যেন পেপের বার্সা আর লো-র বায়ার্নকে দেখলাম

আমার টিভির রিমোটটার উপর মঙ্গলবার রাতে খুব ধকল গেল! বারবার চ্যানেল পাল্টে দেখতে হচ্ছিল যে। দুই ইউরোপিয়ান হেভিওয়েটের লড়াই চলছে তখন। কোনওটাই ছাড়া সম্ভব নয়। এক চ্যানেলে সেই পুরনো বার্সেলোনা দেখলাম। যারা নাগাড়ে বল দখলে রেখে বিপক্ষকে নাজেহাল করে হারায়। আর এক চ্যানেলে দেখলাম এমন এক বায়ার্ন মিউনিখকে যারা দেখিয়ে দিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের মতো কঠিন মঞ্চেও প্রথম লেগে দু’গোলে পিছিয়ে থেকে কী রকম দাপটে শেষ চারে ঢুকে পড়তে হয়।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪০
Share:

বার্সা মেজাজ। আলভেজের পিঠে নেইমার। কাম্প ন্যুতে। ছবি: এএফপি।

বার্সেলোনা-২
প্যারিস সাঁ জা-০
(দু’পর্ব মিলিয়ে ৫-১)

Advertisement

বায়ার্ন মিউনিখ-৬
পোর্তো-১
(দু’পর্ব মিলিয়ে ৭-৪)

আমার টিভির রিমোটটার উপর মঙ্গলবার রাতে খুব ধকল গেল! বারবার চ্যানেল পাল্টে দেখতে হচ্ছিল যে। দুই ইউরোপিয়ান হেভিওয়েটের লড়াই চলছে তখন। কোনওটাই ছাড়া সম্ভব নয়।
এক চ্যানেলে সেই পুরনো বার্সেলোনা দেখলাম। যারা নাগাড়ে বল দখলে রেখে বিপক্ষকে নাজেহাল করে হারায়। আর এক চ্যানেলে দেখলাম এমন এক বায়ার্ন মিউনিখকে যারা দেখিয়ে দিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের মতো কঠিন মঞ্চেও প্রথম লেগে দু’গোলে পিছিয়ে থেকে কী রকম দাপটে শেষ চারে ঢুকে পড়তে হয়।
তবে প্রথম বার্সা ম্যাচটার কথা বলি। প্রথম লেগেই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিল ওরা। গত রাতে ঘরের মাঠ ন্যু কাম্পে শুধু সরকারি ভাবে সেমিফাইনালিস্ট তকমাটা নিজেদের নামের পাশে বসাল। তবে এই বার্সাকে কিন্তু সেই পেপ গুয়ার্দিওলার তৈরি করা বার্সার মতোই দেখাচ্ছে। যারা শুরুর থেকেই প্রচুর ছোট ছোট পাসে খেলে খেলা স্লো করে দেয়। অ্যাটাকিং থার্ডে বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ফাইনাল ট্যাকলে আসতে বাধ্য করে। হাই ডিফেন্সিভ লাইন রেখে পিকে, মাসচেরানোর মতো ডিফেন্ডাররাও আক্রমণে যোগ দেয়।

Advertisement

তবে ইব্রাহিমোভিচ-সহ প্যারিস সাঁ জাঁকেও দু’গোল মারার অন্যতম কারিগর ছিল ইনিয়েস্তা। নেইমারের প্রথম গোলের দুর্দান্ত মুভটা সাজিয়েছিল ইনিয়েস্তাই। তিন জনকে ড্রিবল করেও বলের উপর নিখুত কন্ট্রোল। তার পরে ফাইনাল পাসটাও একেবারে নির্ভুল। আবার নেইমারের দ্বিতীয় গোল যেন দুই ব্রাজিলীয়র জুটিতে লুটি। দানি আলভেজের চমৎকার ক্রসে নেইমারের নিখুত হেড। তবে উল্টো দিকে সেন্টার ব্যাকে আর এক ব্রাজিলীয় দাভিদ লুইজ এ দিনও ব্যর্থ। বার্সার দ্বিতীয় গোলের সময় ওর নজর ছিল কেবল বলের উপর। নিজের পিছনে কী ঘটছে সেটা অনুমান করাটাই কিন্তু কোনও উঁচুমানের সেন্টার ব্যাকের বড় গুণ।
সাঁ জাঁ গোটা ম্যাচে আক্রমণ করার যেন আমন্ত্রণ জানিয়ে গেল বার্সাকে। একটাই লক্ষ্য—কাউন্টার অ্যাটাকে ইব্রাকে কাজে লাগানো। কিন্তু তেভেজ বা রুনির মতো ইব্রার ওয়ার্ক রেট কোথায়? ও এমন এক স্ট্রাইকার, যে পেনাল্টি বক্সের আশেপাশে অপেক্ষা করে বলের জন্য। আর সেই সাপ্লাইটাই গত রাতে আটকে দিয়েছিলেন বার্সা কোচ এনরিকে। ইব্রা মাঝেমধ্যেই অবিশ্বাস্য গোল-টোল করে ঠিকই, কিন্তু সে রকম গোল সত্যিকারের বড় ম্যাচে ওর কোথায়? বরং কোয়ার্টার ফাইনাল ‘টাই’য়ে দুটো পারফেক্ট ম্যাচ খেলে বার্সা এখন অন্যতম দাবিদার ইউরোপের সেরা ক্লাব ট্রফির।
বায়ার্ন আবার প্রথম লেগ ১-৩ হারায় অনেকে বলেছিল গুয়ার্দিওলার দল আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু সেই ম্যাচের ভুলগুলো দ্রুত ওরা শুধরে নিয়েছিল। বড় দলের যেটা গুণ। ফিরতি ম্যাচে নিজেদের ঘরের মাঠে প্রথম থেকেই অল আউট অ্যাটাকে গিয়েছে মুলার-লেওয়ানডস্কিরা। আগের ম্যাচে যেটা ওদের খেলায় দেখা যায়নি, সেই দুই উইংয়ে ফুলব্যাকদের খেলা ছড়ানো মুহুর্মুহু ক্রস। যেন সময় ভাগ করে মাঠে নেমেছিল বায়ার্ন। পনেরো মিনিট অন্তর একটা করে গোলের টার্গেট। বায়ার্ন জানত প্রথম দিকে গোল চাপিয়ে দিলে এমনিতেই চাপ বাড়বে পোর্তোর উপর। যতই ওরা এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত এ বারের টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকুক! সেখানে প্রথমার্ধেই বায়ার্ন পাঁচ গোল দেওয়ায় ‘টাই’ তখনই কার্যত শেষ হয়ে যায়।
বেশির ভাগই বলে থাকে গুয়ার্দিওলার পাসিং ফুটবলকে নাকি মডেল করে বিশ্বকাপ জিতেছে জার্মানি। কিন্তু আমার মতে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। জোয়াকিম লো-র জার্মানির মডেলই বরং রপ্ত করেছে গুয়ার্দিওলার বায়ার্ন। সেই ৪-২-৩-১ ছক। ওই রকম দ্রুত পাস খেলা। ডিফেন্স থেকে খেলা তৈরি করা। বল ছাড়াও সাপোর্টে থাকা। ‘বল তোমার কাছে আসবে না, তুমি বলের কাছে যাও’ মানসিকতা। একেবারেই প্রতিআক্রমণ নির্ভর খেলা নয়। বরং বিপক্ষ বল পেলে দু’-তিনজনে মিলে প্রেস করা। সেন্টার ব্যাকরা উঠলে ডিফেন্সিভ মিডিওরা সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গায় এসে কভার করছে। পেনাল্টি বক্সে বল পেলে সময় নষ্ট না করে টার্গেটে শট মারা।

ঠিক জার্মান দলের মতোই বায়ার্নেও টমাস মুলার আছে। যে ম্যাচে রবেন-রিবেরির মতো উইঙ্গার চোটের কারণে ছিল না, সেখানে ফরোয়ার্ড লাইনে প্রায় সব কিছু পরিচালনার দায়িত্বে দেখলাম মুলারকে। ও কিন্তু পায়ের থেকেও বেশি বুদ্ধি দিয়ে খেলে। গোল করা, গোলের পাস সাজানো, ড্রিবল করা, ক্রমাগত উপর-নীচ করা—সব কিছুই করল মুলার। আর কী চাই কোনও ফুটবলারের থেকে? সেমিফাইনালেও এই মুলারকে পেলে বায়ার্নেরও আর কী চাই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement