ও’কিফে উচ্ছ্বাস নেই ওয়ার্নের।
ভারতকে প্রথম টেস্টেই যা ধাক্কা দিলেন স্টিভ ও’কিফ, তার পর বলাই যায়, এই মুহূর্তে তিনিই অস্ট্রেলিয়ার সেরা তারকা। তাঁকে নিয়েই এখন হইচই অস্ট্রেলীয় মিডিয়ায়। ছোট করে তাঁর একটা ডাকনামও দেওয়া হয়ে গিয়েছে তাদের— ‘সক’।
‘সক’ যদি হন নায়ক, তা হলে খলনায়ক অবশ্যই শেন ওয়ার্ন।
এই ও’কিফকেই তো তিনি প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম এগারোয় না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেই দিয়েছিলেন, ‘‘ওর দ্বারা স্পিন হবে না।’’ সেই ‘সক’ দুই ইনিংসে এক ডজন উইকেট নিয়ে ওয়ার্নকে রীতিমতো ‘শক’ দিয়ে গেলেন! ও’কিফ দুই ইনিংসেই ভারতীয় ব্যটিংয়ের বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার পরে অস্ট্রেলীয় মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ওয়ার্নকে এখন কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে।
কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় স্পিনার আরও অস্বস্তিতে পড়লেন টুইটারে প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক মাইকেল ভন তাঁকে এই নিয়ে রীতিমতো বিদ্রুপ করায়। ওয়ার্নকে তিনি চাঁচাছোলা ভাষায় বিদ্রুপ করেন, ‘‘প্রিয় শেন, তোমাকে অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক করে দিলে খুব ভাল হত। তা হলে আমরা পরের অ্যাসেজটাও জিততাম।’’
শনিবার পুণের এমসিএ স্টেডিয়ামের কমেন্ট্রি বক্সের বাইরে মুখোমুখি হয়ে প্রসঙ্গটা তুলতে ওয়ার্ন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘কালকের সাংবাদিক সম্মেলনে নিশ্চয়ই আপনিও ছিলেন। শোনেননি ও’কিফ কী বলেছে? ও স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে, ও এমন বোলিং করতে পারবে। আর দোষটা হচ্ছে আমার! শেন ওয়ার্নকে বিতর্কের মধ্যে টেনে হিঁচড়ে আনতে পারলে আপনারা আর কিছু চান না, তাই না?’’
এই ও’কিফ সম্পর্কেই আপনি বলেছিলেন, ‘‘ওর তেমন স্পিন করানোর ক্ষমতা নেই। টাইট বল করতে পারে শুধু। এই যা।’’ এখন সেই ও’কিফ সম্পর্কে কী বলছেন? ওয়ার্ন বললেন, ‘‘এই প্রথম নিজেকে ভুল প্রমাণিত হতে দেখে ভাল লাগছে। আমার কাছে ওর সম্পর্কে যতটুকু খবর ছিল, তার ভিত্তিতেই বলেছিলাম যে, ওকে প্রথম এগারোয় রাখার দরকার নেই। এখানেও ও যে ভযঙ্কর স্পিন করিয়েছে, তাও বলছি না। এখানে যেটা করেছে, সেটা হল ডেঞ্জার স্পটটা খুঁজে বার করে ফেলেছে। ওখানে বল ফেলছে আর বাকিটা করে দিচ্ছে উইকেট। এই রকম ঘূর্ণি পিচে এটাই তো স্পিনারদের সুবিধা। বলটা ঠিক জায়গায় ফেলো। বল ঘোরানোর দায়িত্ব পিচের।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাজার উইকেট শিকারি ওয়ার্নের আরও ব্যাখ্যা, ‘‘গতকাল শুরুর দিকে কিন্তু ও ভাল বল করতেও পারেনি। এটা মাথায় রাখবেন। দিক বদল করার পর ও উইকেটের কিছু স্পট খুঁজে বার করে। এই ব্যাপারে ওকে সাহায্য করে স্পিন কোচ শ্রীরাম। সেই স্পটগুলোকেই ও’কিফ কাজে লাগিয়ে নেয়। যা-ই করেছে ভাল করেছে। আবার বলছি, ওর জন্য আমি খুশি।’’
ও’কিফকে নিয়ে মাইকেল ভনের সঙ্গে তাঁর টুইট-যুদ্ধ নিয়ে ওয়ার্ন বলছেন, ‘‘ও আমার খুব ভাল বন্ধু। ও প্রায়ই আমার পিছনে লাগে এ ভাবে। এটা নিয়ে আমি বিব্রত নই। যখন দেখা হবে, চারটে কথা শুনিয়ে দেব। শোধবোধ হয়ে যাবে।’’
মাইকেল ভনের সঙ্গে ঝগড়াটা অবশ্য ওয়ার্নই শুরু করেন। টুইট করেন, ‘‘মাইকেল, তোমাদের টিম এখানে কত খারাপ খেলেছে, অস্ট্রেলিয়ার দাপট দেখে তা বুঝেছ নিশ্চয়ই?’’ তাতে ভন জবাব দেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া তোমার পরামর্শ মেনে ও’কিফকে না খেলালেই ভাল হত দেখছি।’’ তার পরের টুইট, ‘‘প্লিজ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, শেন ওয়ার্নকে নির্বাচক করুন। আমাদের পরের অ্যাসেজটা জেতার একমাত্র রাস্তা এটাই।’’
ভনের এই মন্তব্যের পরে ওয়ার্নকে বাধ্য হয়েই নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ও’কিফ শুধু ভারতীয় ব্যাটিংই নয়, শেন ওয়ার্নের মতো কিংবদন্তিকেও জোর ধাক্কা দিয়ে গেলেন।