ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটকিপার কিরণ মোরে জানিয়েছেন, নেট প্র্যাক্টিসে তাঁর দেখা অন্যতম খারাপ ব্যাটসম্যান সুনীল গাওস্কর। ম্যাচে ‘লিটল মাস্টার’-এর ব্যাটিং দেখে মেলাতেই পারতেন না, একই মানুষ কী করে প্রস্তুতিতে এতটা খারাপ ব্যাট করেও ম্যাচে অত সুন্দর খেলতেন।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম দশ হাজার রানের এভারেস্টে ওঠা গাওস্করের সঙ্গে প্রায় চার বছর খেলেছেন মোরে। শনিবার এক সাক্ষাৎকারে মোরে বলেছেন, ‘‘নেটে সানির মতো খারাপ ব্যাটসম্যান দেখিনি। কখনও নেটে ব্যাট করতে পছন্দ করত না।’’ যোগ করেন, ‘‘টেস্ট ম্যাচের আগের দিন নেটে ওর এক রকম ব্যাটিং দেখতাম। পরের দিন ম্যাচে তার সঙ্গে মিল খুঁজে পেতাম না। দু’টোর মধ্যে ৯৯.৯৯ শতাংশ পার্থক্য। নেটে দেখে মনে হবে, ও কী করে ম্যাচে রান করবে? ম্যাচে দেখে মনে হবে, আহা অপূর্ব!’’
গাওস্কর কেন এত সফল? মোরের কাছে তার অন্যতম ব্যাখ্যা অবশ্যই মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা। গাওস্কর যদি এক বার নিজের ব্যাটিংয়ে ডুবে যেতেন, কোনও ভাবেই তাঁর ধ্যান ভাঙানো যেত না। হেলমেট ছাড়াই অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, ডেনিস লিলি, জেফ থমসনদের খেলেছেন গাওস্কর। মোরের কথায়, ‘‘মনঃসংযোগ করার ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা ছিল সানির মধ্যে। কোনও ক্রিকেটারকেই এতটা মগ্ন দেখিনি। একবার যদি কোনও বিষয়ে মন বসিয়ে ফেলে, তার পর কোনও কথাই ওর কানে যাবে না। ওর পাশে দাঁড়িয়ে যদি কেউ অনবরত কথা বলে অথবা নাচে, তবুও লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে না।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি পূর্বাঞ্চলের হয়েও গাওস্করের সঙ্গে খেলেছেন মোরে। সেই সুবাদেই মোরে উপলব্ধি করেন, ইনিংসের শুরুতে আউট হলে রাগ করতেন না গাওস্কর। কিন্তু উইকেটে থিতু হওয়ার পরে তিরিশ অথবা চল্লিশ রানে আউট হলে প্রচণ্ড রেগে যেতেন তিনি। এ রকমই এক ঘটনার উদাহরণ দিয়েছেন মোরে। বলেছেন, ‘‘তিরিশ-চল্লিশ রানে আউট হয়ে গিয়েছিল সানি। ড্রেসিংরুমে ফিরে নিজের গ্লাভস ছুড়ে ফেলে দিল। চিৎকার করে বলল, কী করে আউট হলাম? দশ রানের মধ্যে আউট হলে কখনও রেগে যেত না। থিতু হওয়ার পরে উইকেট দিয়ে এলে ক্ষোভে ফেটে পড়ত।’’
গাওস্করের ওপেনিং সঙ্গী কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্তও এক অজানা কাহিনি শুনিয়েছেন। গাওস্করের ইচ্ছে ছিল, একটি ইনিংসে শ্রীকান্তের চেয়ে দ্রুত তিনি হাফেঞ্চুরির গণ্ডি পেরোবেন। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ে (তখন মাদ্রাজ) ব্যতিক্রমী ঘটনাটি ঘটে। শ্রীকান্তের চেয়ে এক বল আগে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গাওস্কর। শেষ টেস্ট সিরিজেই সেই ইচ্ছেপূরণ হয় কিংবদন্তির। এক ক্রিকেট সম্প্রচারকারী চ্যানেলকে শ্রীকান্ত বলেছেন, ‘‘মাদ্রাজে সাতাশি সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গাওস্করের ইনিংস এখনও চোখে ভাসে। আমাকে বলেছিল, কোনও এক দিন আমার চেয়ে দ্রুত হাফসেঞ্চুরি করবে ও। সেই ইচ্ছে পূরণ করেই ছাড়ে। সানি যদিও আউট হয়ে যায় ৯১ রানে। কিন্তু আমার চেয়েও সে দিন আক্রমণাত্মক ছিল সানি।’’