ক্রিকেটের ধাত্রীগৃহ লর্ডসে এমসিসি-র কমিটি রুম। বেশির ভাগ চেয়ারে প্রাক্তন ইংল্যান্ড ক্রিকেটার মাইক গ্যাটিং, মাইক ব্রিয়ারলি, পোকক, লিভার, অ্যাঙ্গাস ফ্রেজার...।
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসক বিসিসিআইয়ের কার্যকরী কমিটি। ৩১ জনের মধ্যে মাত্র তিন জন ক্রিকেটার! তাঁদেরও আবার দু’জন প্রাক্তন টেস্ট প্লেয়ার শিবলাল যাদব আর ব্রিজেশ পটেল। অন্য জন রঞ্জীব বিসওয়াল রঞ্জি পর্যায়ের।
উইম্বলডনের কার্যকরী কমিটি? প্রাক্তন ব্রিটিশ টেনিস তারকা টিম হেনম্যান, গ্রেগ রুসেডস্কি ছাড়াও বিখ্যাত টেনিস কোচ ক্যারেন ডার্ভিশ, পল রিলে-রা রয়েছেন তাতে।
প্রাচ্যের উইম্বলডন সাউথ ক্লাবের কমিটি? এনরিকো পিপার্নো আর অজিত লাল ছাড়া সে ভাবে আদ্যন্ত টেনিস প্লেয়ার বলতে কেউ নেই ১১ সদস্যের কমিটিতে!
এখানকার ফুটবল, হকি, টেবল টেনিস, অ্যাথলেটিক্সের সংস্থাগুলোতে অনেক দিন যাবৎই সেই খেলাটার প্রকৃত দরের প্লেয়ারদের কার্যকরী কমিটিতে উপস্থিতি দূরবিন দিয়ে খোঁজার মতো! এ বার টেনিসেও সেই অবস্থা বোধহয় হতে চলেছে।
ভারতের তো বটেই, এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো তথা ঐতিহ্যশালী টেনিস ক্লাব সাউথ ক্লাবে নির্বাচন আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর। সপ্তাহ দুয়েক আগেই প্রেসিডেন্ট রজত মজুমদার সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় সাউথ ক্লাবের এ বারের বার্ষিক সাধারণ সভা অন্য তাৎপর্য পাচ্ছে। রটনা ছিল, রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি রজতবাবু হাজতে বসেও নাকি সাউথ ক্লাবের নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সেটা শেষমেশ রটনাই থেকে গেলেও এখন আবার সাউথ ক্লাবের কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, ২৬ তারিখের আগে আদালত থেকে জামিন পেয়ে গেলে সাউথ ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে রজত মজুমদারই সভা পরিচালনা করবেন।
যেটাকে রবিবার তীব্র ভাবে নস্যাৎ করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে দাঁড়ানো পিপার্নো বললেন, “একদম বাজে কথা। মিস্টার মজুমদার জেলে যাওয়ার পরেই ক্লাব কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্টের এক্তিয়ারে প্রেসিডেন্টের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব দিয়েছে। তাই ছাব্বিশ তারিখের এজিএম কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমিই পরিচালনা করব।”
নির্বাচনে পিপার্নোর সঙ্গে লড়াই ক্লাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আই এন চতুবের্দীর। যদিও ক্লাবের অন্দরে শোনা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইটা পিপার্নো বনাম চতুর্বেদী হলেও নির্বাচনে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে জয়দীপ-গোষ্ঠী। সে যতই ক্লাবের শেষ প্রেসিডেন্ট জয়দীপ মুখোপাধ্যায় নিজে এ বার নির্বাচনে না-দাঁড়ান! জয়দীপ-গোষ্ঠীর এক জন এ দিন বলেও দিলেন, “সাউথ ক্লাবের টেনিস ঐতিহ্য এমনিতেই চলে গেছে। যতটুকু আছে, সেটাও চলে যাবে যদি চতুর্বেদী নির্বাচনে জেতে!”
প্রেসিডেন্ট ছাড়া আর একমাত্র নির্বাচন হচ্ছে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে। যেখানে লড়াই বি এন ধ্রুপারের সঙ্গে প্রয়াত ডেভিসকাপার প্রেমজিৎ লালের ভাই অজিত লালের।
মূলত পিপার্নো আর অজিত-ই সাউথ ক্লাবের আসন্ন কমিটিতে আদ্যন্ত টেনিস প্লেয়ার, যাঁদের খেলাটার প্রশাসনে দেখা যেতে পারে। যদি জেতেন। নয়তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যেই নির্বাচিত সাউথ ক্লাবের পরবর্তী সচিব (রাহুল চৌধুরী), কোষাধ্যক্ষ (সতীনাথ বসু), সহ-সচিব ও ছয় জন কমিটি মেম্বারের মধ্যে জনা দু’য়েকের ক্লাব স্তরে প্রতিনিধিত্ব করার বাইরে বাকিদের টেনিস-ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়েই প্রশ্ন উঠলে হয়তো অবাক হওয়ার নেই!
বর্তমান কমিটি নিয়েও একই কথা প্রযোজ্য। এগারোর মধ্যে পিপার্নো (ভাইস প্রেসিডেন্ট) এবং অজিত লাল (কমিটি সদস্য), মাত্র দু’জন দরের টেনিস প্লেয়ার। আর বাকিদের মধ্যে একজন ক্লাব পর্যায় খেলেছেন। ব্যাস!
কেন টেনিস প্লেয়ারদের এত আকাল সাউথ ক্লাবের প্রশাসনে? যেখানে এককালে দিলীপ বসু, নরেশ কুমার, প্রেমজিৎ লাল, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, আখতার আলি-রা দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী টেনিস ক্লাব বছরের পর বছর চালিয়েছেন!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাউথ ক্লাবের এক প্রাক্তন আন্তর্জাতিক টেনিস প্লেয়ারের ব্যাখ্যা, আখতার বা সৌরভ পাঁজার মতো প্লেয়ার এই ক্লাবে বর্তমানে পেইড কোচ। ফলে ক্লাবের আইনে এঁরা সাউথ ক্লাবের প্রশাসনে আসতে পারেন না। আবার জিশান আলি, ফজলউদ্দিন, লিয়েন্ডার পেজের মতো সাউথ ক্লাবের বিখ্যাত প্রাক্তনীদের সময়ই নেই প্রশাসনে আসার। উপায় একটাই, সাউথ ক্লাবের সদস্য হতে গেলে তাঁর একটা ন্যূনতম টেনিস ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা আবশ্যক করে দেওয়া উচিত।
কারণ? সাউথ ক্লাব আসলে নিখাদ টেনিস ক্লাব।