অধিনায়ক থাকার সময়ে এই ব্লেজার পরেছেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে আরও একবার সেই ব্লেজার পরলেন সৌরভ।
পুরনো ব্লেজারে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা। আরব সাগরের তীরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বারের জন্য় মিডিয়ার মুখোমুখি হওয়ার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখা গেল জাতীয় দলের ব্লেজারে। শুরুতেই জানালেন, এটা ক্রিকেটার থাকার সময়ের ব্লেজার। অবশ্য ক্রিকেটার সৌরভ ও প্রশাসক সৌরভের মধ্যে কেটে গিয়েছে বেশ কিছু বছর। বদল এসেছে চেহারাতেও। তবুও ক্রিকেটার হিসেবে যে সৌরভ তিনি ছড়িয়েছেন, তার স্মৃতি হিসেবেই সঙ্গী হল পুরনো ব্লেজার। রসিকতাও করলেন ব্লেজার নিয়ে।
তার কিছু ক্ষণ আগে সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি। বুধবার বোর্ডের সদর দফতরে বার্ষিক সাধারণ সভা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। যা টুইট করে জানিয়ে দিয়েছিল বিসিসিআই। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে শুরু হল সৌরভ-যুগ। বার্ষিক সাধারণ সভার পরে সাংবাদিক বৈঠকে সৌরভ যা বললেন—
— নতুন শুরু। আশা করছি পরিবর্তন আনতে পারব। বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে আপস করব না। দুর্নীতি-মুক্ত রাখব। আমি যেমন ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, তেমনই চালাব বিসিসিআই। যেটুকু সময়ই পাই না কেন, ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলেই আশা করছি।
আরও পড়ুন— ভয়ঙ্কর অভিষেক থেকে দুর্দান্ত কামব্যাক, সৌরভের কেরিয়ারের মোড় ঘোরানো কিছু মুহূর্ত
— আমাদের দলটা তরুণ। গত তিন বছরে কী হয়েছে সেই ব্যাপারে কোনও ধারণা নেই। আমরা সব কিছু সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য খাটব। আর সেটাই তো আমাদের কাজ।
— বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে অনেক দিকপালদের কথা মনে পড়ছে। আমি যখন ক্যাপ্টেন হয়েছিলাম, তখনও প্রাক্তন সব তারকা ক্যাপ্টেনদের কথা মনে হয়েছিল।
— বিরাট কোহালি এই দলে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অন্তত আমি ওকে সে ভাবেই দেখছি। সব রকম ভাবে বিরাটকে সাহায্য করব। দল নিয়ে কাল ওর সঙ্গে আলোচনা হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার সঙ্গেই। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরে গেলেও গত তিন-চার বছর ধরে দুর্দান্ত খেলছে ভারত। বিরাটদের সব রকম সাহায্য করব। টেস্ট সেন্টার নিয়ে বিরাট যা চেয়েছে, তা নিয়েও কথা বলবো।
— গত তিন বছরে ম্যাচের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। আমরা যত গুলো ম্যাচ খেলতাম, এখন তার থেকে অনেক বেশি ম্যাচ খেলা হয়।
— যে ভাবে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছি, সে ভাবেই বোর্ডকে নেতৃত্ব দেব। কন্ট্রোল শব্দটা আমি পছন্দ করি না। ঠিক ভাবে বোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য।
— সততার সঙ্গে কাজ করে বোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
— আমাকে যখন বাদ দেওয়া হয়েছিল, তখন সবাই বলেছিলেন, আমি শেষ হয়ে গিয়েছি। কিন্তু, আমি নিজের উপরে আস্থা রেখেছিলাম। ফিরে আসার পরেও আমি খেলে গিয়েছি। চ্যাম্পিয়নরা দ্রুত শেষ হয়ে যায় না। ধোনি আমাদের গর্ব। আমি যতদিন রয়েছি, প্রত্যেকই উপযুক্ত সম্মান পাবে। জানি না ওর মনে কী আছে। ভারতীয় ক্রিকেটে ওর অবদানের জন্য ধোনির মতো কিংবদন্তিকে নিয়ে আমরা গর্বিত।
আরও পড়ুন— বোর্ড প্রেসিডেন্ট হলেন সৌরভ, টুইট করল বিসিসিআই
— ডালমিয়াজি যখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন আমাকে কোনও দিন কোনও কাজে উনি বাধা দেননি। শ্রীনিবাসনের সঙ্গে ধোনির সম্পর্ক আপনারা সবাই জানেন। আমার ও কোহালির সম্পর্ক তেমনই থাকবে। আমিও কোহালিকে সাহায্য করব। কোহালি অনেক বড়মাপের ক্রিকেটার। অন্য উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছে কোহালি।
— ভারতীয় ক্রিকেটারদের জীবন সহজ করাই আমার উদ্দেশ্য। কঠিন করা নয়। আমি নিজেও ক্যাপ্টেন ছিলাম। তাই ওদের ব্যাপারটা বুঝি। পারফরম্যান্স সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আর এখন বিশ্বে ভারতই সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ দল। ভারত নিয়মিত জিতছে। এটাই বড় ব্যাপার।
—আইসিসি-র কাছ থেকে অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। সেই টাকা পাওয়ার জন্য আলোচনা করব।
আরও পড়ুন— বিদ্রোহে অনড় শাকিবরা, বরফ গলাতে ভরসা মাশরফি
— ওয়াংখেড়েতে প্রথম যখন এসেছিলাম, তখন অনূর্ধ্ব-১৯ খেলি। এই মাঠেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনূর্ধ্ব-১৯ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলাম। এই মাঠে টেস্টে সেঞ্চুরি রয়েছে। টেস্ট জিতেওছি এখানে। তখন অবশ্য মাঠের চেহারা অন্যরকম ছিল। গত বছর দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়েও এসেছি এই মাঠে। ক্রিকেট খেলার জন্য মুম্বই দুর্দান্ত শহর। কী সব গ্রেটরা বেরিয়েছে এখান থেকে। গাওস্কর, তেন্ডুলকর, বেঙ্গসরকর, রোহিত, রাহানে। ওয়াদেকরের কথাও বলতে হবে।