লড়াকু: চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তৈরি রয়েছেন অঞ্জলি।
হরিয়ানা থেকে সোমবার দুপুরে পাটিয়ালা যাওয়ার সময় যখন তাঁকে মোবাইলে পাওয়া গেল, রীতিমতো ছটফট করছেন। কখন সাই কেন্দ্রে পৌঁছবেন আর ট্রেনিং শুরু করবেন। বলে উঠলেন, ‘‘বাসটা এত আস্তে যাচ্ছে, প্রচুর সময় লাগবে।’’ মনে হচ্ছে, দৌড়ে বাসটাকে হারিয়ে দিতে পারবেন? শুনে হেসে উঠলেন অঞ্জলি দেবী।
কে জানে, ৪০০ মিটারের রেস হলে হয়তো সত্যিই বাসটাকে টপকে যেতেন অঞ্জলি! কারণ এই মুহূর্তে ভারতে মেয়েদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি জোরে ৪০০ মিটার আর কেউ দৌড়ন না। এমনকি হিমা দাসও নন। দিন তিনেক আগে লখনউয়ে আন্তঃরাজ্য অ্যাথলেটিক্স মিটে ৫১.৫৩ সেকেন্ড সময় করে এই মরসুমে হিমার দ্রুততম দৌড়ের রেকর্ডই শুধু ভাঙেননি অঞ্জলি, আদায় করে নিয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ছাড়পত্রও। দোহায় এই মাসের শেষে যে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ হবে, তাতে মেয়েদের ৪০০ মিটারে যোগ্যতা অর্জনের সময় হল ৫১.৮০। যে সময় এখনও ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে অঞ্জলি ছাড়া আর কেউ টপকাতে পারেননি।
কিন্তু তার পরেও অঞ্জলির দোহা যাওয়া নিশ্চিত নয়। তাঁকে আরও একটা পরীক্ষায় বসতে হতে পারে। ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় শিবিরে অনেক দিন যোগ না দিলে তাঁকে একটা ‘কনফার্মাটেরি ট্রায়াল’ দিতে হয়। অর্থাৎ, বিচারকদের সামনে আরও এক বার দৌড়তে হয়। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতামান পেরিয়েও আপনাকে আবার পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। কী মনে হচ্ছে? অঞ্জলির জবাব, ‘‘আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা প্রথম পেরিয়েছিলাম গত বছর ভুবনেশ্বরে। তার পরে এ বার আন্তঃরাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা সময় করি। সব রকম পরীক্ষা দিতেই আমি তৈরি।’’
ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের জন্য তৈরি এএফআই-এর বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান ললিত ভানোট দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘নিয়মই আছে, যে অ্যাথলিট বেশ কিছু মাস জাতীয় ক্যাম্পের বাইরে থাকবে, তাদের কোথাও পাঠাতে হলে আলাদা করে ‘কনফার্মাটরি ট্রায়াল’ নিতে হবে।’’ তার মানে অঞ্জলি যদি এই ট্রায়ালে ব্যর্থ হন, তা হলে চ্যাম্পিয়নশিপে নামতে পারবেন না? ভানোট বলছেন, ‘‘হ্যাঁ, ব্যাপারটা সে রকমই।’’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নাম দেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৬ সেপ্টেম্বর। ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী, যদি একাধিক অ্যাথলিট যোগ্যতামান টপকে যান, তা হলে নির্বাচকেরা চূড়ান্ত দল ঠিক করবেন। সে দলে কাকে কাকে রাখা হবে, সেটা সম্পূর্ণ নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত।
তাঁকে কবে পরীক্ষায় বসতে হবে, জানেন না অঞ্জলিও। বেশ কয়েক ঘণ্টার বাস যাত্রা করে পাটিয়ালা সাইয়ে পৌঁছনোর পরে আবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে বললেন, ‘‘আগে এক বার বলা হয়েছিল, এই পরীক্ষার কথা। এখনও চূড়ান্ত কিছু জানি না।’’
অঞ্জলির লড়াই শুরু হয়েছে সেই ছোট্টবেলা থেকেই। কখনও দারিদ্রের সঙ্গে, কখনও প্রতিপক্ষের সঙ্গে। তাঁর ছোটবেলা নিয়ে প্রশ্ন করায় অঞ্জলি বলছিলেন, ‘‘আমার যখন দু’বছর বয়স, তখন বাবা মারা যান। মা প্রচণ্ড কষ্ট করে আমাকে বড় করেন। দুধ বিক্রি করে আমার ট্রেনিংয়ের পয়সা জোগাড় করতেন।’’ চণ্ডীগড় থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে এক প্রত্যন্ত গ্রাম কালওয়াতে বড় হয়ে ওঠা। প্রথমে কবাডি খেলতেন। কিন্তু হঠাৎ কোমরে চোট পাওয়ায় কবাডি থেকে দূরে সরে আসেন। ‘‘এর পরে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে দৌড়ে। মাও মনে করেছিলেন, ট্র্যাকে নেমে আমি কিছু করতে পারব। সে-ই থেকে লড়াই চলছে,’’ অঞ্জলির গলায় জেদের ছাপ স্পষ্ট।
কিন্তু জাতীয় ক্যাম্পে আপনি প্রায় পাঁচ মাস যাননি কেন? অঞ্জলির জবাব, ‘‘আমার গোড়ালিতে চোট ছিল। পারফরম্যান্স খারাপ হচ্ছিল। তাই ফিরে এসে নিজের ডাক্তার দেখাই। ব্যক্তিগত কোচের সঙ্গে ট্রেনিং করি। তাতে যে কতটা উপকার হয়েছে, তা পরিষ্কার।’’ সমস্যা হল, দীর্ঘদিন জাতীয় শিবিরের বাইরে থাকার পরে যে অ্যাথলিট চোখ ধাঁধানো পারফর্ম করেন, তাকে ঘিরে ডোপিংয়ের একটা প্রশ্ন উঠতেই থাকে।
অঞ্জলি কিন্তু কিছুতেই ঘাবড়াচ্ছেন না। বলে দিচ্ছেন, ‘‘আজই পাটিয়ালায় চলে এলাম। এখন এখানেই প্র্যাক্টিস করব। কোচেরা তো আমাকে সামনে থেকেই দেখতে পাবেন। কেমন করছি না করছি, সব বুঝতে পারবেন। এর পরেও পরীক্ষা দিতে হলে আমি তৈরি।’’