অত লাফিও না, মহম্মদ আলিকে তো দেখনি

সে ছিল টাইসনের যুগ। একের পর এক লড়াইয়ে তাঁর মুষ্টির সামনে অসহায় দেখাত প্রতিপক্ষকে। টাইসন জিতবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। প্রশ্ন ছিল কত ক্ষণে জিতবেন।, কত সেকেন্ড বা কত মিনিটের মধ্যে ধরাশায়ী হবে প্রতিপক্ষ।

Advertisement

রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ১৩:০০
Share:

সে ছিল টাইসনের যুগ। একের পর এক লড়াইয়ে তাঁর মুষ্টির সামনে অসহায় দেখাত প্রতিপক্ষকে। টাইসন জিতবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। প্রশ্ন ছিল কত ক্ষণে জিতবেন।, কত সেকেন্ড বা কত মিনিটের মধ্যে ধরাশায়ী হবে প্রতিপক্ষ। কিন্তু টাইসনকে নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখাতে গেলে কিছুটা তাচ্ছিল্যই জুটত গুরুজনদের কাছ থেকে। ‘অত লাফিও না, মহম্মদ আলিকে তো দেখনি!’- অবধারিত ভাবে এই বাক্যটি শুনতে হত। আর সেই বাক্যটির উৎস সন্ধানে গিয়েই উন্মোচিত হয়েছিল এক শিল্পীর ইতিহাস। মুষ্টিযুদ্ধকে শিল্প বলায় অনেকেরই আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু মহম্মদ আলি যে শিল্পী তা নিয়ে আপত্তি কম শুনেছি।

Advertisement

বক্সিং রিং-এ ‘প্রজাপতির মতো উড়তে মৌমাছির মতো হুল ফোটাচ্ছেন’ প্রতিপক্ষকে। শিল্পী না হলে কাউকে নিয়ে এমন লাইন সৃষ্টি হয়! প্রথমে খেলার ম্যাগাজিনে, পরে ভিডিওতে সে দৃশ্য মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না। কিন্তু তার থেকেও আশ্চর্য করত বক্সিং থেকে দূরে সরে গিয়েও তাঁর জনমনে গেঁথে থাকা। মুষ্টিযুদ্ধ থেকে অবসর নেওয়ার পর নানান সামাজিক বিষয়ে জড়িয়ে থেকেছেন। স্পষ্টবাদী মানুষটি। মতামত জানিয়ে বিতর্কে জড়াতেও ভয় পাননি। কখনও সেই মত পরস্পর বিরোধীও হয়েছে। কিন্তু আলি নির্বিকার।

১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে সোনা পেয়ে সবার চোখে পড়েন মহম্মদ আলি। তখন তিনি ক্ল্যাসিয়াল ক্লে। সেই মঞ্চেই তৎকালীন সোভিয়েত শাসকদের শুনিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রের গুণগান । আবার ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় সেনায় নাম লেখাননি।। প্রবল কমিউনিস্ট বিরোধী সময়েও শিরদাঁড়া সোজা রেখেছেন। সব পদক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তিন বছর বক্সিং রিং-এ নামতে পারেননি।। রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জেলেও যেতে পারতেন। কিন্তু আলি মাথা নোয়াননি। ‘আই অ্যাইন্ট গট, নাথিং এগেন্সট দেম ভিয়েংকঙ’, বলতে পিছিয়ে আসেননি।। মার্কিন রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কিউবা গিয়েছেন। একই ভাবে তাঁর ধর্মান্তর নিয়েও বিতর্কের ঝড় উঠেছে। গোঁড়া আমেরিকানরা শঙ্কিত হয়েছেন।। কিন্তু আলি অবিচল।

Advertisement

বক্সিং ছাড়ার পড়েও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। নানা সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ে মুখ খুলেছেন। নানা সামাজিক কাজে আলির উপস্থিতি অহরহ চোখে পড়েছে। সেখানে ২২ বছরের আলির ক্ষীপ্রতা নয়, তীক্ষ্ণ উক্তি নয়, মাধুর্য ফুটে উঠেছে। যেন শান্তির দূত। কী অনায়াসে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যেতেন। কোথাও গেলে মুহূর্তের মধ্যে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠতেন। চোখে ভাসে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়েও কাঁপা হাতে ১৯৯৬-এর আটলান্টা অলিম্পিকের মশাল তুলে ধরেছেন।। কাঁপা কাঁপা হাতে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে ছদ্ম বক্সিং-এ মাতছেন।।

কতই তো হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ান এসেছেন। কত বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু তিন বারের চ্যাম্পিয়ন মহম্মদ আলির মতো কার কথা মনে আছে। কার জন্যই বা নিয়মিত অনুষ্ঠানের সম্প্রচার বন্ধ করে দেবে বিবিসি। আন্তর্জাতিক থেকে দেশীয়— সংবাদের কেন্দ্রে চলে আসবেন। কার জন্যই বা মোবাইলের নোটিফেকশন একের পরে এক বার্তা ভরে উঠবে। আলি আজ ঘুমোলেন। যে ভাবে প্রজাপতি ঘুমিয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন...

চলে গেলেন ‘আই অ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement