সকালে প্র্যাকটিসে যাওয়ার আগে। লন্ডন থেকে নিজেই ছবি টুইট করলেন বিজেন্দ্র।
মাইক টাইসনের মতো মহাতারকাকে তুলেছে যে বক্সিং প্রোমোশন সংস্থা, তাদের সঙ্গে চুক্তি সই করে ফেললেন বিজেন্দ্র সিংহ।
ভারতীয় বক্সিংয়ের মহাতারকা যে জাতীয় জার্সিতে আর প্রতিযোগিতায় নামবেন না, সেই খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল আগেই। এ দিন লন্ডনে কুইন্সবেরি প্রোমোশনস-এর সঙ্গে চুক্তি সই করার পর পাকাপাকি পেশাদারি বক্সিংয়ে চলে গেলেন অলিম্পিকের মঞ্চ থেকে দেশকে বক্সিংয়ের ব্রোঞ্জ এনে দিয়ে ইতিহাস গড়া বিজেন্দ্র।
রিও অলিম্পিকের মাত্র এক বছর বাকি থাকতে মিডলওয়েট বক্সিংয়ে দেশের সবচেয়ে বড় পদক আশার এমন সিদ্ধান্তে বেশ হতবাক ভারতীয় ক্রীড়া মহল। বিজেন্দ্র নিজে অবশ্য এ দিন লন্ডনের সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন, বক্সিংয়ে দেশকে আরও সম্মান এনে দেওয়ার লক্ষ্যেই তাঁর এই পদক্ষেপ। বলেছেন, ‘‘পেশাদার বক্সিং জীবনের একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিল। তবে পেশাদার হিসাবেও আমার চেষ্টা থাকবে পারফরম্যান্স দিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করা। সেই লক্ষ্যে কঠোর অনুশীলনে নেমে পড়েছি।’’ রিও গেমসে তেরঙ্গা নিয়ে নামতে না পারার কোনও আফসোস নেই ভারতীয় বক্সিংয়ের পোস্টার বয়-এর। বরং বলছেন, ‘‘একদম ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিলাম।’’
ভারতীয় খেলার জগতের বহু মহাতারকা অবশ্য বিজেন্দ্রের ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’-এর মধ্যে চরম স্বার্থপরতা দেখতে পাচ্ছেন। এঁরা একমত, দেশ বনাম অর্থের লড়াইয়ে স্বর্ণপদক ফেলে স্বর্ণমূদ্রাকেই বেছে নিলেন বিজেন্দ্র। হকি তারকা, প্রাক্তন অলিম্পিয়ান বলজিৎ সিংহ সাইনি তো সরাসরি বলে দিলেন, ‘‘দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল বিজেন্দ্র।’’ অলিম্পিকের মঞ্চ থেকে দেশকে সম্মান এনে দেওয়ায় বিজেন্দ্রেরও আগে যিনি, জোড়া অলিম্পিক পদকের মালিক সেই সুশীল কুমারও হতবাক! খবরটা শুনে বললেন, ‘‘তাই নাকি! রিও অলিম্পিকে দেশের হাত থেকে তা হলে তো একটা পদক ফস্কে গেল। বিজেন্দ্র যা ভাল বুঝেছে করছে। তবে ওর এই সিদ্ধান্তে আমি হতাশ।’’ আরও তীব্র প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেরি কমের প্রতিক্রিয়া। অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ী বললেন, ‘‘কী বলছেন! ভাবতেই পারছি না রিওতে বিজেন্দ্র থাকবে না! দেশ ওকে এত কিছু দিল, আর এই সময়ে দেশকে ছেড়ে দিল! কাজটা মোটেই ভাল করেনি। পরে পস্তাতে হতে পারে।’’
অখিল কুমারের মতো তারকা বক্সারও মনে করছেন, বিজেন্দ্র তাড়াহুড়ো করলেন। বললেন, ‘‘বিজেন্দ্রর সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সময় ঠিক হয়নি। রিও অলিম্পিকের পর নিলে ভাল হত।’’
অলিম্পিক স্পোর্টসের বাইরে হরভজন সিংহ বা আই এম বিজয়নের মতো তারকারাও বলছেন, দেশ সবার আগে। টেস্টের পর এক দিনের দলেও প্রত্যাবর্তন ঘটানো হরভজন বলছিলেন, ‘‘অন্যের ব্যাপারে বলাটা ঠিক হবে না। তবে আমার কাছে দেশ সবার আগে।’’ আর বিজয়নের ক্ষুব্ধ জিজ্ঞাসা, ‘‘দেশ এত কিছু দেওয়ার পর রিও অলিম্পিকের এক বছর আগে এ রকম সিদ্ধান্ত ও নিল কী করে?’’ টেবল টেনিসের প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ইন্দু পুরি আবার মনে করছেন, বিজেন্দ্র ভুল করলেন। বললেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না! আমরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে মুখিয়ে থাকতাম। কী করে এই সিদ্ধান্ত নিল বিজেন্দ্র? বোকামি করল। পরে বুঝতে পারবে।’’
তবে সবচেয়ে আহত আর স্তম্ভিত সম্ভবত বক্সিংয়ের জাতীয় কোচ গুরবক্স সিংহ সাঁধু। টেলিফোনে বেশ অসহায় হয়েই বলছিলেন, ‘‘আমি ভীষণ অবাক! শকড! ভাবতেই পারিনি এমন করবে। এখন বুঝতে পারছি, ট্রেনিং করতে যাবে বলে আমায় মিথ্যে কথা বলে জাতীয় শিবির থেকে ছুটি নিয়েছিল বিজেন্দ্র। কোনও ছাত্রের কাছে আমি এ রকম আশা করিনি!’’ সঙ্গে এটাও বলছেন, বিজেন্দ্রের অভাব অলিম্পিকে টের পাওয়া যাবে। ‘‘ও টিমমেট হিসাবে অসাধারণ। অন্যদের সব সময় উৎসাহ দেয়, মনোবল বাড়ায়। অন্য বক্সাররা খবরটা কী ভাবে নেবে জানি না। ওর অভাব অবশ্যই টের পাব।’’
বিজেন্দ্র অবশ্য দাবি করেছেন, ট্রেনিং নিতেই লন্ডন গিয়েছিলেন। সেখানে ওয়ারেন ভাইদের নজরে পড়েন। তবে পেশাদার হতে বরাবরই চেয়েছিলেন। সাংবাদিক বৈঠকে বিজেন্দ্র বলেছেন, ‘‘ট্রেনিং করতেই লন্ডনে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে ট্রেনিংয়ের পদ্ধতি দেখে আর ট্রেনারদের সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হই। মনে হয় পেশাদার হয়ে যাওয়ার এটাই সেরা সময়। বাড়িতে ফোন করে বউ অর্চনার সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলি। ও উৎসাহ দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম।’’
নয়াদিল্লি থেকে সহ-প্রতিবেদন স্বপন সরকার