ভারতীয় বোর্ডের নেতা নির্বাচন নিয়ে নাটক চরমে

ডালমিয়ার নাম পেট্রন, পওয়ারের নাম প্রেসিডেন্ট নিয়ে জল্পনা

বিশ্বকাপের গ্রুপ ‘বি’-তে ধোনির ভারত শীর্ষে থাকবে কি না, সেটা অনুমান করা এই মুহূর্তে বেশি সহজ! জেনুইন কঠিন হল এই প্রশ্নের উত্তর আন্দাজ করা যে আগামী বাহাত্তর ঘণ্টা পরে ভারতীয় বোর্ডের মসনদে কে বসবেন? বুধবার থেকে পরিস্থিতির ক্রমাগত নাটকীয় পরিবর্তন হয়ে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসক মহলে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:০২
Share:

বিশ্বকাপের গ্রুপ ‘বি’-তে ধোনির ভারত শীর্ষে থাকবে কি না, সেটা অনুমান করা এই মুহূর্তে বেশি সহজ!

Advertisement

জেনুইন কঠিন হল এই প্রশ্নের উত্তর আন্দাজ করা যে আগামী বাহাত্তর ঘণ্টা পরে ভারতীয় বোর্ডের মসনদে কে বসবেন? বুধবার থেকে পরিস্থিতির ক্রমাগত নাটকীয় পরিবর্তন হয়ে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসক মহলে।

যাঁরাই পদাধিকারী হিসেবে নির্বাচিত হন না কেন, রেজিস্টার্ড অফিস হবে মুম্বই। অথচ তাঁদের ভাগ্য নির্বাচন হচ্ছে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। ক্রিকেট রাজনীতিতে থাকা বিজেপির প্রভাবশালী অংশ এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছেন।

Advertisement

পারথে অধুনা বসবাসকারী ভারতীয় ক্রিকেট টিমও জানতে খুব উৎসুক যে কী হচ্ছে? বোর্ড প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন?

চেন্নাইয়ে আগামী দোসরা মার্চ আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই যে নেতা নির্বাচন হয়ে যাবে তা নিয়ে বিশেষ ধোঁয়াশা নেই। প্রশ্ন হল কে হবেন?

প্রথম ক্যান্ডিডেট: জগমোহন ডালমিয়া। গত কাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে এগিয়ে থাকলেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তাঁকে ভাবা হচ্ছে পেট্রন ইন চিফ পদে। ডালমিয়ার গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি হলেও অনেকেরই মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পদের ধকল সামলানোর মতো শরীর-স্বাস্থ্য তাঁর এখন নেই।

দ্বিতীয় ক্যান্ডিডেট: শশাঙ্ক মনোহর। অত্যন্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। শোনা যাচ্ছে পওয়ারের সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী নিজে খোঁজ নিয়েছেন যে শশাঙ্ক এখন কী করছেন? কিন্তু শ্রীনি শিবির তাঁকে কোনও মতেই আসতে দিতে রাজি নয়।

তৃতীয় ক্যান্ডিডেট: অনুরাগ ঠাকুর। অরুণ জেটলির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসা মানে বিজেপি খুশি থাকবে। প্রশ্ন হল, অনুরাগ বোর্ড রাজনীতিতে দারুণ গ্রহণযোগ্য কিছু নন। তাঁকে সর্বসম্মত প্রার্থী হিসেবে সব গোষ্ঠী মেনে নেবে কি না, ঘোরতর অনিশ্চিত।

চতুর্থ ক্যান্ডিডেট: রাজীব শুক্ল। রাজীব প্রেসিডেন্ট হতে সবচেয়ে উৎসাহী। কয়েক মাস ধরে দৌড়ঝাঁপও করছেন। প্রেসিডেন্ট পদ না পেলে সচিব হতেও রাজি। জেটলির ঘনিষ্ঠ তিনি। প্রশ্ন হল, বাকিদের হ্যাঁ করানোর মতো বিশ্বাসযোগ্যতা কি তাঁর আছে?

পঞ্চম ও শেষ ক্যান্ডিডেট: স্বয়ং শরদ পওয়ার। বিজেপির একটা অংশ একেবারেই চায় না তিনি বোর্ড প্রশাসনের মাথায় বসুন। কিন্তু পওয়ার অদম্য। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক অবধি করেছেন। ঠিকঠাক সমর্থন পেয়ে গেলে শুক্রবার দাঁড়ানোর কথা ঘোষণাও করে দিতে পারেন।

শিখর ধবন আর বিরাট কোহলির মধ্যে ব্রিসবেনের কুখ্যাত ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে। কিন্তু পওয়ার আর শ্রীনি শিবির— এই দুই ভাগে ভারতীয় ক্রিকেটের বিভাজন কমার নয়। বরং বেড়েই চলেছে।

এ দিন দুপুরে হঠাৎ খবর রটে যায়, পওয়ার ভোটে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি আদায় করে নিয়েছেন। বিরোধী বোর্ড কর্তাদের কেউ কেউ দাবি করতে থাকেন পওয়ারের সঙ্গে তাঁদের ফোনেও কথা হয়েছে। তিনি সম্মতি পেয়ে গিয়েছেন। পওয়ার নিজে সংবাদসংস্থাকে সন্ধেয় বলেন দাঁড়াবেন কি না এখনও ঠিক করেননি।

পওয়ার শিবির প্রচারে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে দ্রুত আসরে নেমে পড়েন শ্রীনি। তিনি এত দিনে বুঝে গিয়েছেন যে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে দেবে না। শ্রীনির লক্ষ্য তাই নিজের পেটোয়া কাউকে দাঁড় করানো। যাতে বোর্ডটা রিমোটে চালাতে পারেন। আর তাঁর আইসিসিতে থাকা নিয়েও ভারতীয় বোর্ড সমস্যা তৈরি না করে।

পওয়ার রাজি হয়েছেন শোনামাত্র শ্রীনি শিবিরের লোকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, যদি খবরটা সত্যি হয় তা হলে আইসিসিতে সত্যিই শ্রীনি চাপে পড়ে যাবেন। তাঁরা দ্রুত নিজেদের মধ্যে ফোনে আলোচনা শুরু করেন।

শ্রীনি চেন্নাইয়ে অনুগতদের বৈঠক ডেকেছিলেন শুক্রবার। ঘটনাপ্রবাহের পরিবর্তনের জন্য সেটা পিছিয়ে তিনি শনিবার করেছেন। কিন্তু অনুগামীদের এখনও এমন কোনও ধারণা দেননি যে তিনি ক্ষমতাচ্যুত। বরং বারবার বোঝাতে চেয়েছেন নিজের পছন্দের লোককেই তিনি গদিতে বসাবেন। যাঁরা শ্রীনির সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের বোঝানো হয়েছে যে ক্রিকেট-রাজনীতির সাম্রাজ্যের রিমোট এখনও তাঁরই হাতে। এমনকী এটাও বুঝিয়েছেন যে জেটলিও তাঁরই সঙ্গে রয়েছেন। পওয়ার শিবির মনে করে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো।

শ্রীনি যে প্যানেল দিয়েছেন তাতে ডালমিয়াকে পেট্রন ইন চিফ রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, অরুণ জেটলিও তাই চান। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেটলি শ্রীনির সঙ্গে কতটা আছেন, সেটা নিয়েই একটা বিরাট প্রশ্ন। অনেকের মনে হচ্ছে শ্রীনি কার্যত ক্ষমতাচ্যুত এবং তিনি কালনেমির লঙ্কাভাগ করছেন। আবার অনেকের মনে হচ্ছে, ভোটব্যাঙ্ক এখনও শ্রীনির দখলে। পওয়ার যদি বা নির্বাচনে দাঁড়ান, ব্যালটবাক্সে তিনি শ্রীনির প্রতাপ টের পাবেন।

পওয়াররা উল্টে বলা শুরু করেছেন ক্ষমতায় এলে আমরা শ্রীনিকে আইসিসি থেকেও সরিয়ে দেব। দু’পক্ষই দাবি করছে, কেন্দ্রের আশীর্বাদ তাদের ওপর রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মনে হচ্ছে বিজেপি পওয়ারকে সমর্থন করবে না। আর সেই সমর্থন না পেলে তিনি কী করে ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট হবেন? কারও কারও ভয় তিনি ফেরত এলে ললিত মোদীও ফিরবেন। ফিরবে আরও একরাশ দুর্নীতি।

নির্বাচনী ম্যাচ আপাতত এমন প্রচণ্ড উত্তেজনার মধ্যে চালু যেন ডেথ ওভারে চূড়ান্ত মীমাংসার দিকে এগোচ্ছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement