সাংবাদিকদের মুখোমুখি দেবী শেঠি। ছবি: টুইটার থেকে
ধমনীতে ব্লকেজ ধরা পড়েছে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হয়েছে। ফলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাদাগিরি’ থামবে না। অটুটই থাকবে। মঙ্গলবার আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি মহারাজের সঙ্গে দেখা করে এবং মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর সাফ জানিয়ে দিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠী। তাঁর কথায়, ‘‘সৌরভ একেবারে ফিট। স্বাভাবিক জীবনযাপন তো বটেই। কিছুদিন পর ম্যারাথনও দৌড়তে পারবেন সৌরভ। চাইলে ক্রিকেটও খেলতে পারবেন। বিমানও চালাতে পারবেন। কোনও সমস্যা হবে না।’’ প্রসঙ্গত, বুধবার সৌরভকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সৌরভের চিকিৎসায় ১০ জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হৃ্দরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি। মঙ্গলবার সকালে তিনি বেঙ্গালুরু থেকে শহরে পৌঁছন। তার পর হাসপাতালে গিয়ে সৌরভের সঙ্গে কথা বলেন। তারও পরে সৌরভের শারীরিক অবস্থা এবং তাঁর চিকিৎসার খুঁটিনাটি নিয়ে বৈঠক করেন মেডিক্যাল বোর্ডের বাকি সদস্যদের সঙ্গে।
এর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শেঠি প্রথমেই বলে দেন, ‘‘হার্ট অ্যাটাক হলেও সৌরভের হৃদ্যন্ত্রে কোনও সমস্যা নেই। শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় কোনও সমস্যা হবে না। একেবারে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন মহারাজ।’’ পাশাপাশিই তিনি বলেন, ‘‘সৌরভ ধূমপান করেন না। অন্য কোনও বদভ্যাসও নেই। নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। তার পরেও এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকদের। সৌরভ সবই করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন কোনও শারীরিক পরীক্ষা করাননি। যে পরীক্ষা এই দেশের যে কোনও রাস্তার ল্যাবরেটরিতেও করানো যায়। ফলে আগে থেকে তাঁর অসুখের কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সৌরভ ওই পরীক্ষা করালে অন্তত ১৫ বছর আগে এই ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যেত।’’
আরও পড়ুন: টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে গেলেন লোকেশ রাহুল
প্রসঙ্গত, সৌরভের শেষবার ‘লিপিড প্রোফাইল’ বা ওই ধরনের রক্তপরীক্ষা হয়েছিল ১৬-১৭ বছর আগে। এর মাঝখানে তিনি নিয়মিত কোনও পরীক্ষা করাননি। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৪০ বছর বয়স হওয়ার পর বছরে অন্তত দু’বার ওই ধরনের পরীক্ষা করাত হয়। তা হলে প্রত্যেকেরই নিজেদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারনা থাকে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করানো যায় বা সাবধানতা অবলম্বন করা যায়।
আরও পড়ুন: বঙ্গ রাজনীতির ‘ওয়্যাগ’ কাহিনি, পরিত্রাণ খুঁজছে জেরবার বিজেপি
তবে শেঠি পাশাপাশিই জানিয়েছেন, আলিপুরের ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা অত্যন্ত তৎপরতা ও দক্ষতার সঙ্গে মহারাজের চিকিৎসা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের যে কোনও দেশে ঠিক এই চিকিৎসাই করা হত। এর বাইরে কিছু হত না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন বাইপাস সার্জারির পরেও সংশ্লিষ্ট রুগী বাণিজ্যিক বিমান চালানোর লাইসেন্স পেতে পারেন। অর্থাৎ, নিজের তো বটেই, ৩০০-৪০০ যাত্রীর দায়িত্বও তিনি নিতে পারেন। সৌরভও কয়েকদিন পর ম্যারাথন দৌড়োতে পারবেন। চাইলে বিমানও চালাতে পারবেন। জটিল কিছু হয়নি। আপাতত অন্য সকলের মতোই ঘরে বসে কাজও করতে পারবেন সৌরভ।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারই ছাড়া হবে সৌরভকে। দু’সপ্তাহ পর মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা আবার আলোচনায় বসবেন। তখনই ঠিক করা হবে সৌরভের বাকি দু’টি ব্লকেজ সরাতে স্টেন্ট বসানোর প্রয়োজন হবে কি না। তার পর সেই অনুযায়ী অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।