যেন গুরুমশাই। মঙ্গলবারের সঞ্জয় সেন। -নিজস্ব চিত্র
শিলংয়ের বিভীষণ হয়ে বাগানে হাজির কর্নেল!
ছয় ম্যাচ অপরাজিত সঞ্জয় সেনের দলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শহরে হাজির যে ক্লাব, সেই পাহাড়ি টিমেই গত দু’বছর কাটিয়ে এসেছেন কর্নেল গ্লেন। ফলে নিজের পুরনো ঘরে ফাটল ধরানোর অনেক রসদ রয়েছে তাঁর কাছে। আর সে সব কর্নেল উগরেও দিচ্ছেন তাঁর বর্তমান কোচের কাছে।
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও রাখঢাক না রেখেই ত্রিনিদাদ টোবাগোর প্রাক্তন বিশ্বকাপার বলে দিলেন, ‘‘লাজং ভাল টিম। তবে ওদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আমাদের কোচকে দিয়েছি। সতীর্থ ফুটবলারদের সঙ্গেও ড্রেসিংরুমে আমার লাজং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছি। কারণ, ম্যাচটা থেকে আমাদের তিন পয়েন্ট চাই-ই চাই।’’
টাম্পাইন্স রোভার্স ম্যাচের পর বাগানের কর্নেলের পায়ে আর গোল নেই। আই লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন লাল-হলুদের র্যান্টি মার্টিন্সের থেকে। কিন্তু তাতে কী! একক তারকা নয়, সনি নর্ডি-কাতসুমিরা যে একটা তারকা টিম হয়ে উঠতে চাইছেন, সেটা যেন কর্নেলের হাবেভাবেই বোঝা যাচ্ছে। যেটুকু পারছেন তা দিয়েই দলকে আই লিগে ‘ডাবল’ করতে সাহায্য করছেন। বাগান কোচও তো সেটাই চান।
কলকাতায় হঠাৎ-ই বেশ গরম পড়েছে। সেই পরিস্থিতিতেও আজ পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে চাইছে বাগান। জিতলে লিগ টেবলে শীর্ষে চলে যাবে সবুজ-মেরুন। তার আগের দিনই অবশ্য জ্বরে কাবু সবুজ-মেরুন কোচ। গলা-গা-হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বলে দিলেন, ‘‘জেতা সহজ হবে না। তবু জিততেই হবে। এখন আর পিছন ফিরে তাকানোর সময় নেই। তাও বলছি গতবার ওরা আমাদের সমস্যায় ফেলেছিল।’’ সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, তাঁর দলকে সামনে কম সময়ে বেশি ম্যাচ খেলতে হবে বলে টিম ক্লান্ত হয়ে পড়ার আগে যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট তুলে রাখতে চাইছেন আই লিগে।
শহরে আচমকা গরমের মধ্যেও বাগানে বসন্ত আসছি-আসব করছে। সেই আবহেও সুখে নেই সনি নর্ডি। বেঙ্গালুরু ম্যাচের ‘ক্ষত’ নিয়ে জেরবার। নিজেই জানাচ্ছেন, যা পরিস্থিতি বুধবার পুরো ম্যাচ খেলা সম্ভব নয়। আর তাঁর কোচের মন্তব্য, ‘‘যদি সনিকে নামাই, শুরুতে খেলিয়ে পরে তুলে নেব। ঝুঁকি নেব না। সামনে অনেক ম্যাচ রয়েছে।’’
সনির অনিশ্চয়তার দিনে কর্নেলের সামনে হাজির চ্যালেঞ্জ। পুরনো দলের বিরুদ্ধে গোল করে আবার স্বমহিমায় ফেরার। এবং ‘টিম মোহনবাগান’-এর আরও এক প্রমাণ রেখে হাইতি মিডিওই বিশ্বকাপার বন্ধুকে সাহায্য করছেন উদারমনা হয়ে। এ দিনই যেমন অনুশীলনের পর দেখা গেল, মোহনবাগান মাঠের পাশে প্লেয়ারদের অস্থায়ী ছাউনিতে বসে গ্লেন আর সনি গল্পে মজে। তবে সেটা নিছক আড্ডা যে ছিল না, গাড়িতে ওঠার আগে সনি নিজেই সেটা বলে গেলেন। ‘‘গ্লেনের সঙ্গে আমার বেশি দিনের পরিচয় নয়। তাই লিগের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সম্পর্কটা দু’জনে মিলে আরও সহজ করে নিচ্ছি। যাতে ম্যাচে আমাদের বোঝাপড়া আরও বাড়ে।’’
এমনিতে পেন ওরজিদের লাজং আই লিগ টেবলে খুব ভাল জায়গায় নেই। ছয় ম্যাচে মাত্র দু’টো জিতেছে। আট পয়েন্ট। রয়েছে ছয় নম্বরে। কোচ থাংবোই সিনটোকে আরও ভাবাচ্ছে বাগানের আগের ম্যাচেই সনি-জেজে জুটির আগুনে পারফরম্যান্স। কেন লুইসের ভয়ঙ্কর দৌড়। মরিয়া লুসিয়ানোদের নিজেদের রক্ষণ ভাঙতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা। আজ সঙ্গে হয়তো যোগ হবে— কর্নেল গ্লেনের গোলের বাড়তি খিদে। লাজং কোচ বললেন, ‘‘মোহনবাগান এই মুহূর্তে দেশের এক নম্বর দল। ওদের সঙ্গে ড্র করলেও তাই ক্ষতি নেই।’’
পাহাড়ি ছেলেদের গতি, নাছোড় মনোভাব, কলকাতার মাঠে পেনের নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ-ই সিনটোর যতটুকু অস্ত্র হতে পারে আজ। যা টপকাতে সঞ্জয় কোন অস্ত্রে বেশি শান দিচ্ছেন? একটাই—টিমগেম। ফুটবলারদের একাত্ম রাখতে চাইছেন। চাইছেন ড্রেসিংরুমে আত্মবিশ্বাস থাকুক, আত্মতুষ্টি নয়।
পাহাড়ে ফাটল ধরানোর সংকল্প নিয়ে বারাসতের মাঠে নামার আগে অবশ্য বাগান কোচের জন্য এক জোড়া সুখবর। এক) বেঙ্গালুরু কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড ফোন করে ক্ষমা চেয়েছেন তাঁর কাছে। বদমেজাজি কোচ বলেছেন, ‘‘আমি শনিবার মোহনবাগান ম্যাচ হারার পর যে মন্তব্য আপনার সম্পর্কে করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইছি।’’ দুই) এক মাসের মধ্যে আই লিগ-এএফসি কাপ মিলে আটটা ম্যাচ খেলতে হবে সঞ্জয়ের দলকে। তাই আই লিগে বাগানের একটা ম্যাচ (৫ মার্চ) পিছিয়ে দিয়েছে ফেডারেশন। বদলে হবে ২৬ তারিখ। ক্লাবের অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বললেন, ‘‘আমাদের টিমের জাতীয় ফুটবলারদের ছাড়া ওই ম্যাচ খেলব আমরা। তাতেও সমস্যা নেই।’’
প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমাপ্রার্থনা, কঠিন সময়ে নিজেদের একটা ম্যাচ পিছিয়ে যাওয়া— বাগান কোচ ভেতরে ভেতরে খুশি হলেও তা নিয়ে প্রকাশ্যে হইচই করতে আদৌ রাজি নন। বরং পাহাড় পেরোতে জ্বরের মধ্যেও নোটবই-পেন্সিল নিয়ে চেতলার বাড়িতে বসেই অঙ্ক কষে চলেছেন!
বুধবারে
আই লিগ— মোহনবাগান: শিলং লাজং (বারাসত, ৭-০৫)।