দুরন্ত: কেনিয়ার বিরুদ্ধে গোলের পরে সুনীল ছেত্রী। সোমবার। ছবি: টুইটার
জোড়া গোল করে শততম ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখলেন সুনীল ছেত্রী।
আন্তঃমহাদেশীয় কাপে কেনিয়ার বিরুদ্ধে সোমবার ছিল ভারত অধিনায়কের শততম ম্যাচ। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মুম্বইয়ের মতো ক্রিকেটের শহরেও মাঠ ভর্তি করে এসেছিলেন ফুটবল দর্শকরা। তাদের কারও হাতে ছিল তেরঙ্গা পতাকা, কারও হাতে সুনীলের নামে জয়ধ্বনির পোস্টার।
জাতীয় দলের জার্সিতে দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতার জন্য নানা ব্যবস্থা করেছিল ফেডারেশন। টানেল দিয়ে বেরোনোর সময় তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ তো দেওয়া হলই, তুলে দেওয়া হল স্মারকও। এবং যা তুলে দিলেন জাতীয় দলের জার্সিতে একশো ম্যাচ খেলা ভাইচুং ভুটিয়া। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় ফুটবলের আর এক প্রাক্তন তারকা আই এম বিজয়ন। ভাইচুং ও বিজয়ন পরেছিলেন ‘১০০ লেখা জার্সি’। স্মরণীয় মুহূর্ত আরও ঝলমলে করতে সুনীলের পরিবারের সবাই তো মাঠে উপস্থিত ছিলেনই, দেখা গেল বলিউড তারকা অভিষেক বচ্চনকেও। এসেছিলেন ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলও।
রাশিয়া বিশ্বকাপের আবহে যাঁর জন্য এই বিশাল আয়োজন কিছুটা নাটকীয়ভাবেই তাঁকে ঘিরেই শেষ পর্যন্ত উৎসব শুরু হয়ে গেল স্টেডিয়ামে। ৬৭ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচ গোলশূন্য। স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের দল তখন রীতিমতো চাপে। উদান্ত সিংহের থেকে বল পেয়ে হঠাৎই গোলের জন্য মরিয়া সুনীল ঢুকে পড়েছিলেন কেনিয়ার বক্সে। তাঁকে অন্যায় ভাবে বাধা দেন কেনিয়ার ডিফেন্ডার কিবাওয়েজ। রেফারি পেনাল্টি দেন। এবং তা থেকে ঠান্ডা মাথায় গোল করে যান সুনীল। তেরো বছর আগে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি পরার পরে ক্রমশ সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন দিল্লির সুনীল।
অভিনন্দন: শততম ম্যাচে মাঠে নামার আগে ভাইচুং, বিজয়নের সঙ্গে সুনীল। ছবি: টুইটার
সেনা জওয়ানের পুত্র হওয়ায় শততম ম্যাচে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেও পেনাল্টি মারার সময় ঠান্ডা মাথায় কেনিয়া গোলকিপারকে নড়তে না দিয়ে গোল করে যান। তাঁর দ্বিতীয় গোলটাও বিপক্ষ গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে তুলে দিয়ে। গ্যালারিতে নানা রকম পোস্টার হাতে নিয়ে আসা ভারত অধিনায়কের নামে জয়ধ্বনি দিতে থাকা দর্শকরা মনে হয় এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। শুরু হয়ে যায় উৎসব। এর তিন মিনিট পরেই ব্যবধান বাড়ান জেজে লালপেখলুয়া। অতিরিক্ত সময়ে ফের সুনীলের গোল। এ বার বল বাড়িয়েছিলেন জেজের বদলি বলবন্ত সিংহ। পরপর দু’মাচে দুই বিদেশি দলের বিরুদ্ধে সুনীলের পাঁচ গোল হয়ে গেল। ১০০ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৬১। স্পেনের প্রাক্তন স্ট্রাইকার দাভিদ ভিয়াকে (৫৯ গোল) টপকে গেলেন তিনি। এই তালিকায় সুনীলের সামনে এখন মেসি (৬৪ গোল) এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (৮১)।
সোনার ছেলের সত্যিই যেন সোনার সময়ই চলছে। এ দিন চিনা তাইপের বিরুদ্ধে যে দল খেলেছিল সেই দলই নামান ভারতীয় কোচ। মাঝমাঠে প্রণয় হালদার ভাল খেলেছেন। তবে গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুও দুটো গোল বাঁচান। টুনার্মেন্টের চার নম্বর দল নিউজিল্যান্ডকে তাদের শেষ ম্যাচে হারিয়েছিল কেনিয়া। ফলে তাদের ফুটবলাররা আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন গোলের জন্য। কিন্তু বিরতি পর্যন্ত ম্যাচে গোল না হলেও সুনীলের নেতৃত্বে ঝড় শুরু হতেই কেনিয়া দুমড়ে মুচড়ে যায়। ভারতের পরের ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।