নির্বাচনের দু’দিন আগে চেন্নাইয়ে জমায়েতের ডাক

নিমন্ত্রণে এসে পাল্টা সমর্থন চাইলেন শ্রীনি

এক নয়, একই দিনে দু’টো পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য প্রদর্শন। পূর্বতন অভিজ্ঞ প্রশাসকের বাড়িতে চলে যাওয়া। গিয়ে বলে আসা, আসন্ন বোর্ড নির্বাচনে আপনার আশীর্বাদ প্রভূত প্রয়োজন। নির্বাচনের দু’দিন আগেই চলে আসবেন চেন্নাই। ঠায় এক ঘণ্টা মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে সিএবি সদস্যদের থেকে স্মারক নিয়ে যাওয়া। কখনও নিজের পোট্রেট, কখনও অতিকায় মালা। ক্লান্তি? নেই। বিরক্তি? ভাবলে একশোয় গোল্লা। উল্টে ময়দানি কর্তাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন। কেউ নিজের ক্লাব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করলে বলে দিচ্ছেন, আরে, অত দিন আমি থাকলে তো!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫১
Share:

সস্ত্রীক শ্রীনি। ‘দ্য রিফিউজ’-এ শিশুদের সঙ্গে। ছবি: কৌশিক সরকার

এক নয়, একই দিনে দু’টো পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য প্রদর্শন।

Advertisement

পূর্বতন অভিজ্ঞ প্রশাসকের বাড়িতে চলে যাওয়া। গিয়ে বলে আসা, আসন্ন বোর্ড নির্বাচনে আপনার আশীর্বাদ প্রভূত প্রয়োজন। নির্বাচনের দু’দিন আগেই চলে আসবেন চেন্নাই।

ঠায় এক ঘণ্টা মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে সিএবি সদস্যদের থেকে স্মারক নিয়ে যাওয়া। কখনও নিজের পোট্রেট, কখনও অতিকায় মালা। ক্লান্তি? নেই। বিরক্তি? ভাবলে একশোয় গোল্লা। উল্টে ময়দানি কর্তাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন। কেউ নিজের ক্লাব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করলে বলে দিচ্ছেন, আরে, অত দিন আমি থাকলে তো!

Advertisement

ইতিহাসে মুঘলদের দাক্ষিণাত্য অভিযানের কথা আছে। রবিবার নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন গোটা দিন ধরে যা করলেন, তাকে আবার নিঃসন্দেহে পূর্বাঞ্চল অভিযান হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। উপলক্ষ্য অবশ্যই ২০ নভেম্বরের বোর্ড নির্বাচন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে পুনর্নির্বাচিত হয়ে আসতে হলে পূর্বাঞ্চল থেকেই আসতে হবে।

কেউ কেউ পরে বলছিলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সুক্ষ্ম ভাবে নির্বাচনী প্রচারটাও সেরে গেলেন তিনি। বাংলা এবং অসম, দুই রাজ্যেই। প্রথমে শুধু সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র অনাথাশ্রম ‘দ্য রিফিউজ’-এর অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল শ্রীনির। পরে সূচি পাল্টে সকালে চলে যান গুয়াহাটিতে। সস্ত্রীক কামাখ্যা মন্দিরে পুজো দিয়ে অসমের নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাজকর্ম দেখে বিকেলের দিকে ঢোকেন কলকাতায়।

যেখানে অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্টের আগমন ঘিরে যা হল, অভূতপূর্ব। এয়ারপোর্টে একশো মালা দিয়ে বরণ থেকে শুরু করে পঁচাত্তরটা বাইকের শোভাযাত্রায় অনুষ্ঠানকেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে আসা, জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান কিছু বাদ যায়নি। যা দেখেশুনে আদিত্য বর্মার মতো কারও কারও মনে হল সিএবি এটা করে বুঝিয়ে দিল, বোর্ড নির্বাচনে তারা কোন দিকে। বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিবের আরও দাবি, শরদ পওয়ার সহ শ্রীনি-বিরোধী কর্তারা নাকি পুরো ব্যাপারটাই নজরে রেখেছিলেন আর যা হল, সেটা নাকি পওয়ারদের খুব একটা ভাল লাগেনি। আদিত্যর কথা ধরলে, অনুষ্ঠানে ডালমিয়ার অনুপস্থিতিতে নাকি কিছু আসবে-যাবে না। কারণ শ্রীনি যে সিএবি সুপ্রিমোর সঙ্গে দেখা করবেন, সেটা সবাই জানত।

বোর্ডে সিএবির চূড়ান্ত মনোভাবের ছবি যা-ই দাঁড়াক, অনুষ্ঠানে সিএবি অনুমোদিত ১২১-এর মধ্যে ১০৩ সদস্যের উপস্থিতিতে বোঝা গিয়েছে, সিএবি সদস্যদের মনোভাব এখন কোন দিকে। সিএবির মোট সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ আয়োজিত অনুষ্ঠানে। বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট চিত্রক মিত্র থেকে শুরু করে ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত সবাইকে দেখা গিয়েছে। শুধু যুগ্ম-সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যুবভারতীতে ছিলেন। আর প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া আসেননি। কিন্তু শ্রীনি অনুষ্ঠানের পর তাঁর বাড়ি যান দেখা করতে।

শোনা গেল সিএবি প্রেসিডেন্টকে নাকি শ্রীনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে এসেছেন, নির্বাচনে সিএবির সমর্থন চান। তিনি নাকি চান সিএবি-ই তাঁর নাম বোর্ডের বার্ষিক সভায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রস্তাব করুক। ডালমিয়াকে শ্রীনি বলে দিয়েছেন, ১৮ নভেম্বরই চেন্নাই চলে আসুন। ১৯ তারিখ বোর্ডের বার্ষিক অনুষ্ঠানে থাকুন। ২০ নভেম্বর নির্বাচন কাটিয়ে ফিরবেন। আরও বলেন যে, আমি আপনার গুণমুগ্ধ। আপনার সহযোগিতা দরকার। কলকাতা যেমন আমার কাছে ‘সেকেন্ড হোম’, তেমন চেন্নাইও আপনার!

ঘনিষ্ঠ কাউকে কাউকে শ্রীনি পরে বলেও ফেললেন, পূর্বাঞ্চল সফরে তাঁর তিনটে বড় লাভ হল। প্রথমত, আজই প্রথম কামাখ্যা মন্দিরে যাওয়া হল। দ্বিতীয়ত, তাঁর মা অনাথাশ্রম চালাতেন। রবিবার তাঁর নিজেরও একটা অনাথাশ্রমের জন্য কিছু করা হল (এক কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন)। আর তৃতীয়ত, এত বিতর্কের পর কলকাতাতেই প্রথম তাঁকে নিয়ে কাউকে ভাল কথা বলতে শুনলেন যে, কাজ করলেই সমালোচনা হয়। যা তিনিও বিশ্বাস করেন। কিন্তু অনুষ্ঠানে, সবার সামনে কেউ তাঁকে নিয়ে এমন বলবে, ভাবেননি।

অস্বাভাবিক নয় বোধহয়। মিডিয়া তো এ দিনও তাঁকে আক্রমণ করেছিল।

মিস্টার শ্রীনিবাসন, আপনার জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পন ভয়েস টেস্টে ধরা পড়েছেন।

ভিড় সরাচ্ছেন।

ধোনি-রায়নাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করল মুদগল কমিটি। কী বলবেন?

উত্তর নেই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ চলে গেল। আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে কী করবেন?

“আমি বোর্ডে নেই। বলাটা ঠিক হবে না। বাকি যা জিজ্ঞেস করছেন, সব বিচারাধীন। আমি কী বলব?”

তবে বলেছেন। ঘনিষ্ঠমহলে মইয়াপ্পনকে নিয়ে মিডিয়ার নতুন খোঁচাখুঁচি, তাঁর পূর্বাঞ্চল অভিযান নিয়ে বিরোধীদের জল্পনা, মুদগল কমিশনের আসন্ন রিপোর্ট সমস্ত প্রসঙ্গে একটাই কথা নাকি বলেছেন।

আমার কিচ্ছু আসে যায় না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement