‘বাংলার রঞ্জি বিদায়ে সিনিয়রদের ব্যর্থতাই দায়ী’

মঙ্গলবার দুপুরে টিভির সামনে বসে যা দেখলাম, তা অবিশ্বাস্য। সারা মরসুমে ওদের ভাল পারফরম্যান্সের পরে মাত্র একটা সেশনের ব্যর্থতায় এ ভাবে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যেতে হল বাংলাকে, এটা বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৩৪
Share:

সব মিলিয়ে এ বারের রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার পারফরম্যান্স খারাপ হয়নি। সেই জন্যই আশায় ছিলাম, আমাদের ছেলেরা এ বার নিশ্চয়ই ফাইনালে উঠবে। আমার কোচিংয়ে যা করে দেখাতে পারেনি বাংলা, সাইরাজ বাহুতুলের হাতে পড়ে নিশ্চয়ই তার চেয়ে ভাল কিছু করে দেখাবে। বিশেষ করে দলের তরুণরা যখন ভাল খেলছে, তখন ফাইনালে ওঠার যথেষ্ট কারণ তো ছিলই।

Advertisement

কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে টিভির সামনে বসে যা দেখলাম, তা অবিশ্বাস্য। সারা মরসুমে ওদের ভাল পারফরম্যান্সের পরে মাত্র একটা সেশনের ব্যর্থতায় এ ভাবে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যেতে হল বাংলাকে, এটা বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। মাত্র ২৪.৪ ওভারে ৮৬ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাটিং লাইন-আপ বাংলার নয়। আসলে খেলার মাঠে এমন দিন আসে, যখন যা কিছুই করা হোক, সবেতেই ব্যর্থ হতে হয়। মঙ্গলবার বাংলার তেমনই একটা দিন ছিল বোধহয়। কিন্তু গোটা দিনটাই বা খারাপ বলি কী করে? সকালে অত ভাল বোলিং করল মহম্মদ শামি। পাঁচটা উইকেট তুলে নিল। শামির এই দুর্দান্ত ফর্মকে কাজে না লাগিয়ে জলে ভাসিয়ে দিয়ে চলে এল আমাদের ব্যাটসম্যানরা!

অনেকেরই হয়তো মনে থাকবে, বিদর্ভের বিরুদ্ধেও এই পেসারদের তাণ্ডবের কাছেই হার মানতে হয়েছিল বাংলাকে। এ বার দিল্লির বিরুদ্ধে সেই পেস-আতঙ্কই ফের কাল হয়ে দাঁড়াল। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে এটুকু বলতে পারি যে নভোদীপ সাইনির বলে এমন কিছু আগুন ছিল না, যাতে এই ভাবে জ্বলেপুড়ে মরবে বাংলার ব্যাটসম্যানরা। শুধু আতঙ্কেই শেষ হয়ে গেল ছেলেগুলো।

Advertisement

আরও পড়ুন: কিংবদন্তিদের তালিকায় সেরা পাঁচের মধ্যে কোহালি, ধোনি

আতঙ্কে কাবু হতে পারে দলের তরুণরা, যাদের অভিজ্ঞতা কম, যাদের এমন চাপে খুব বেশি পড়তে হয়নি। কিন্তু সিনিয়ররা, যাদের প্রচুর অভিজ্ঞতা, যাদের চাপ সামলানোর ক্ষমতাও বেশি, তারা কেন এই দুঃসময়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে না? চাপের মুখে তারা কেন তরুণদের মতো একের পর এক উইকেট ছুড়ে দিয়ে চলে এল, বুঝলাম না।

পুণেয় তো শুরু থেকেই চাপে ছিল বাংলা। চাপটা নিজেদের দোষেই নেওয়া। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্তটা আমার ঠিক লাগেনি। দলে যখন শামি-ডিন্ডার মতো বোলার রয়েছে, সেখানে কেন টস জিতে ব্যাট করব? প্রথম ইনিংসে বাংলার যে হাল হয়েছিল, সেই হাল দিল্লির প্রথম ইনিংসে ব্যাট করলেও হত হয়তো। তা হলে বাংলারই হাতে চলে আসত ম্যাচের রাশ। পুণের উইকেটে যে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করাটা সহজ হবে না, তা আগে থেকে ভাবার মতো মাথা কি নেই বাংলা দলে?

অবাক হলাম আরও একটা জিনিস দেখে। চাপের মুখে সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের পরে ব্যাট করতে আসা। বিদর্ভ ম্যাচেও যা দেখেছি, দিল্লির বিরুদ্ধেও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদার, শ্রীবৎস গোস্বামীরা কেন চাপ সামলাতে আগে নামল না? মনোজেরও উচিত ছিল দায়িত্ব নিয়ে আগে ব্যাট করতে নামা। কিন্তু সেই সাহস দেখলাম না ওর মধ্যে। দলের সিনিয়রদের এই সব সময়ে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হয়। যা ওরা পারেনি।

কোচ বা তার সাপোর্ট স্টাফকে দোষ দেব না। আমার বিশ্বাস, সাইরাজ ও তার দল খারাপ কাজ করেনি। করলে অন্য ম্যাচগুলোতে ভাল ফল হত না। তার ওপর প্রায়ই ভিভিএস লক্ষ্মণের ক্লাস় নেওয়াটাও ওদের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু মাঠে নেমে তো খেলতে হয় সেই ক্রিকেটারদেরই। ওরা না পারলে এ রকমই ফল হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement