চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন কেরলের লাল-হলুদ তারকা
Sports news

এটিকের একই স্ট্র্যাটেজিতে সুবিধা হবে আমাদের

ঘরের মাঠে আইএসএল ফাইনালে কেরল ব্লাস্টার্সকে জেতাতে তিনি-ই অন্যতম বাজি স্টিভ কপেলের। তেত্রিশে পা দিলেও বয়স শব্দটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া সেই মিডফিল্ড জেনারেল মেহতাব হোসেন বলছেন, ‘‘দু’বছর আগে হাবাসের কলকাতাকে ফাইনালে হারাতে পারিনি।

Advertisement

তানিয়া রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০৭
Share:

ঘরের মাঠে আইএসএল ফাইনালে কেরল ব্লাস্টার্সকে জেতাতে তিনি-ই অন্যতম বাজি স্টিভ কপেলের।

Advertisement

তেত্রিশে পা দিলেও বয়স শব্দটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া সেই মিডফিল্ড জেনারেল মেহতাব হোসেন বলছেন, ‘‘দু’বছর আগে হাবাসের কলকাতাকে ফাইনালে হারাতে পারিনি। কিন্তু মলিনার কলকাতাকে পারব। কারণ ওদের কোচ যতই ফুটবলার বদলান, টিমকে খেলান একটাই স্ট্র্যাটেজিতে। যেটা হাবাস করতেন না। মলিনার এই ব্যাপারটা আমার মনে হচ্ছে, এ বার আমাদের টিমের কাছে বড় সুবিধে।’’

আইএসএল ওয়ান ফাইনালে এটিকের মুখোমুখি হয়েছিল কেরল। সে বারও সচিন তেন্ডুলকরের টিমে ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে মেহতাব। সেই ফাইনালে যাঁর গোলে হেরে গিয়েছিল কেরল, সচিন সেই মহম্মদ রফিক এ বার মেহতাবের টিমমেট। দিল্লি থেকে একসঙ্গে বিমানের টিকিট না পাওয়ায় দফায় দফায় শুক্রবার কোচি পৌঁছেছেন সন্দীপ নন্দী-মেহতাবরা। এসেই টিম হোটেলে বিশ্রাম নিতে প্র্যাকটিসে চলে যায় পুরো কেরল টিম। তার মাঝেই মেহতাব ফোনে চনমনে মেহতাব বললেন ‘‘প্রথম বার হেরেছিলাম। তবে প্রত্যেক বার ফাইনালে আমাদের টিমের একই পরিণতি হবে তা তো হয় না। মানছি, এটিকে ব্যালান্সড টিম। তবে এ-ও ভুললে চলবে না যে, পিছিয়ে নেই আমরাও। আমাদের সম্পদ টিমগেম। যেটা এটিকে টের পাবে রবিবার।’’

Advertisement

তেরো বছর বড় টিমে খেলা হয়ে গিয়েছে মেহতাবের। মাঝে চোট পেয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন আর পারবেন না মেহতাব। সেটা ভুল প্রমাণ করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন কেরলের বঙ্গসন্তান মিডিও। যার একটা অঙ্গ আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হতে মরিয়া হওয়া। ‘‘আমাদের টিমে হয়তো হিউম, পস্টিগার মতো বড় নাম নেই। কিন্তু মনের জোর, লড়াই করার জেদ আর জেতার খিদে রয়েছে আমাদের সবার। তার উপর কোচিতে ফাইনাল। পঞ্চাশ হাজার দর্শক গলা ফাটাবেন আমাদের জন্য। এখানে পৌঁছে আজ শুনলাম, ফাইনালের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে তিন দিন আগেই।’’

মেহতাব এমন এক ফুটবলার যিনি কলকাতা লিগ, আই লিগ, ফেড কাপ থেকে আইএসএল— যখন যে টুর্নামেন্ট খেলছেন সেখানেই টিমের কোচের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠছেন। ট্রেভর মর্গ্যান থেকে কপেল, কোনও বিদেশি কোচই তাঁকে বাদ দিতে পারেননি। মেহতাবের বয়সকে হারিয়ে দিচ্ছে তাঁর জেদ। ‘‘মুখে কিছু না বলে মাঠে পারফরম্যান্স করলে সব সমালোচনার জবাব দেওয়া হয়ে যায়,’’ বললেন তিনি। আর এ বার তো আটলেটিকো কলকাতাকে জবাব দেওয়ার পালা লাল-হলুদ তারকার! ২০১৪-র ফাইনালের বদলা তো বাকি রয়েছে? প্রশ্নটা শুনে অবশ্য ফোনেই হেসে মেহতাব বলেন, ‘‘অনেক লড়াই করে ফাইনালে উঠেছি। একটা সময় তো আমাদের কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। টুর্নামেন্টের সেরা টিম দিল্লিকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছি। এর পর আর খালি হাতে ফিরব না।’’ হাসলেও তাঁর কথায় আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ে!

এ বার আইএসএলে একটা সময় মেহতাবের কেরলের পারফরম্যান্স দেখে অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ ভেবে নিয়েছিলেন, গত মরসুমের মতো এ বারও লিগের বাধা টপকাতে পারবে না তারা। কিন্তু খরগোশ আর কচ্ছপের গল্প মনে করিয়ে দিয়ে সেই টিমই ফাইনালে। পাল্টে যাওয়ার রহস্য কী? সন্দীপ নন্দীর টিমের আর এক সিনিয়র মেহতাবের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথম দিকে টিমের মধ্যে বোঝাপড়া সে ভাবে তৈরি হয়নি। এখন সেই সমস্যা নেই। একতা হল আমাদের টিমের শক্তি। তারকা প্লেয়ার বলে কাউকে নিয়ে হইচই নেই। এটা আমাদের ড্রেসিংরুমের একটা বড় সুবিধে।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করলেন, ‘‘গত দু’বারের তুলনায় এ বারের টিমের মধ্যে একটা অদ্ভুত ইউনিটি গড়ে উঠেছে। ফুটবলারদের মধ্যে কোনও মন কষাকষি নেই। সবার লক্ষ্য আর তাগিদ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। যে মরিয়া ভাবটা আগের দু’বার ছিল না।’’

এটিকে প্রসঙ্গ উঠতে স্বাভাবিক ভাবেই মলিনা-হাবাস তুলনা চলে এল। প্রথম বার ফাইনালে হাবাসের স্ট্র্যাটেজির মুখোমুখি হতে হয়েছিল মেহতাবকে। এ বার তিনি আর এক স্প্যানিশ কোচ মলিনার স্ট্র্যাটেজির মুখোমুখি ফাইনালে। মেহতাব অবশ্য কোচ হিসেবে হাবাসকে এগিয়ে রাখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘হাবাস ওঁর স্ট্র্যাটেজি প্রতিপক্ষকে বিচার করে তৈরি করতেন। যে জন্য নানা স্ট্র্যাটেজিতে খেলতে দেখা যেত হাবাসের এটিকে-কে। মলিনা সেখানে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনেই আটকে থাকেন। সব ম্যাচ একই স্ট্র্যাটেজিতে খেলিয়ে চলেছেন কলকাতাকে। অনেক পরিবর্তন করে হয়তো চমকে দিচ্ছেন। কিন্তু খেলার ধরনটা তো সেই একই!’’

তাতেই তো এটিকে ফাইনালে উঠেছে! পাল্টা প্রশ্নে এ বার মেহতাব বললেন, ‘‘আসলে কলকাতা টিমটা এত ভাল যে ওরা ফাইনালে না উঠলেই বরং আমি অবাক হতাম। এটিকে সেমিফাইনালে একসঙ্গে ন’জন প্লেয়ার পাল্টে মাঠে নামা সত্ত্বেও মুম্বই গোল দিতে পারেনি। আর কলকাতার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট, ওরা একই টিম তিন বছর কার্যত ধরে রেখেছে। যে কারণে টিমের বোঝাপড়াও খুব ভাল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement