সকাল-সকাল প্রবল হই-হট্টগোল করে শাসক দলের হোর্ডিং সরানো দিয়ে শুরু। ভোটগ্রহণ পর্ব শুরুর আগে নেতাজি ইন্ডোরের ভিআইপি গেটের বাইরে পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি। চরম গণ্ডগোল।
সুব্রত ভট্টাচার্যের রবিবারটা শেষও হল ঠিক একই রকমের হই-হট্টগোলের মধ্যে। বাড়তি যোগ— বাবলুদা-র মুখে শাসকগোষ্ঠী এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যৌথ ভোট-প্রহসনের অভিযোগ।
মোহনবাগান নির্বাচনের ফল প্রকাশ তখনও হয়নি। কিন্তু যে ভাবে এবং যে পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হয়েছে, তাতে শুধু শাসক দল নয়, রাজ্য সরকারকেও সমান ভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন বাগানের ঘরের ছেলে। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ সুব্রতর দাবি, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে এই নির্বাচনে তৃণমূলের নেতারা সার্বিক সাহায্য করেছেন ক্লাবের শাসক দলকে। এই সরকার আমাদের গোষ্ঠীর সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করল।’’
বাগান নির্বাচনের অনেক দিন আগে থেকেই বিরোধীগোষ্ঠী উত্তপ্ত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের দাবিতে। তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। বিরোধীদের দাবি, তাঁদের প্রার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে জোর করে নির্বাচন থেকে নাম প্রত্যাহার করানো হয়েছে। প্রার্থীর নাম তালিকায় থাকা সত্ত্বেও, তাঁকে দিয়ে স্বীকার করানো হয়েছে, তিনি নির্বাচনে লড়ছেন না। তাই হয়তো ভোট-পর্বের শেষে সুব্রত বলছিলেন, ‘‘আমরা দু’টো বড় ভুল করেছি। প্রথমত, আদালতে পাঁচটা মামলা করা উচিত হয়নি। আর যে পাঁচ জন আমাদের প্যানেল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের আসলে নেওয়াই উচিত হয়নি। রীতিমতো জোর করে প্রার্থীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সরকার নিজের মত চাপিয়ে দিয়েছে। এই নির্বাচনে শিখলাম, বেআইনি ভোট কী ভাবে করতে হয়।’’
বাগান নির্বাচনে বিরোধীদের প্রধান মুখ ছিলেন সুব্রত। তাই শুরু থেকেই তাঁকে যেন ‘ডাবল কভারিং’-এ রাখেন শাসকগোষ্ঠীর কর্তারা। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে কোনও গণ্ডগোল হলেই ‘বাবলু’দাকে আটকাতে ছুটে এসেছেন ফুটবল-সচিব পদে তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। আর নেতাজি ইন্ডোরের বাইরে সুব্রতর সঙ্গে সারা দিন আঠার মতো সেঁটে ছিলেন শাসকগোষ্ঠীর টেনিস সচিব পদপ্রার্থী উত্তম সাহা। সুব্রত কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন— সব তাঁর তীক্ষ্ণ নজরে। সুব্রত বলেই ফেললেন, ‘‘ওরা শুরু থেকেই ভোট নিয়ন্ত্রণ করছিল। বহু সদস্য কার্ড জাল। পরিচয়পত্র দেখতে চাইছি, দিচ্ছে না। প্রতিবাদ করতে যাচ্ছি, সত্য আমাকে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিটিও চোখ বন্ধ করে বসে। আসলে পুরোটাই সাজানো।’’
ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নিয়েই যে শুধু প্রশ্ন উঠছে, তা নয়। নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে স্বচ্ছ ভোটারদের যে ভাবে ‘হাইজ্যাক’ করা হয়েছে তা নিয়েও রীতিমতো ফুটছেন সুব্রত। তাঁর দাবি, ‘‘ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে শাসক দল শিবির করেছে। এই ঘটনা তো নজিরবিহীন। ক্ষুদিরামে মেলা হয়। টুর্নামেন্ট হয়। কিন্তু কোনও সংস্থা বা ক্লাবের নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, এই প্রথম দেখলাম। ভোটকেন্দ্রের একশো মিটারের মধ্যে শিবির করা যাবে না তো জানতাম। এখন দেখছি, ওদের সবেতেই ক্ষমা।’’
নির্বাচন কমিটির বিরুদ্ধেও তোপ দাগছেন সুব্রত। ‘‘প্রার্থীদের এজেন্টদের নাকি ক্লাবের সদস্য হতে হবে। শুক্রবার নির্বাচনের নির্ঘণ্ট নিয়ে আলোচনা সভায় কিন্তু তা বলা হয়নি। মিনিটসেও নেই। কিন্তু হঠাৎ আজ সকালে ভোটের আগে একটা অচেনা নম্বর থেকে উড়ো এসএমএস এল মোবাইলে। আরে, শাসক দলের সব এজেন্ট কি ক্লাব মেম্বার? আমাদের চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, অথচ ওদের বেলায় ছাড়।’’
সুব্রত অবাক! বিরক্ত! ক্ষুব্ধ! তবে তিনি হাল ছাড়ছেন না। ক্লাবেও যাবেন। তাঁর লড়াই চলবে। ভোট শেষে বাগানের ঘরের ছেলের শপথ, ‘‘সুব্রত ভট্টাচার্য হারেনি। হেরেছে সততা। যত দিন বাঁচব এই দুর্নীতিগ্রস্ত শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।’’