সংকল্প: বাড়িতেই ফিটনেস-চর্চা চলছে সুনীলের। ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সত্ত্বেও যে ভাবে ফাঁকা মাঠে লা লিগা, বুন্দেশলিগা বা ইপিএল শুরুর চেষ্টা চলছে, তাতে সম্মতি নেই সুনীল ছেত্রীর। সোমবার আনন্দবাজারকে ফোনে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ভারতীয় দলের অধিনায়ক বলে দিলেন, “শুধু আমি একা নই, কোনও খেলোয়াড়ই ফাঁকা মাঠে খেলতে পছন্দ করবেন না। তবে এটা স্বাভাবিক সময় নয়।” আরও যোগ করলেন, “শুধু ভারত বলেই নয়। সারা বিশ্বের কাছে এটা ব্যতিক্রমী সময়। যা আগে কখনও হয়নি। সবার উচিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখা। আগে সুস্থ থাকা জরুরি। তারপর সবকিছু।’’
যে ভাবে জার্মানি, স্পেন, ইটালি, ইংল্যান্ডে নতুন করে মারণভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে ফুটবলারেরা, তাতে শেষ পর্যন্ত লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরা ফাঁকা মাঠে খেলতে নামবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ভারত অধিনায়ক মনে করেন, “ইন্ডিয়ান সুপার লিগ বা যে কোনও প্রতিযোগিতা শুরু করা উচিত কেন্দ্রীয় সরকার অথবা চিকিৎসকেরা দেশকে করোনামুক্ত ঘোষণা করার পরেই।’’ যোগ করলেন, “কোথায় কী হচ্ছে, কে খেলছে সেটা তাদের ব্যপার। কিন্তু এটা তো অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। কিছু করারও নেই। আমার মতে আইএসএল বা অন্য যে কোনও প্রতিযোগিতাই শুরু হোক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে। তার আগে ট্রেনিং থেকে খেলা- সেখানেও উপযুক্ত সতর্কতা নেওয়া দরকার। সকলকে নিরাপদ রেখেই ফুটবল শুরু করা উচিত।’’ লকডাউনে প্রায় পঁয়তাল্লিশ দিন তিনি বাড়ির বাইরে পা রাখেননি। সুনীল বললেন, “নিজেকে সুস্থ রাখতে বাড়িতে থাকছি। বাবা, মা, স্ত্রী কাউকেই বাড়ির বাইরে যেতেও দিচ্ছি না। জীবন আগে। তার পরে খেলা।’’ কিন্তু মেসি-রোনাল্ডোরা ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে পড়লে আপনিও কি দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে আইএসএল খেলতে রাজি হবেন না? দেশের জার্সিতে সর্বকালের সেরা গোলদাতা বলে দেন, “এটা একেবারেই আমার পছন্দ নয়। সমর্থনও নেই। তবে আমি তো নিয়মের বাইরে নই। ফেডারেশন যা ঠিক করবে, সেটা মেনে চলব। আমি মনে করি না, ফুটবলারদের নিরাপত্তা বা জীবন বিপন্ন হয় এ রকম কোনও সিদ্ধান্ত কেউ নেবেন।’’
লকডাউনে গৃহবন্দি হলেও বরাবরের মতো নিজেকে ফিট রাখার ব্যাপারে সজাগ বাংলার জামাই। নিজে রান্না না করলেও, স্ত্রী-কে ঘরের নানা কাজে সাহায্য করছেন। পাশাপাশি ডাম্বেল, বল এবং নানা সরঞ্জাম নিয়ে অনুশীলন করছেন নিয়ম করে। “সংক্রমণের ভয়ে জিমে যাচ্ছি না। বহু দিন মাঠেও নামিনি। তবে বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং বল নিয়ে বাড়ির ড্রইংরুমেই নানা ট্রেনিং করছি নিজেকে ফিট রাখতে। আর অনেক বেশি সময় ঘুমোচ্ছি। সুষম খাদ্য খাচ্ছি। যাতে লকডাউন উঠে গেলে মাঠে নামার পরে কোনও সমস্যা না হয়।’’ জানিয়ে দিলেন, জাতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সুনীল বললেন, “শুধু ইগর স্যর নন, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ইসাক ডোরুর সঙ্গেও অনুশীলন নিয়ে কথা হয়। জাতীয় দলের সব ফুটবলারদের জন্যই নিয়মিত আলাদা ট্রেনিং সূচি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। সবাই সেটা মেনেই চলছি।’’
করোনা-যুদ্ধে দেশের সব ফুটবলারদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তুলে দিয়েছেন সুনীল। সেখানেই থেমে থাকেননি। সতীর্থ এবং পরিচিত সব ফুটবলারকে অনুরোধ করেছেন, যতটুকু পারো মানুষকে সাহায্য করো। “আমার ডাকে সবাই সাড়া দিয়ে টাকা দিয়েছে। সবাই যে যার মতো করে সাহায্য করে যাচ্ছে। আমি নিজেও কিছু কাজ করছি। এটাই তো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়,’’ বললেন সুনীল। কবে আইএসএল শুরু হবে জানেন না বেঙ্গালুরু এফসি অধিনায়ক। “আগে তো করোনা যুদ্ধে জিতি, তারপর ফুটবল। সুস্থ থাকাটা সবার আগে। তাতে ক্ষতি হলেও সরকারের নির্দেশ মেনে চলা উচিত,’’ বলে দিলেন সুনীল।