ছোট ছেলেকে নিয়ে ব্রেবোর্নে।
হাত দু’টো ভাঁজ করে রেলিং ছুঁয়ে। চিবুকটা আলতো করে রাখা তার উপর। চোখের দৃষ্টির ব্যাখ্যা? থাক। দুঃখ, হতাশা, অবিশ্বাস ওখানে মিশে পথ হারিয়েছে।
মণীশ পাণ্ডে কভারে আউট। শাহরুখ খান ছোট্ট আবরামের বুকে মুখ লুকোচ্ছেন।
আন্দ্রে রাসেলের উঁচু শটটা চলে গেল ধবন কুলকার্নির হাতে। ক্যামেরা ধরল কিঙ্গ খানকে। মাথা নীচু। মুখটা দেখা গেল না।
ম্যাচের পর রাহুল দ্রাবিড়কে ধরল আইপিএল সঞ্চালক। মৃতের পৃথিবী থেকে বেঁচে ওঠা রাহুল বলছেন, ‘‘হ্যাটস অফ কেকেআর। কী খেলল!’’ বাদশা— তিনি তখন কোথায়? দৃষ্টিপথে কোথাও নেই!
এক মাস, এক মাস পর প্রিয় টিমের খেলা দেখতে এসেছিলেন শাহরুখ। সেটা ছিল ৮ এপ্রিল। আর আজ ১৬ মে, দীর্ঘ এক মাস পর আবার নাইটদের ‘চিয়ারলিডার ইন চিফ’ তাঁদের জন্য গলা ফাটাতে মাঠে হাজির। যে টিমকে তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে এসেছেন সেই মুম্বইকে হারিয়ে তাঁর টিম সদর্পে শুরু করছিল। তার পর কেকেআর পরপর জিতে প্লে অফ সম্ভাবনা তৈরি করে মুম্বই ঢুকেছে। রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে নেমেছে, কিন্তু ‘নির্বাসিত’ বাদশা ওয়াংখেড়েতে ঢুকতে পারেননি। যা ওয়াংখেড়ে তাঁকে দেয়নি, শনিবারের ব্রেবোর্ন দিয়েছিল। কিন্তু মুম্বই তো তাঁকে এ বারও স্বপ্নভঙ্গ ছাড়া কিছু দিল না।
বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন শুরু থেকে। কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন নিশ্চয়ই। ইডেনে বাদশা মানে পরের পর ‘ফ্লাইং কিস’। নিজেকে নিজেই ‘চিয়ারলিডার ইন চিফ’ বলে যাওয়া। ব্রেবোর্ন তাঁর অনাবেগী চেহারাটা দেখল। যিনি উচ্ছ্বাসের রাস্তা তো ধরলেনই না, ক্যামেরা ধরলে-টরলে একবারের জন্য হাতটাও নাড়ালেন না।
কেন এ ভাবে অ-বাদশাহি মেজাজে পুরো সময়টা থেকে গেলেন শাহরুখ, জানার উপায় নেই। রাসেল-ইউসুফ যখন ঝড় তুলছেন, শুষ্ক হাততালি। শেষ দিকে আশাবাদের প্রদীপে আগুন দিচ্ছেন উমেশ, সেই শূন্য দৃষ্টি। কে জানে, নিজের ডেরায় অন্য রাজ্যের টিমের পতাকা উড়তে দেখে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন কি না? গভীর রাতে বাদশার হাত থেকে গোটা চার-পাঁচ টুইট বেরোল। কেকেআর মালিক টিমকে বলে দিলেন, তোমরা প্রত্যেকে চ্যাম্পিয়নের মতো খেলেছ। কেকেআর মালিক বলে দিলেন, কখনও কখনও নিজের সেরাটা দিয়েও স্বপ্ন ছোঁয়া যায় না। কেকেআর মালিক কলকাতাকে কথা দিলেন, পরের বার আবার কেকেআর। অঙ্ক বা বৃষ্টির কঁধে চেপে প্লে অফে ওঠা যথেষ্ট ‘মর্দানি’ নয়।
কিন্তু টিম মালিকের এমন সস্নেহ হাত কতটা আশ্বস্ত করল তাঁর অধিনায়ককে?
গৌতম গম্ভীরকে দেখে মনে হল, আগামী কয়েকটা দিন বোধহয় এই স্বপ্নভঙ্গের প্রভাব থেকে বেরোতে পারবেন না। কেকেআর ক্যাপ্টেন জানতেন, তাঁর টিমের নিয়তি, টিমেরই হাতে। কেকেআর ক্যাপ্টেন সেটা স্বীকারও করে গেলেন। বললেন, ‘‘ভাগ্য আমাদের নিজেদের হাতে ছিল। কিন্তু সব আমরাই শেষ করে দিলাম।’’ একটু থেমে আবার বললেন, ‘‘আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের এই জায়গায় এনেছি। কয়েকটা জেতা ম্যাচ হেরে। তাই এটা এখন সহ্য করতে হবে। এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন হবে। উপায় নেই। সামনে এগোতে হলে, মানতেই হবে।’’
ঠিকই। চেন্নাইয়ে সিএসকের বিরুদ্ধে দু’রানে হারের আফশোস তো টিমে এখনও চলে। আজ থেকে বোধহয় আরও সেটা বাড়বে। সে দিনের মাত্র একশো পঁয়ত্রিশ না তোলার কেকেআর-ব্যর্থতা তো কোথাও না কোথাও ব্রেবোর্ন শোকগাথার পিছনে অন্যতম কারণ থেকে গেল।