বটেই, এমনকী টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বেই তাঁকে নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন বসে যাওয়া।
বাংলা বনাম হায়দরাবাদ ম্যাচে দু’টো ঘটনাই ঘটে গেল শনিবার।
এ দিন ব্যাটিংয়ের সময় রান নিতে গিয়ে আচমকা কাফ মাসলে ক্র্যাম্প হয় মনোজের (২১ বলে ২৯ নট আউট)। বাকি ব্যাটিং খোঁড়াতে-খোঁড়াতে কোনও মতে শেষ করলেও তাঁকে নিয়ে ভাল রকম টেনশন শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলা শিবিরে। মনোজ ফিল্ডিং করেননি। টিমই বারণ করেছিল। ম্যাচ শেষে এমআরআই করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাতের দিকে এমআরআই রিপোর্ট এল, কিন্তু তাঁর চোট কতটা গভীর সেটা নাকি বোঝা যাবে রবিবার। বঙ্গ শিবিরের কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে মনোজের নামার সম্ভাবনা কম। এমনকী সুস্থ হতে-হতে নাকি এক-দু’সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সেটা হলে সৈয়দ মুস্তাক আলির গ্রুপ পর্বে না-ও পাওয়া যেতে পারে বাংলা অধিনায়ককে। রাতের দিকের খবর, মনোজ ঠিকঠাক হাঁটতে পারছেন না।
শেষ পর্যন্ত মনোজ যদি না পারেন, তা হলে বাংলার পক্ষে বড়সড় ধাক্কা হবে। লক্ষ্মীরতন শুক্ল অবসরে। ব্যাটিংয়ের গুরুদায়িত্ব অনেকটাই তখন পড়বে গিয়ে ঋদ্ধিমান সাহা এবং সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের কাঁধে। তবে প্রথম জন এ দিন যা ব্যাটিং করলেন, তাতে টেনশন কিছুটা কমবে বঙ্গ ক্রিকেটপ্রেমীদের। বরং ঋদ্ধির ফর্ম টুর্নামেন্টে দলকে অনেকটাই টেনে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদী বাংলা শিবির।
৪৭ বলে ৮১। সাতটা বাউন্ডারির সঙ্গে পাঁচটা ছক্কা, স্ট্রাইক রেট ১৭২। এ দিন ওপেন করতে নেমে ঝড় তুলে দিলেন ঋদ্ধি। তাঁর দাপটে ২০ ওভারে ১৮৫-৪ তুলে ফেলল বাংলা। জবাবে ১২৪-এর বেশি এগোয়নি হায়দরাবাদের প্রতিরোধ। প্রায় চার ওভার বাকি রেখে ৬১ রানের নিরঙ্কুশ জয় তুলে নেয় বাংলা। ঋদ্ধির সঙ্গে সায়নশেখর মণ্ডলও ভাল ব্যাট করেন। ৪১ বলে ৫০ করে যান সায়ন। বল হাতে তোলেন দু’উইকেট। মহম্মদ শামি এবং প্রজ্ঞান ওঝা পান তিনটে করে উইকেট। মাত্র ১৬.২ ওভারের মধ্যে ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় হায়দরাবাদ ইনিংস।
ম্যাচ শেষে নাগপুর থেকে ফোনে ঋদ্ধিমান বলছিলেন, ‘‘একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথম ছ’টা ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়। আজও ছিল। আসলে আমি আজ যা যা চান্স নিয়েছিলাম, সেগুলো সব ঠিকঠাক হয়েছে। মানে, শট সিলেকশনের কথা বলছি।’’ সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে থেমে যেতে হল বলেও তেমন আফসোস নেই ঋদ্ধির। বললেন, ‘‘যতটা করেছি, টিমের দরকারে তো লেগেছে। সেটাই আসল।’’ আর মনোজ না পারলে? একেই প্রতিপক্ষ হিসেবে তামিলনাড়ু অনেক ভাল হায়দরাবাদের চেয়ে। তার উপর অধিনায়ক না পারলে চাপ তো বাড়বে তাঁর উপর? শুনে ঋদ্ধি বললেন, ‘‘তামিলনাড়ু অনেক ভাল টিম জানি। ওরা ভাল ক্রিকেট খেলার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমরা যদি ইন্টেনসিটিটা ধরে রাখতে পারি, তা হলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। আর একজন যদি না পারে, তা হলে পুরো চাপ কোনও আর এক জনের উপর এসে পড়বে বলে মনে করি না। ক্রিকেট এগারো জনের খেলা। দায়িত্ব সবাই নেয়।’’
শনিবার আরও একজন নামলেন। তবে বাংলার জার্সিতে নয়, ক্লাবের। সিএবি লিগ ম্যাচে। বল হাতে পাঁচ ওভারে তিন রান দিয়ে একটা উইকেট। ব্যাট হাতে নামতে হয়নি। কারণ তাঁর টিম মোহনবাগান জিতল অনায়াসে।
নাম? লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
ছবি:—ফাইল চিত্র,শঙ্কর নাগ দাস