দোলাচলে: সুইমিং পুল খোলা নিয়ে চিন্তায় সাঁতারুরা। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় স্কুল গেমসে ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে রুপোর পদক পেয়েছিল প্রায় দু’বছর আগে। মৌলালির বাসিন্দা সেই রাজেশ্বরী রাউথ তার পর স্বপ্নে মশগুল ছিল সাঁতারে আগামী দিনে রাজ্য ও দেশকে গর্বিত করার ব্যাপারে। কিন্তু করোনা অতিমারির জেরে রাজেশ্বরীদের স্বপ্ন জোরাল ধাক্কা খেয়েছে। এমনকি, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারের জন্য পুল খোলার নির্দেশ এসে গেলেও বাংলায় এখনও খোলেনি পুল।
নবম শ্রেণীর ছাত্রী রাজেশ্বরীর হতাশাজনক প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের এখানে তো সুইমিং পুলে নামার অনুমতি নেই। অন্য রাজ্যে সাঁতারের পুল খুলে গিয়েছে। এখানে সাঁতার এখনও বন্ধ। কোনও পুল খোলা নেই। জানি না কবে সাঁতার শুরু করব! স্বপ্ন আদৌ সত্যি হবে কি না।’’
অতিমারির আবহ থেকে গত কয়েক মাসে অনেকটাই বেড়িয়ে এসেছে বাংলা। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন-সহ একাধিক খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সুইমিং পুল কবে খুলবে কেউ জানে না। যদিও কর্নাটক, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যে পুল খুলে গিয়েছে। বাংলার সাঁতারুরা প্রবল সমস্যায়। বাধ্য হয়ে বাংলার চার প্রথম শ্রেণির সাঁতারু স্বদেশ মণ্ডল, সৌবৃতি মণ্ডল, অংশুমান কর, শুভজিৎ গুপ্তরা অনুশীলন করছেন বেঙ্গালুরুর সাইয়ে। সেখান থেকেই স্বদেশ ফোনে বলে দেন, ‘‘নভেম্বর থেকে বেঙ্গালুরুতে চলে এসেছি। বাংলায় কোনও পুল খোলা ছিল না।’’
বুধবারেই ফের কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, সাঁতারের পুল সুরক্ষা বিধি মেনে খোলা যেতে পারে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কেন বাংলায় সাঁতারের পুল এখনও খোলেনি? সাঁতারের রাজ্য সংস্থার সচিব স্বপন আদক বলছেন, ‘‘অক্টোবরের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারের জন্য পুল খোলা যাবে। কিন্তু এখানে রাজ্য সরকারের কোনও অনুমতি মেলেনি। ফলে কোনও পুল খোলেনি। রাজ্যের সাঁতারুরা হয় টানা দেড় বছর জলে না নেমে রয়েছে, নয়তো ভিন রাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছে অনুশীলনের জন্য।’’
সাঁতারের রাজ্য সংস্থার কর্তার এই মন্তব্য শুনে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া কী? ক্রীড়ামন্ত্রী বলছেন, ‘‘সাঁতার সংস্থা সম্ভবত কিছু জানেই না। বাংলার সাঁতারুরা ঠিক মতোই অনুশীলন করছে। রাজ্য সরকার মানে ক্রীড়া দফতর নয়। সেটা বুঝতে হবে ওদের। সবে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ এসেছে। এ বার করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত সুরক্ষা বিধি পাওয়া গেলে সুইমিং পুল খোলার চিন্তাভাবনা অবশ্যই করা যাবে।’’ অক্টোবরের মাঝামাঝি প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারের জন্য সুইমিং পুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ আসার পরেও অন্য রাজ্য যখন সাঁতার অনুশীলন শুরু করেছে, তখন বাংলায় তা বন্ধ কেন? ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, ‘‘ক্রীড়া দফতরের হাতে কোনও সুইমিং পুল নেই সুভাষ সরোবর ছাড়া। সেখানেও কাজ চলছে। বাকি পুল সব পুরসভা, জেলা প্রশাসনের হাতে। সেখানে সাঁতারুরা অনুশীলন করছে।’’ রাজ্য সংস্থার সচিব পাল্টা বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অনুমতি মানে তো আমরা ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছ থেকেই অনুমতি বুঝি। আমরা ক্রীড়া দফতর থেকে কোনও সবুজ সঙ্কেত পাইনি। তাই কোনও সুইমিং পুল খোলা নেই।’’
বাংলার সাঁতারুরা অবশ্য মতান্তর নয়, সুইমিং পুল খোলার অপেক্ষায়। না হলে স্বপ্নই যে বিশ বাঁও জলে!