হিউজ-আতঙ্ককে সেঞ্চুরিতে জবাব দিলেন স্মিথ

ফের ক্রিজে একজন অস্ট্রেলীয়। ফের মাথা লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা বাউন্সার। ফের অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহল তথা গোটা ক্রিকেটবিশ্বে আতঙ্কের শিরশিরানি। ক্রাইস্টচার্চ ২০১৬ ফিরিয়ে আনল ২০১৪ সিডনির ভয়াবহ স্মৃতি। সে বার শন অ্যাবটের বাউন্সারের ধাক্কায় আর চোখ খুলতে পারেননি ফিলিপ হিউজ। এ বার নিল ওয়্যাগনারের বাউন্সার খেয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন স্টিভন স্মিথ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

১৩৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস স্টিভন স্মিথের।

ফের ক্রিজে একজন অস্ট্রেলীয়। ফের মাথা লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা বাউন্সার। ফের অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহল তথা গোটা ক্রিকেটবিশ্বে আতঙ্কের শিরশিরানি।

Advertisement

ক্রাইস্টচার্চ ২০১৬ ফিরিয়ে আনল ২০১৪ সিডনির ভয়াবহ স্মৃতি। সে বার শন অ্যাবটের বাউন্সারের ধাক্কায় আর চোখ খুলতে পারেননি ফিলিপ হিউজ। এ বার নিল ওয়্যাগনারের বাউন্সার খেয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন স্টিভন স্মিথ। আর তার পর উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাট করে ১৩৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে গেলেন।

ব্রেন্ডন ম্যাকালামের বিদায়ী টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। ৬৭-২ হয়ে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ের হাল ধরেছিল স্মিথ-জো বার্নস জুটি। চা-বিরতির ঠিক আগের ওভারে স্মিথ যখন ৭৮ ব্যাটিং, তখনই নিউজিল্যান্ডের পেসার ওয়্যাগনারের একটা বাউন্সার ডাক করতে যান অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। বল এসে সজোরে লাগে তাঁর মাথার ঠিক পিছনে। সংঘর্ষের জোর এতটাই ছিল যে, মাথা থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়ে বলটা।

Advertisement

ততক্ষণে টলমল করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন স্মিথ। মাঠে থাকা নিউজিল্যান্ডের সব ক্রিকেটার ছুটে এসেছেন তাঁর পাশে। ছুটে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার মেডিক্যাল টিম। টিমের ডাক্তার পিটার ব্রুকনার শুশ্রুষার পরে জানান, বাকি ওভারটা ব্যাট করতে পারবেন স্মিথ। পরের বলেই সিঙ্গলস নেন তিনি। যার পর আশঙ্কার মেঘ অনেকটাই কেটে যায়।

অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক নিয়ে ভয়ের একটা বড় কারণ ছিল যে, তিনি নতুন হেলমেট পরে খেলছিলেন না। ফিল হিউজের দুর্ঘটনার পর বাড়তি প্যাডিং দিয়ে যেগুলো তৈরি করা হয়েছে। মাথার যে জায়গাটায় বাউন্সার লাগে, নতুন হেলমেট পরে থাকলে সেখানটা সুরক্ষিত থাকত। ‘‘ওই ওভারের পরই চা বিরতি হয়ে যাওয়ায় খুব ভাল হল। স্মিথ মিনিট কুড়ি মতো পেল নিজেকে গুছিয়ে নিতে। প্রচণ্ড শক্ড দেখাচ্ছিল ওকে। একা চুপচাপ বসে ছিল,’’ পরে বলছিলেন বার্নস। যাঁর এ দিনের ১৭০ বিদেশে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি। কিন্তু দিনের শেষে যে কৃতিত্ব ঢাকা পড়ে গেল স্মিথ-আতঙ্কে।

যাঁর হাত থেকে ঘাতক বাউন্সারটা বেরিয়েছিল, সেই ওয়্যাগনারও কম শক্ড নন। ‘‘এখনও নিজেকে দুর্বল লাগছে। ও ভাবে মাথায় চোট পেয়ে ব্যাটসম্যান পড়ে যাচ্ছে, এই দৃশ্য কেউই দেখতে চায় না। ও যে আবার উঠে দাঁড়িয়ে দারুণ ব্যাট করল, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়,’’ দিনের খেলার শেষে বলেন উনত্রিশ বছরের মিডিয়াম পেসার। বাউন্সারের সৌজন্যেই যিনি শেষ পর্যন্ত ফেরান স্মিথ আর বার্নস দু’জনকেই।

বাউন্সার লাগল মাথার পিছনে। পড়ে গেলেন স্মিথ।

ঘটনাটার কথা বলতে গিয়ে প্রায় শিহরিত হয়ে যান ওয়্যাগনার। বলতে থাকেন, ‘‘স্মিথকে পড়ে যেতে দেখেই ছুটে গেলাম ওর কাছে। কেমন একটা ঘোলাটে চাহনি নিয়ে আমার দিকে এক বার তাকাল। তখন খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তার পর ও নিজেই বলল, আমি ঠিক আছি। আমরা সবাই ওকে বললাম, রেডি হতে তোমার যত সময় লাগে নাও।’’

‘রেডি’ হয়ে অবশ্য নিউজিল্যান্ডকে রেয়াত করেননি স্মিথ। টেস্টে নিজের চোদ্দো নম্বর সেঞ্চুরি করে টিমকে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ৩৬৩-৪। নিউজিল্যান্ডের থেকে মাত্র সাত রানে পিছিয়ে। হাতে ছ’টা উইকেট। ক্রিজে রয়েছেন অ্যাডাম ভোজেস (২) এবং নাথান লায়ন (৪)।

দ্বিতীয় দিনের শেষে যা পরিস্থিতি, তাতে ঘরের ছেলের শেষ টেস্টের আবেগকে প্রায় ছাপিয়ে যেতে বসেছে ব্যাগি গ্রিনের ব্যাঘ্র গর্জন, টেস্ট-বিশ্বে শীর্ষস্থান পুনর্দখলের উল্লাস, শত বাউন্সার সামলেও যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে থাকার মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। যদি না কোনও এক ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ব্যাট ফের রূপকথা লিখতে বসে!

ম্যাকালাম-ভক্ত ভিভ

তাঁর তিরিশ বছরের বিশ্বরেকর্ড ভেঙে টেস্টে দ্রুততম সেঞ্চুরি করার জন্য ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে অভিনন্দন জানালেন স্যর ভিভিয়ান রিচার্ডস স্বয়ং। টুইটারে একটি ভিডিও পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘‘ব্রেন্ডন, তোমাকে অভিনন্দন। অনেক বছর ধরেই আমি তোমার ফ্যান। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমার রেকর্ড কে ভাঙলে আমি সবচেয়ে খুশি হব, তা হলে বলব সেটা তুমিই। তুমি এমন এক প্লেয়ার যে দর্শকদের পশ্চাৎদেশ চেয়ারের সঙ্গে আটকে রাখে! বহুকাল যেন সেটা করে যেতে পারো।’’

ছবি: এএফপি, গেটি ইমেজেস

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement