সাদা-কালো কর্তাদের তাণ্ডব • মহিলা রেফারিকেও ধাক্কা

ছাপ্পান্ন বছর পর ইতিহাসের সামনে সুব্রতর টালিগঞ্জ

গত শনিবার ইপিএলের চেলসি-এভার্টনের ছায়া পড়ল কলকাতা ফুটবলেও! সে দিনের ম্যাচ ৬-৩-এ শেষ হয়েছিল। জিতেছিল চেলসি। শুক্রবারের টালিগঞ্জ অগ্রগামী-মহমেডান ম্যাচও শেষ হল প্রায় একই ভাবে। তীব্র উত্তেজক অবস্থায়। উত্তেজক শব্দটা অবশ্য ক্লিশে মনে হচ্ছিল ম্যাচ এবং তার পরের ঘটনার পর। ১-০, ১-১, ২-১, ২-২, ৪-২, ৪-৩, ৫-৩—টেনিস স্কোরের ঢঙে নাটকীয় ভাবে ম্যাচটা শেষ হয়েও তো হল না!

Advertisement

সোহম দে

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

ম্যাচ ৯। পয়েন্ট ২২। পজিশন ১। সুব্রত ভট্টাচার্য। শুক্রবার। ছবি: উৎপল সরকার

টালিগঞ্জ ৫ (কোকো পেনাল্টি-সহ ৪, তন্ময়)

Advertisement

মহমেডান ৩ (অসীম, ওয়াসিম, আদিলেজা)

গত শনিবার ইপিএলের চেলসি-এভার্টনের ছায়া পড়ল কলকাতা ফুটবলেও! সে দিনের ম্যাচ ৬-৩-এ শেষ হয়েছিল। জিতেছিল চেলসি। শুক্রবারের টালিগঞ্জ অগ্রগামী-মহমেডান ম্যাচও শেষ হল প্রায় একই ভাবে। তীব্র উত্তেজক অবস্থায়।

Advertisement

উত্তেজক শব্দটা অবশ্য ক্লিশে মনে হচ্ছিল ম্যাচ এবং তার পরের ঘটনার পর। ১-০, ১-১, ২-১, ২-২, ৪-২, ৪-৩, ৫-৩—টেনিস স্কোরের ঢঙে নাটকীয় ভাবে ম্যাচটা শেষ হয়েও তো হল না! খেলা শেষে আক্রান্ত হলেন ফিফা রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায়। রেফারিকে বাঁচাতে গিয়ে সাদা-কালো কর্তা-সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হলেন চতুর্থ রেফারি কণিকা বর্মনও। তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করা হল। চলল অকথ্য গালিগালাজ। আছাড় মেরে ভাঙা হল ফুটবলার চেঞ্জিং বোর্ড। লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেওয়া হল টানেলের সামনে রাখা রেলিং। মহমেডান কর্তা-সমর্থকদের তাণ্ডবের সময় প্রথমে নীরব দর্শক হয়ে থাকলেও পরে নড়েচড়ে বসল পুলিশ। পরিস্থিতি সামলাতে পরে ব্যারিকেড তৈরি করে, লাঠি চালিয়ে অবস্থা সামলাল পুলিশই। ম্যাচ কমিশনার উদয়ন হালদার বললেন, “পুরো ঘটনার রিপোর্ট জমা দেব। যাদের দেখলাম তাদের সবার নামই থাকবে রিপোর্টে।” কমিশনারের রিপোর্ট পাওয়ার পর আইএফএ তা ঠান্ডাঘরে পাঠাবে না কোনও ব্যবস্থা নেবে, তা সময় বলবে। তবে এ দিনের ম্যাচ জিতে টালিগঞ্জ কিন্তু লিগ খেতাবের লড়াই জমিয়ে দিল। এসে পড়ল ইতিহাসের দোরগোড়ায়।

কলকাতা লিগের খেতাব জেতার নতুন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল এ দিন থেকেই। সুব্রত ভট্টাচার্যের টালিগঞ্জ আর আর্মান্দো কোলাসোর ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে। পরিস্থিতি যা, তাতে টানা পাঁচবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে হলে লিগের বাকি চারটি ম্যাচ জিততেই হবে ইস্টবেঙ্গলকে। যার মধ্যে একটি ম্যাচ আবার টালিগঞ্জের সঙ্গেই আগামী বুধবার। শুধু সব ম্যাচ জিতলেই হবে না, লিগ জিততে হলে ডুডু-র্যান্টিদের বাড়িয়ে নিতে হবে গোল পার্থক্যও। এ সব নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাতে রাজি নন ইস্টবেঙ্গল কোচ। এ দিন সকালেই তিনি সাংবাদিকদের ফের বলে দিয়েছেন, “কলকাতা লিগের জেতা-হারাটাকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। পরের ম্যাচগুলো তো জুনিয়র ছেলেদেরই খেলাব। তাতে যা হয় হোক।” আর্মান্দোর এই কথায় আবার অন্য ‘গন্ধ’ খুঁজে পাচ্ছেন ময়দানের পোড় খাওয়া কোচ সুব্রত। ম্যাচের পর ফুটবলারদের আদর করার ফাঁকে বলে দিলেন, “কে কী বলল, কী উদ্দেশ্যে বলল তা নিয়ে ভাবছি না। আমি চাই ইস্টবেঙ্গল-টালিগঞ্জ ম্যাচটা লিগের শেষ ম্যাচ হোক। আমাদের কর্তারা এ জন্য চিঠিও দিচ্ছেন আই এফ এ-কে। টালিগঞ্জকে শেষ ট্রফি আমিই দিয়েছিলাম, আবার একটা ট্রফি দিতে চাই।”

তিন প্রধানের বাইরে শেষ বার কলকাতা লিগ জিতেছিল ইস্টার্ন রেল। তা-ও সেই ১৯৫৮-তে। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা যখন খেলতেন রেলের জার্সি গায়ে দিয়ে। ছাপ্পান্ন বছর পর আবার ছোট দল হিসাবে নতুন ইতিহাস তৈরির সামনে টালিগঞ্জ। লিগ জয়ের দৌড়ে প্রবলভাবে থাকা সেই দলের কোচ হিসাবে সুব্রত ভট্টাচার্যের সূচি বদলের দাবি তোলা অযৌক্তিক নয়। কারণ ওই একটা ম্যাচ (ইস্টবেঙ্গল) জিতলেই তো স্বপ্ন বাস্তব হবে কোকো সাকিবু, বেলো রাজ্জাক, তন্ময় কুণ্ডুদের। দু’বার আই লিগ ছাড়াও ফেড-কাপ সহ কোচ হিসাবে দেশের সব ট্রফি জিতেছেন সুব্রত। ছোট দল টালিগঞ্জকে এ বার লিগ দিতে পারলে তাঁর মুকুটে এমন একটা গর্বের পালক যোগ হবে, যা বাংলার কোনও কোচের ভাঁড়ারে নেই। আর সে জন্যই মহমেডানকে হারাতে এ দিন মরিয়া বাবলু ম্যচটা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে শুরু করলেন। জিততে চেয়েছিল ফুজা তোপের মহমেডানও। ফলে খেলাটা বেশ হাড্ডাহাড্ডি হল। উত্তেজকও। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর পরের অর্ধে হল মোট আট গোল। তার মধ্যে আবার দু’টো পোনাল্টি থেকে। সবথেকে মজার ব্যাপার হল, ৭৬ থেকে ৯০চোদ্দা মিনিটে হল ছয় গোল। এ বারের প্রিমিয়ার লিগে যা কোনও ম্যাচে হয়নি।

র‌্যান্টি-ডুডু, বোয়া-ফাতাইদের নিয়ে হইচই, আলোচনার মাঝে হঠাৎ-ই নিজের উপর আলো ফেলে দিলেন আর এক নাইজিরিয়ান—কোকো সাকিবু। গোয়ায় খেলেছেন আগে। ওকোলি ওডাফার অভিন্নহৃদয় বন্ধু এ দিন দেখালেন—তিনিও গোলটা চেনেন। বিপক্ষ গোলের আশেপাশে চিতার মতো ঘুরতে থাকা কোকোর দু’টো গোল পেনাল্টি থেকে। বাকি দুটোর মধ্যে একটি মহমেডান গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে। আর একটি ফিরতি বলে জোরালো শটে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও গোলের এই বন্যায় কোকো ছাড়াও নজর কাড়লেন টালিগঞ্জের তন্ময়, সুরাবুদ্দিন। সাদা-কালো জার্সিতে ফের চমকে দিলেন অসীম বিশ্বাস। প্রথমবার ফুজা তোপের দলকে সমতায় ফেরালেও শেষপর্যন্ত মহমেডান অবশ্য পারেনি। রেফারির উপর ম্যাচের পর কর্তারা হতাশায় চড়াও হলেও, লক্ষ্যপূরণে মহমেডানকে কিন্তু পিছনে ফেলে দিল সুব্রতর টালিগঞ্জ। হার না মানা মনোভাবের জন্যই। এখন দেখার, শেষ ম্যাচ জিতে বেলো-কোকোরা ইতিহাস গড়তে পারেন কি না? স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে সোনার ছেলে কোকো কিন্তু বলে গেলেন, “ডুডুরা নয়, আমরাই লিগ জিতব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement