আমার কাছে হোলির সেরা আকর্ষণ রংটা নয়! হোলির আসল মজা ‘টার্গেট’দের বেছে বেছে জলরং ভরা বেলুন ছুড়ে মারায়! পাড়া-পড়শি, বন্ধু-আত্মীয় এমনকী বাবার অফিসের কর্মচারীরাও বেলুনবাজি থেকে নিস্তার পান না। এ সব ক্ষেত্রে আমার চাঁদমারির সাফল্য রীতিমতো বুক ফুলিয়ে বলার মতো। আর যখন নিজেকে এক্কেবারে বীরপুরুষ বলে মনে হতে শুরু করে, তখন বউ আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেও টার্গেট করি। এখানে অবশ্য আমার হিট পার্সেন্টেজ বা চাঁদমারির শতাংশ বেশ খারাপ।
আচ্ছা, সেটা কি চাপ থাকে বলে? নাকি নার্ভাস হয়ে যাই? হয়তো দু’টোই!
ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা কিছুটা এই রকম। বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে অবিস্মরণীয় সব ইনিংস খেলা প্লেয়ারদের বাইরে থেকে দেখে মনে হয় এরা টাইটেনিয়ামের মতো মজবুত। কিন্তু প্রতিবার চাঁদমারি করতেই হবে, এই চাপটা কখনও সখনও সেরাদেরও দমবন্ধ করে দেয়। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে আজ আমার প্রাক্তন টিমমেটদের মাথায় কী চলছে সেটা আন্দাজ করতে পারছি। ওদের কাজটা শাশুড়িকে জল ভরা বেলুন ছুড়ে মারার চেয়ে বহুগুণ বেশি কঠিন! আজ একটা ভুল মানে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া। যে দেশ বিশ্বকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ দিয়েছে, তারা কেন টি-টোয়েন্টিতে ২০০৭-এর পর আর চ্যাম্পিয়ন হতে পারছে না, এর জবাব দেওয়াও তখন খুব কষ্টকর হবে।
টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত ভারত আর অস্ট্রেলিয়া, দু’টো টিমই কিন্তু নিজেদের সেরা খেলাটা খেলেনি। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে কেউ কেউ জ্বলে উঠলেও পুরো টিম একসঙ্গে সর্বশক্তি দিয়ে পেশাদারি দক্ষতায় নিজেদের উপস্থিতি টের পাওয়াতে পারেনি।
এবং এই তথ্যটাই মাঠে নামার আগে টিম ইন্ডিয়ার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বড় টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়াকে পেড়ে ফেলার সেরা সুযোগ এটাই। মানছি, উসমান খোয়াজা ব্যাটিংটা স্বপ্নের মতো করছে। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নারকে মিডল অর্ডারে ঠেলা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ওদের টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তাভাবনায় গলদ রয়েছে। না হলে বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানকে শুরুতে নামিয়ে ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের ফায়দাটা তুলবে না কেন? ওদের বোলিংয়েও কোনও জুজু নেই।
নাগপুর আর কলকাতায় যা দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে আজও ভারতীয় স্পিনারদের ভূমিকাটাই আসল হবে। তাই অশ্বিন আর ওর সহযোগীদের লক্ষ্যভেদে সফল হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। দু’টো টিমের যুদ্ধে একটা ছোট মাপের লড়াই চলবে ভারতীয় স্পিনারদের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের। আমি সংখ্যাতত্ত্বের তেমন ভক্ত নই। কিন্তু কয়েকটা ব্যাপার অগ্রাহ্যও করতে পারছি না। লিগের ম্যাচে এশীয় স্পিনারদের উইকেট প্রতি গড় প্রায় ২৯ রান। এশিয়ার বাইরের স্পিনারদের গড় ১০.৪৮। এশীয় স্পিনারদের ইকনমি রেটও বেশি। মন বলছে, হতে পারে নিউজিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনার আর অস্ট্রেলীয় অ্যাডাম জাম্পাকে আমরা জাডেজা-আফ্রিদিদের চেয়ে কম দেখেছি বলে বেশি রহস্যময় লাগছে। কিন্তু এশীয় সিমারদের ৪১.৫৮ গড়ের চেয়ে অ-এশীয় সিমারদের গড়ও যে কম। মাত্র ২৫.৯২।
তাই আশঙ্কা থাকছেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর নিউজিল্যান্ড ইতিমধ্যেই সেমিফাইনালে। ইংল্যান্ডও মনে হচ্ছে এতদিনে টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে বেরিয়ে খেলতে শিখেছে। এমন তো নয় শেষ চারে কোনও এশীয় দেশ উঠতেই পারল না?
সেটা হলে কিন্তু ব্যাপারটা সিলসিলায় অমিতাভ বচ্চনের গানটার মতো মহাকাব্যিক হয়ে যাবে! ‘‘বেলা চামেলি কা সেজ সাজায়া... সোভে গোরি কা ইয়ার, বালাম তরসে...রঙ্গ বরসে।’’ মানে বলতে চাইছি, আজ ভারত যদি টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায়, তা হলে পার্টির মেজাজটা বর বিহীন বাসরের মতোই পানসে হয়ে যাবে।
‘রঙ্গ বরসে’ অবশ্য আমার সবচেয়ে প্রিয় হোলির গান। বহু পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ‘বালম পিচকারি’। একটু দেরি হয়ে গেলেও, সবাইকে জানাই হ্যাপি হোলি! (হকআই কমিউনিকেশনস)