কোচির পানামপিল্লাই নগর অনেকটা সল্টলেকের মতোই।
১৬৭০ সালে তৈরি কোচির প্রাচীনতম গির্জা ‘চার্চ অফ আওয়ার লেডি অফ ডলোরাস’-কে কেন্দ্র করেই সাতচল্লিশ বছর আগে মধ্যবিত্তের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল পানামপিল্লাই নগর। কোচির প্রথম পরিকল্পিত উপনগরী। ৩৪৭ বছরের পুরনো এই গির্জার নাম অবশ্য বদলে গিয়ে হয়েছে অম্বিকাপুরম চার্চ। বদলে গিয়েছে পানামপিল্লাই নগরের ছবিও।
এই মুহূর্তে কোচির উচ্চবিত্ত শ্রেণির সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। এই বদলে যাওয়া উপনগরীতেই তিকি -তাকাকে অস্ত্র করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করে দিল স্পেন।
রবিবার সকাল দশটা নাগাদ গির্জার সামনে সমাধিক্ষেত্রের ঠিক উল্টো দিকের মাঠেই অনুশীলনে নামল আবেল রুইস, তোরেস ফেরান-রা। সারা রাত বৃষ্টির ফলে মাঠ ভিজে। কিন্তু তা নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই স্প্যানিশ শিবিরে। উল্টো স্বস্তি। একে তো বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রার পারদ অনেকটাই নেমে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, স্পেনের ফুটবলাররা ভেজা মাঠে অনুশীলন করতেই পছন্দ করে। এ দিন সব কিছুই মনের মতো পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন: নিউ ক্যালিডোনিয়াকে গোলের মালা পরিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল ফ্রান্স
শনিবার ব্রাজিলের বিরুদ্ধে প্রথম দলে খেলা ফুটবলারদের এ দিন খুব বেশি অনুশীলন করাননি কোচ সান্তিয়াগো দিনেয়া স্যাঞ্চেজ। মাঠের এক দিকে নেট টাঙিয়ে ফুটভলি-তে ব্যস্ত ছিল তোরেস-রা। বাকি ফুটবলারদের প্র্যাকটিস করালেন সান্তিয়াগো। গির্জা থেকে ভেসে আসা প্রার্থনা সঙ্গীতের সুরের মতো ছন্দময় সেই অনুশীলন।
তিকি-তাকা-র প্রধান শর্তই হচ্ছে, নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে আক্রমণে ওঠা। বারবার জায়গা বদল করে বিপক্ষের ফুটবলারদের বিভ্রান্ত করে দেওয়া। অনুশীলনে বিপক্ষের ফুটবলার আর কোথায় পাওয়া যাবে? তাই মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ফুটবলারের আদলে তৈরি গোটা পাঁচেক মডেল রাখা ছিল। যা সাধারণত ফ্রি-কিক অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করেন কোচরা। বাকি ফুটবলারের অভাব মেটাতে ভরসা ফাইবারগ্লাসের তৈরি লম্বা লম্বা লাঠি (বাউন্ডারি পোল) ও হার্ডলস! এর মধ্যে দিয়েই নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে হচ্ছিল স্পেন ফুটবলারদের। একই সঙ্গে চলছিল ক্রমাগত জায়গা পরিবর্তন। তবে বল বাউন্ডারি পোল বা ফুটবলারের মডলে ধাক্কা লাগলেই বাঁশি বেজে উঠছিল কোচের। শর্ত ছিল, মাঝমাঠ থেকে বল নিজেদের দখলে রেখে বিপক্ষের সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে গোল করে আসা। তাই সামান্য ভুলভ্রান্তি হলেই মহড়া থামিয়ে দিচ্ছিলেন সান্তিয়াগো।
স্পেনের এই দলটার প্রধান সমস্যা, তিন কাঠির মধ্যে বল রাখতে না পারা। এক নম্বর স্ট্রাইকার আবেল-ও শনিবার ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একাধিক সুযোগ নষ্ট করেছে।
স্ট্রাইকাররা যখন গোল না পেয়ে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন, তখন তাঁকে চাঙ্গা করতে কোচরা ফাঁকা গোলে বল ঠেলার অনুশীলন করান। এর ফলে হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পান তাঁরা। এ দিন স্প্যানিশ স্ট্রাইকারদেরও একই অনুশীলন করালেন কোচ। শুধু তাই নয়। প্রথম ম্যাচে স্পেনের আক্রমণের সময় ব্রাজিলের অধিকাংশ ফুটবলারই রক্ষণে নেমে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার নিজার-ও সম্ভবত একই স্ট্র্যাটেজি নেবে। তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকবে গোল না খাওয়া। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে এই ম্যাচটার ওপরেই নির্ভর করছে স্পেনের বিশ্বকাপ ভাগ্য। সেই কারণে অনুশীলন শেষ করার বাঁশি বাজিয়েও সিদ্ধান্ত পরবির্তন করলেন সান্তিয়াগো। প্রথমে গোলপোস্ট তুলে এনে মাঠের আয়তন কমিয়ে দিলেন। তার পর দু’টো দল করলেন। এক দিকে ডিফেন্ডার ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডাররা। অন্য দলে স্ট্রাইকার ও অ্যাকাটিং মিডফিল্ডাররা। শুরু হল ছোট্ট জায়গার মধ্যে থেকে গোলের রাস্তা খুঁজে বার করার মহড়া। উদ্বিগ্ন স্পেন কোচ বললেন, ‘‘এই ম্যাচটা জেতা ছাড়া আর আমাদের সামনে কোনও পথ খোলা নেই। ফুটবলাররাও জানে নাইজের ম্যাচের গুরুত্ব। আশা করছি, ঘুরে দাঁড়াতে আমরা সফল হব।’’
তিকিতাকা অস্ত্রে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ইউরোপ সেরাদের পূরণ হবে কি না তা অবশ্য সময়ই বলবে।