ইস্টবেঙ্গলে কি তাঁর শেষের কবিতা পড়ে ফেলেছেন সুভাষ? —ফাইল চিত্র।
চলতি মরসুমের শুরুতে আই লিগকেই পাখির চোখ করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুভাষ ভৌমিক। স্বাধীনতার পরে বিদেশ থেকে প্রথম ট্রফি জিতে আসা সেই সুভাষ ইস্টবেঙ্গলে কি তাঁর শেষের কবিতা পড়ে ফেলেছেন?
আই লিগ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলে দিচ্ছেন, ‘‘আই লিগ পর্যন্ত আমি থাকি কি না তাই জানি না। যদি থাকি, তখন আই লিগ নিয়ে ভাবব। আমি তো না-ও থাকতে পারি।’’ আসিয়ান কাপ জয়ী কোচের কাছে হঠাৎ এই মন্তব্যের কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি অবশ্য প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন।
ভিতরের খবর, ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের জাঁতাকলে পড়ে এ বার আই লিগে টিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না সুভাষ ভৌমিক। এএফসি ও সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী, তাদের অনুমোদিত কোনও ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ক্লাবের টিডি রাখা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু ক্লাব টিডি হিসেবে কোনও ব্যক্তিকে নথিবদ্ধ করলে সেই ব্যক্তির ‘এ’ লাইসেন্স বা তার সমতুল্য এএফসি অনুমোদিত কোচিং ডিগ্রি থাকতেই হবে। সঙ্গে ফুটবলার ও কোচ হিসেবে সেই ব্যক্তির অতীত অভিজ্ঞতা ঝলমলে হওয়া বাঞ্ছনীয়। গত মাসের শেষেই এ ব্যাপারে চিঠি দিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে জানিয়ে দিয়েছে ফেডারেশন। ফুটবলার ও কোচ হিসেবে সুভাষ ভৌমিকের সাফল্য রয়েছে। কিন্তু ‘এ’ লাইসেন্স বা তার সমতুল্য কোচিং ডিগ্রি নেই সুভাষের। এখানেই আটকে যাচ্ছেন জাতীয় লিগ ও আই লিগ মিলিয়ে তিন বারের জয়ী কোচ।
নথি: টিডি নিয়ে ফেডারেশনের সেই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র
ইস্টবেঙ্গলকে চিঠি পাঠানোর কথা স্বীকার করে আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর বলছেন, ‘‘টিডি নিয়ে এএফসি-র নিয়ম ইস্টবেঙ্গলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।’’ ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারও বলছেন, ‘‘চিঠি পেয়েছি। তবে আলোচনা হয়নি এ ব্যাপারে।’’
ক্লাবে আসা এই চিঠি নিয়ে বেশ বিব্রত ইস্টবেঙ্গল শিবির। আসন্ন আই লিগে সুভাষ টিডি না থাকলে তাঁকে কী ভাবে দলের সঙ্গে যুক্ত রাখা হবে সে ব্যাপারেও তাঁরা ধোঁয়াশায়। সুভাষকে সে ক্ষেত্রে ম্যানেজার করে টিমের সঙ্গে রাখা যায়। কিন্তু তা হলে তিনি অনুশীলন করাতে পারবেন না। তাঁর জায়গায় অনুশীলন করাবেন চিফ কোচ হিসেবে নিযুক্ত অন্য কেউ। ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সফল কোচ সেক্ষেত্রে কোচিং করাতে চাইবেন কি না সেটাও বড় প্রশ্ন।
হতাশা: এরিয়ান ম্যাচেও নেই আকোস্তা (বাঁ দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
শনিবার ইস্টবেঙ্গলের কলকাতা লিগে খেলা রয়েছে এরিয়ানের বিরুদ্ধে। তার আগে শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল টিডি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে জনি আকোস্তাদের অনুশীলন করিয়েছেন খোশ মেজাজেই। বৃহস্পতিবার মোহনবাগান ড্র করেছে পিয়ারলেসের বিরুদ্ধে। ফলে লিগের লড়াইয়ে ফের এক বিন্দুতে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গল টিডি বলছেন, ‘‘কলকাতা লিগের কে কখন পয়েন্ট খোয়াবে সেটা কেউ জানে না।’’ বিপক্ষ এরিয়ান সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, ‘‘মহমেডানকে হারিয়েছে। দু’টো ম্যাচ জিতেছে। তা ছাড়া পাঁচ জনকে নিয়ে গড়া এরিয়ান মাঝমাঠও বেশ শক্তিশালী। ’’
লাল-হলুদ সদস্য, সমর্থকদের চিন্তা অন্য জায়গায়। আন্তর্জাতিক ছাড়পত্র না আসায় এ দিনও সই হয়নি বিশ্বকাপার জনি আকোস্তার। ফলে তাঁকে খেলানো যাচ্ছে না এরিয়ান ম্যাচে। আর দু’সপ্তাহ পরেই বড় ম্যাচ। বিদেশি স্ট্রাইকার এখনও আসেনি। আন্তর্জাতিক দলবদলের সময়সীমা এ মাসেই শেষ হবে। ফলে বিদেশি স্ট্রাইকার কবে আসবে ইস্টবেঙ্গলে তাঁর কোন সদুত্তর নেই ইস্টবেঙ্গল ও তার বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্তাদের কাছে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহাসিক চুক্তি ক্লাবের সভ্য-সদস্যদের মুখে ভবিষ্যতে কতটা হাসি ফোটাবে তা সময়ই বলবে।
শনিবার কলকাতা ফুটবল লিগ: ইস্টবেঙ্গল বনাম এরিয়ান (ইস্টবেঙ্গল, ৪-৩০)। সরাসরি সাধনা নিউজে।