চর্চা: স্পিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সুনীল (বাঁ দিকে), রাজুর।
ঘণ্টায় ১৪৫ কিমি গতিতে ধেয়ে আসছে প্রত্যেকটি ডেলিভারি। মহম্মদ শামি, নবদীপ সাইনি, যশপ্রীত বুমরাদের ভয় পেতে শুরু করেছে ক্রিকেটবিশ্ব। বিরাট কোহালির দলে তাঁরাই এখন মূল স্তম্ভ।
পেসারদের উন্নতির পর থেকেই বিদেশের মাটিতে সিরিজ জিততে শুরু করেছে ভারত। টেস্ট, ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি—তিনটি ফর্ম্যাটেই। যে দেশ থেকে এক সময় বিষাণ সিংহ বেদী, এরাপল্লি প্রসন্ন, হরভজন সিংহ, অনিল কুম্বলে, মনিন্দর সিংহের মতো স্পিনারেরা উঠে এসেছেন, বর্তমানে সে দেশেই চলছে গতির বিপ্লব। এই পেস বিবর্তনের জন্য কি ভারতীয় ক্রিকেটে স্পিন শিল্প সঙ্কটে?
বর্তমান ক্রিকেট সমর্থকেরা তা না মানতেই পারেন। তাঁরা হয়তো তুলে ধরবেন আর অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজার উদাহরণ। কিন্তু টি-টোয়েন্টির যুগে বলকে হাওয়ায় ভাসানোর সাহস ক’জন পান? প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনারদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘যুগের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই ক্রিকেটের অঙ্গ।’’ কারও অভিমত, ‘‘ফর্ম্যাট বদলালেই যে স্পিন শিল্প ভুলে নিজেকে বদলে ফেলতে হবে, তা কিন্তু নয়।’’
প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার মনিন্দর সিংহকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাঁর উত্তর, ‘‘আমাদের সময় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছিল না। ওয়ান ডে-তে পাওয়ারপ্লে ছিল না। তখন হাওয়ায় ভাসিয়ে বল করার সাহস পেত অনেকে। এখন ওয়ান ডে-তে দু’দিক থেকে নতুন বলে শুরু করা হয়। তাতে বল পুরনো হয় না। স্পিনাররাও বল ঘোরানোর সুযোগ পায় না। তাই গতি বাড়িয়ে রান আটকানোর পথই বেছে নিতে হচ্ছে স্পিনারদের।’’ মনিন্দর যোগ করেন, ‘‘ভারতীয় দলের অধিনায়কের উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। ধোনি যেমন স্পিনারদের উপরে ভরসা রাখত। ও অধিনায়ক থাকাকালীন টেস্ট অথবা ওয়ান ডে-তে ঘূর্ণি পিচ দেওয়া হত। বিরাট কিন্তু পেসারদের পছন্দ করে। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাই পেস সহায়ক উইকেট তৈরি হচ্ছে। সেটাও স্পিন শিল্পে ধাক্কা লাগার একটা কারণ।’’
প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনার সুনীল জোশি যদিও জানিয়ে দিলেন, ফর্ম্যাট অনুযায়ী একজন স্পিনারকে নিজেকে বদলানোর প্রয়োজন নেই। সুনীলের কথায়, ‘‘আমি তিনটি ফর্ম্যাটই খেলেছি। আর প্রত্যেকটিতেই একই রকম বল করার চেষ্টা করেছি। মনে রাখতে হবে একটি খারাপ বল কিন্তু যে কোনও ফর্ম্যাটেই খারাপ, ঠিক যেমন একটি ভাল বলও সব ফর্ম্যাটেই ভাল। স্পিনাররা যদি ফর্ম্যাট অনুযায়ী নিজেদের পরিবর্তন করে, তা হলে শিল্প তো নষ্ট হবেই।’’ তাঁর আরও মত, ‘‘দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটি রাজ্য থেকে বিস্ময় স্পিনার উঠে আসার প্রবণতা বেড়েছে। তাতে কিন্তু কোনও লাভ হয় না। এক বছরের পরেই সেই বিস্ময় হারিয়ে যায়। যেমন অজন্তা মেন্ডিস, সুনীল নারাইনরা হারিয়ে গিয়েছে। কোচেদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত, তাঁরা যেন ছাত্রদের ফ্লাইট দিয়ে বল করার সাহস বাড়াতে পারে।’’
বেঙ্কটপতি রাজু মনে করেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলতে হয় প্রত্যেককে। স্পিনাররাই বা বাদ যাবেন কেন? প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনারের কথায়, ‘‘স্পিন শিল্প হারিয়ে গিয়েছে, একেবারেই মানি না। টি-টোয়েন্টিতে নিশ্চয়ই টেস্টের বোলিং করা যাবে না। অথবা টেস্টে রান আটকানোর চেষ্টা করলে উইকেট পাওয়া মুস্কিল। একজন স্পিনারকে শিখতে হয়, কোন পরিস্থিতিতে কোন বল করা উচিত। আগে এত ফর্ম্যাট ছিল না। তাই ফ্লাইট দিয়ে বল করাকেই শিল্প বলা হত। অথচ বিভিন্ন ফর্ম্যাটের সঙ্গে একজন স্পিনার কী ভাবে মানিয়ে নিচ্ছে, সেটাও কিন্তু শিল্প হিসেবেই দেখা উচিত।’’