জেন্টলম্যানস গেম। ক্রিকেটকে এই নামেই ডেকে থাকে বিশ্ব। সরকারি নথি বলছে, সেই ১৬৪৬ সাল থেকে শুরু। তারপর ক্রমাগত নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু জেন্টলম্যানস গেম হলেও, এই খেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক। বিশেষ করে বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের তেমনই কিছু বিতর্ক তুলে ধরা হল গ্যালারিতে।
৭ জুন, ১৯৭৫ সাল। ইংল্যান্ডের মুখোমুখি ভারত। ভারতের সামনে ৩৩৫ রানের কঠিন টার্গেট। দর্শকেরা ভেবেছিলেন মুহুর্মুহু ৪ আর ৬ ধেয়ে আসবে গ্যালারির দিকে। কিন্তু হল ঠিক উল্টো। টেস্ট ম্যাচের মতো ব্যাট করল ভারত। ৬০ ওভারে মাত্র ১৩২/৩ করল ভারত। ১৭৪টা বল খেলে সুনীল গাওস্কর করলেন মাত্র ৩৬ রান! প্রবল সমালোচিত হয়েছিল সেই ইনিংস।
১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সেমিফাইনাল খেলছে ভারত। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ভারতের সামনে টার্গেট ২৫২ রান। কিন্তু খেলতে নেমে মাত্র ১২০ রানেই ৮ উইকেট পড়ে যায় ভারতের। খেলাটা হচ্ছিল ইডেন গার্ডেন্স-এ। দলের খারাপ পারফরম্যান্সে উত্তেজিত হয়ে পড়েন দর্শক।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাঠের মধ্যে একটার পর একটা বোতল উড়ে আসতে শুরু করে গ্যালারি থেকে। আগুনও ধরিয়ে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল পুলিশের পক্ষে। শেষমেশ খেলা বাতিল করে শ্রীলঙ্কাকেই জয়ী ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড। বিশ্বকাপের অন্যতম লজ্জার অধ্যায় ছিল সে দিন।
ডোপ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ঘটনাটা ২০০৩-এর বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে। বিশ্বকাপের আগের দিনই এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু যে ওষুধ খেয়ে তিনি বিশ্বকাপ খেলতে পারলেন না, সেটা কিসের ওষুধ ছিল জানেন?
মডুরেটিক নামে ওষুধটি ওয়ার্নের মা তাঁকে দিয়েছিলেন। ওষুধের প্রভাবে তাঁর শরীরে এমন কিছু হয়নি, যা খেলায় প্রভাব ফেলবে। বরং এই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তাঁকে আকর্ষণীয় করে তুলতে। বিষয়টা সামনে আসার পরই ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির তুমুল নিন্দা হয়।
১৯৯৬-এর বিশ্বকাপ। সে বার নিরাপত্তার কথা ভেবে শ্রীলঙ্কায় খেলতে যেতে চায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়া। আইসিসি সম্পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া সত্ত্বেও তারা শ্রীলঙ্কায় যেতে রাজি হননি। ফল? বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।
পাকিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের গ্রুপ ম্যাচের পর দিনই জামাইকার হোটেল রুমে পাক কোচ বব উলমারের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ। আচমকা তাঁর এই মৃত্যু ক্রিকেট দুনিয়ায় সমালোচনা বয়ে নিয়ে এসেছিল।
২০০৭ সালে আরও একটি কারণে ক্রিকেট কলঙ্কিত হয়। সেই বিশ্বকাপে ব্রিজটাউনের কেনসিনটন ওভালে ফাইনাল চলছিল অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে। ব্রিজটাউনের ওই মাঠে ফ্লাডলাইট ছিল না। খারাপ আবহাওয়ায় মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার নেমে আসে ফাইনালের মাঠেও। ম্যাচ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এই রকম ম্যাচে কেন ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা নেই, তা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হয়।
২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ২৮ বছর পর ফের ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফি হাতে তুলে নেয় ভারত। কিন্তু এই ট্রফি আসল না নকল, তা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। অনেকের মতে, ম্যাচ শেষে যে ট্রফি হাতে নিয়ে ভারতীয় দলের ছবি দেখা যায়, সেটা নাকি নকল ট্রফি ছিল। শোনা যায়, সেমিফাইনালের পর কলম্বো থেকে ভারতে নিয়ে আসার সময়ই বিমানবন্দরে মুম্বইয়ের শুল্ক অফিসারেরা সেটা বাজেয়াপ্ত করেছিল।
২০০৭-এর বিশ্বকাপের আগে মদ্যপ অবস্থায় প্যাডেল বোট-এ সওয়ার হওয়ার জন্য একটা ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। জানা গিয়েছিল, তাঁর সঙ্গে অন্য সদস্যরাও ছিলেন। তিনি নাকি এতটাই মদ্যপ ছিলেন যে, প্যাডেল বোট থেকে জলে পড়েও গিয়েছিলেন।
২০১১ বিশ্বকাপে ভারত-ইংল্যান্ড খেলা চলছিল। ইয়ান বেলের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর আবেদন খারিজ করেন আম্পায়ার বিলি বাওডেন। ডিআরএসের আবেদনও মানা হয়নি উইকেট থেকে আড়াই মিটার দূরে বল প্যাডে লাগায়। তুমুল বিতর্ক হয় সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে। পরে আইসিসি সেই নিয়ম পাল্টে ফেলে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রবল বিতর্ক হয়।