৩ অগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের ক্যারিবিয়ান সফর। বর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পারফরম্যান্স দুর্বল। অন্য দিকে ভারত এখন বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে শক্তিধরদের অন্যতম। অনেকটাই পার্থক্য দুই দলের মধ্যে। শেষ চারটি ক্যারিবিয়ান সফরেও পাল্লা ভারী ভারতের। যদিও গত শতকে ছবিটা ছিল উল্টো। ফিরে দেখা তেমনই কিছু ঘটনা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ১৯৭১ সালের আগে ভারত মাত্র দুটো সিরিজ খেলেছে। এবং সেই দুটোতেই হেরে যায় ভারত। ১৯৬২ সালে পটৌডির ভারত পর্যুদস্ত হয় ফ্র্যাঙ্ক ওরেলের ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজের সব কটি ম্যাচেই হেরে যায় ভারত। ক্যারিবিয়ান ঝরে উড়ে যায় ভারতীয় ক্রিকেট।
১৯৭১ সালে অজিত ওয়ারেকরের ভারত পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় গ্যারি সোবার্সের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। সেটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতের প্রথম টেস্ট এবং সিরিজ জয়। ঐতিহাসিক সেই জয় আসে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। তার আগে পঁচিশ বার দুই দেশ মুখোমুখি হলেও ভারত জিততে পারেনি একবারও। সেবারেই প্রথম বার জয় আসে পোর্ট অব স্পেনে।
সেই জয়ের পিছনে উঠে আসছে অনেকগুলি নাম। ব্যাট হাতে দায়িত্ব নেন সুনীল গাওস্কর ও দিলীপ সরদেশাই। বল হাতে ভেল্কি দেখান স্পিনাররা। চতুর্থ দিনেই ম্যাচ জিতে নেন ভারতীয়রা। শেষ ইনিংসে দরকার ছিল ১২৪ রান, যা অনায়াসেই তুলে নেন গাওস্কররা।
২০০২ সালে ৩১ বছর পর কোনও ভারতীয় দল প্রথম বারের জন্য সিরিজ জেতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। তৎকালীন ভারত অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সেই জয় আসে একদিনের সিরিজে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতে ভারত। টেস্ট সিরিজে অবশ্য হারতে হয় ভারতকে। কার্ল হুপারের সেই ক্যারিবিয়ান দলই শেষ দল যারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে ভারতের বিরুদ্ধে।
২০১১ সালের ভারতীয় দল গুঁড়িয়ে দেয় ড্যারেন স্যামির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই জয় তুলে নেয় ভারত। টেস্ট দলের অধিনায়ক ছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। একদিন ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব করছিলেন সুরেশ রায়না। বুড়ো হারের ভেল্কি দেখিয়ে ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়।
তার আগের বার, অর্থাৎ ২০০৯ সালে, তিন ম্যাচের একদিনের সফরে ভারত জেতে ২-১ ম্যাচে। অধিনায়ক ধোনি সেই সিরিজে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতে নেন সিরিজ সেরার পুরস্কারও। তবে সেই পুরস্কার পেতে পারতেন যুবরাজ সিংও।
২০০৬ সালে দ্রাবিড়ের ভারত হারিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই সিরিজে একটি মাত্র টেস্টে ফলাফল হয়েছিল এবং সেটাতেই জয় তুলে নেয় ভারত। যদিও একদিনের সিরিজে ভারত হেরে যায় ৪-১ ব্যবধানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম বারের জন্য অধিনায়ক হিসেবে সফর করেন বিরাট ২০১৬-তে। এবং জয় পায় সে বারেই। ২-০ ব্যবধানে জয় পায় ভারত। হেরে যায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে।
এই শতকে যতই রমরমা হোক ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস, তার আগের ইতিহাস ঘাঁটলে কিন্তু বেড়িয়ে আসছে অন্য তথ্য। সেখানে দাপট ক্যারিবিয়ানরাই। ভারত এই পর্যন্ত ১১ বার টেস্ট খেলতে দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছে। যার মধ্যে ভারত সিরিজ জিতেছে মাত্র চার বার। এর মধ্যে আবার এই শতকেই তিন বার এসেছে জয়।
একদিনের ফর্ম্যাটে যদিও লড়াই প্রায় সমান সমান। সাতটি একদিনের সিরিজের মধ্যে ভারত জিতেছে চারটি সিরিজ। তবে ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দুদেশের প্রথম একদিনের সিরিজে বেঙ্গসরকারের ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করে ভিভ রিচার্ডসের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একদিনের সিরিজের পাঁচটি ম্যাচেই হারে ভারত।
শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বিরাট কোহালির ভারত একদিনের সিরিজে জয় তুলে নেয় সহজেই। কিন্তু একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে বারের একদিনের সিরিজে অসাধারণ ফর্মে ছিলেন অজিঙ্ক রাহানে। যদিও এ বারের একদিনের দলে তাঁকে রাখা হয়নি। সেই নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন সৌরভ।
দেখা যাক এবারের সিরিজে কি হয়। বিরাটের কাছে সুযোগ রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম বারের জন্য সব ফরম্যাটের ক্রিকেটে সিরিজ জয়ী অধিনায়ক হওয়ার। টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ৪৯ বার মুখোমুখি হয়েছে এই দুটি দল। তার মধ্যে ভারত জিতেছে সাত বার আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ বার।